somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্য স্ট্রিট কিলার ( ১)

২১ শে মে, ২০০৮ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
বসুন্ধরা সিটির পার্কিং লটে এইমাত্র একটা দামী করোল্লা গাড়ি এসে থামলো। ধূসর রঙের। ড্যাশবোর্ডে মাথা রেখে বিশালদেহী ন্যাড়ামাথার কেউ একজন ঘুমাচ্ছেন। ড্রাইভার অল্পবয়স্ক কিন্তু মনে হয় নেশাগ্রস্ত। চোখ লাল এবং হাত অল্প কাঁপছে।

আমি বসে আছি সিমেন্ট ঘেরা একটা মানিপ্ল্যান্ট গাছের নিচে - ভুল বললাম। এটা মানিপ্ল্যান্ট গাছ না। মানিপ্ল্যান্ট গাছ এত মোটা হয় না। তবে গাছটার পাতাগুলো মানিপ্ল্যান্টের মতো। না কি এটা পান গাছ ? যাই হোক, আমার এসব নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। আমি কোনো বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ না যে আমাকে এই মুহূর্তে ফালতু একটা গাছজাতীয় জিনিসের পেছনে টাইম লস করতে হবে। আমি মানুষকেই তোয়াক্কা করি না, গাছ তো অনেক দূরের কথা !

দুইজন লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ভদ্রলোক বলা উচিত। তবে রুচিতে বাঁধছে। আমি নিকৃষ্ট মানুষ হলেও রুচি অতি উৎকৃষ্ট। তার মানে এই না যে, আমার প্রিয় খাবার শাহী খিচুড়ি। মানুষ খারাপ হলেও কিছু সদগুণ থাকে। আমিও সেরকম টাইপ।

যে দুইজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে তারাই দামি করোল্লা গাড়িটার মধ্যে বসে ছিলো। একজন ষন্ডা-গন্ডা টাইপের আরেকজন ভাবুক প্রকৃতির নেশাখোর। খুব ভালো করে দেখলে ষন্ডা-গন্ডা বদমাশটার খোলা হাফ সার্টের ভেতরে কালো রঙের একটা বস্তু দেখা যায়। সেই মহার্ঘ্য বস্তুই হলো 'পিস্তল'। বাঁট দেখে মনে হচ্ছে চায়নিজ রিভলবার। ফাউল জিনিস। ব্যাটা তোমার চেয়ে হাজারগুণ দামী জিনিস আমার পেছনে কোমরের সাথে গোঁজা ! নাম হলো - Colt King Kobra Revolver.

লোক দুইজন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি উঠে বসলাম না এবং কদমবুসি করবার জন্যও এগিয়ে গেলাম না। কদমবুসি করা এমনিতেই উচিত না তারমধ্যে এই ব্যাটা তো শয়তানের বাচ্চা ! এর মা-বাপ নাই কোনো ( আমারও নাই। দশ বছর বয়সে মা মারা যান। বাবাকে ফার্মগেটের সন্ত্রাসী 'হালুয়া হাফিজ' প্রকাশ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে)।
ষন্ডা গন্ডা হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালো আমার দিকে। গম্ভীর স্বরে বললো - আমি পুরান ঢাকার ঠান্ডু মহারাজা। আমারে সবাই 'ঠান্ডুদা' নামেই চিনে। আর এ হইলো - পুরান ঢাকার হিরুইনচি সম্রাট হাবা হাসমত।' বলেই সে আঙুল দিয়ে পাশের জনকে ইশারা করলো।

এবার আমার পালা। আমি উঠে দাঁড়ালাম। পকেট থেকে একটা মার্লবোরো সিগারেট আর লাইটার বের করলাম। সিগারেট ধরাতে ধরাতে ওদের দিকে না-তাকিয়ে বললাম - আমি হাতভাঙা রুদ্র।

ঠান্ডু মহারাজা এবং হাবা হাসমতের চোখে ভয়ের ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠল। হওয়ারই কথা - কয়েকদিন আগে আমি পুরান ঢাকায় একটা মার্ডার করেছি। এক মাদক ব্যবসায়ীকে নিজ হাতে খুন করেছি। অবশ্য খুনটা করার কারণও ছিলো। ব্যাটা নিরীহ বস্তির মানুষ জনদের দিয়ে সস্তায় ফেনসিডিল, গাঁজা, বাংলা পচা মদ - এই সব ব্যবসা করাতো। এতে করে একদিকে ফেনসিডিল ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো কারণ - ঐ ব্যাটা খুব সস্তায় ফেনসিডিল বিক্রি করতো তাও পানি মিশিয়ে ! ৫০০ টাকার ফেনসিডিল পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করতো নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কাছে। তাকে খুন না করে উপায় ছিলো না।

ঠান্ডু মহারাজা পাতলা স্ট্রাইপের সার্ট গায়ে দিয়েছেন। এই গরমে এ ধরণের সার্টে আরাম পাওয়া যায়। গলায় খাঁটি সোনার চেইন ঝুলছে। ডান হাতে ব্রেসলেট। ঠান্ডু অতি ঠান্ডা কন্ঠে বললো- রুদ্র ভাই ! মাফ করবেন... চিনতে ভুল করছি। আমাদের পুরান ঢাকার হুন্ডি মারুফ সাহেব পাঠিয়েছেন...
আমি হালকা স্বরে বললাম - সেইটা আমি জানি বলেই আধাঘন্টা ধরে রোদের মধ্যে ছিলাম। গাড়ি বের করো... গাড়িতে এসি আছে নাকি নাই ?

ঠান্ডু মহারাজা উত্তর দেবার আগেই হাবা হাসমত বললো-হ ! সবই আছে... ডিভিডি ফ্লেয়ার, টিবি, ভিডিয়ু - সব আছে...

আমি বললাম - ওকে। গাড়ি বের করো।

২.

গাড়িটা যথেষ্ট আরামদায়ক। ভেতরে ঠান্ডা এয়ারকুলার, সিনেমা দেখার সিস্টেম, গান শোনা - সবই আছে। হাবা হাসমত স্বীকার করেছে যে, সে এখন হিরোইনের নেশায় আছে। তবে গাড়ি চালাতে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সে নাকি আট বোতল ফেনসিডিল খেয়েও না ঘুমিয়ে থাকতে পারে। আমি তাকে বলেছি, নেশার পরিমাণ কমাতে। যদি বাঁচতে চায়। আর না হলে কাজটা আমিই করে দেব... এতে করে সে ভয় পেয়ে কোনো কথা বলছে না।
ঠান্ডু মহারাজা বললো- ভাইসাব ! আফনে তাইলে সবই জানেন ?
আমি বললাম- হু। ঠান্ডু, তুমি কি অত্যাধিক গরমের জন্য মাথা ন্যাড়া করেছো ?
ঠান্ডু মহারাজা বললো - জ্বি জ্বি ভাইসাব।
তুমি স্বর্ণের চেইন পরেছো ক্যানো? এইটা জানো না যে, পুরুষ মানুষের স্বর্ণের চেইন পরা নিষেধ ?
জ্বি তয় জানি। আসলে হুন্ডি মারুফ আমাকে এটা গিফড করেছেন...
ও আচ্ছা। বুঝেছি। এখন তাহলে আমরা কাঁটাবন যাচ্ছি ?
জ্বি জ্বি ভাইসাব।
তোমার কোমরে জিনিসটার কোয়ালিটি কেমন ?
জ্বি এইডা চায়নিজ মাল। মাঝে মাঝে জাম হইয়া যায় !
আউল-ফাউল মাল নিয়ে ঘোরা-ফেরা করবে না। রিস্ক বেশি। দেখা গেল- গুলি জাম হয়ে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে !
জ্বি তয় ঠিকই বলেছেন।
আসল কাজটা আমিই করবো। তুমি সাইডম্যান হিসাবে থাকবা। তাছাড়া তোমার ন্যাড়া মাথা আর সাজগোজ ভয় পাওয়ার মতো।
কি যে কন ভাইসাব ! আফনে থাকতে আমার আবার অত কী ?
বেশি শ্রদ্ধাভরে কথা বলবে না। আমি শ্রদ্ধা জিনিসটা পছন্দ করি না।
ঠিক আছে ভাইসাব। ছরি !

গাড়ি কাঁটাবনে এসে থেমেছে। এখন ভরদুপুর। আড়াইটা বাজে। চারদিকে লোকজন। এর মাঝে কালো পোশাক পরা কিছু মানুষ দেখতে পাচ্ছি। RAB এখানে কি করছে ?
আমি ঠান্ডু মহারাজাকে বললাম - ঠান্ডু ! তুমি 'আফলাতুন ডগহাউস' এর সামনে দিয়ে হেঁটে আসো। ভয় নাই। RAB আমাদের চিনে না। যদি চিনতে পারে, ধরতে পারবে না। আর যদি ধরার চেষ্টা করে, গুলি খাবে। যেমন-তেমন গুলি না, সেইরকম গুলি ! তুমি দ্যাখো, মির্জা আজিজ্যা তার দোকানে আছেন কি-না। দেখামাত্রই হাত উঁচিয়ে সিগনাল দিবে।

ঠান্ডু বিনীত সুরে বললো - জ্বি আইচ্ছা ভাইসাব !

ঠান
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:৩২
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×