somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর আর্কাইভস........!!!

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট পাসপোর্ট সাইজ ছবিতে যে ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে... মেয়েটি মারা গেছে। মেয়েটি মারা গেছে আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে। পানিতে ডুবে।

২০০২ সালে ১৭ জুলাই বিকেল বেলা স্কুল থেকে ফেরার সময় মাত্র'ই চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া এই মেয়েটি তিনজন বখাটের ধাওয়া খেয়ে ভয়ে পালাতে গিয়ে পুকুরে পরে ঢুবে মারা যায়... ঈশ্বর তার ভাগ্যে পানিতে ঢুবে মৃত্যু লিখে রেখেছিলেন, যেটা তিনজন পিশাচের হাতে ধর্ষিত হয়ে মরার চেয়ে নিঃসন্দেহে ভাল ছিলো।

এই তিনজনের'ই মৃত্যুদন্ড হয়েছিলো.... পরে আমাদের দেশের আদালত সেই মৃত্যুদন্ড খারিজ করে মাত্র ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয় আসামীদের।

২০০১ সালে ঢাকার খিলগাঁওয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে সিমি.... বখাটেদের উৎপাত সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা। দরিদ্র ঘরের মেয়ে সিমি বিয়ে বাড়িতে আলপনা এঁকে পড়াশোনার খরচ চালাতো... মাঝেমাঝে কাজ শেষ করে ফিরতে রাত হয়ে যেতো। আর প্রতিদিন ঘরে ফেরার পথেই চলতো অসহনীয় যন্ত্রণা।

মারা যাবার আগে সিমি চিরকুটে লিখে রেখেছিলো ছয় বখাটের নাম... তার মধ্যে একজন খিলগাঁও থানার দারোগা বাশার... সিমির বাবা এদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় পাঁচ জনের মাত্র একবছর করে সাজা হয়... একজনকে বেকসুর খালাসও দেওয়া হয়।
সিমির বাবা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন... সেই আপিলের শুনানি হয় ঠিক দশ বছর পর। এই দীর্ঘ দশ বছরে সিমির পরিবারকে ৬০ টি জি.ডি করতে হয়েছে... আসামীরা তাঁদের হুমকী দেয়, মামলা ডিসমিস না করলে বাড়িতে আগুন দেয়া হবে। পুলিশের কাছে এই খবর জানানো হলে পুলিশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রহসনমূলক জবাবে বলেছিলো, "আপনারা আগে আগুন নেভান... এরপর ট্রাকভর্তি পুলিশ আসবে।"

২০০৩ সালের পহেলা বৈশাখে বখাটেদের সীমাহীন লাঞ্চনা আর অপমান সহ্য করতে না পেরে সিলিং ফ্যানে ওড়না ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে ফারজানা আফরিন রুমি।

২০০২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী বখাটেদের হাতে ধর্ষিত হবার পর পুরো সমাজ মুখ ফিরিয়ে নেয় মহিমার উপর থেকে... তাকে ঘোষণা করা হয় ভ্রষ্টা হিসেবে। এক ঘরে করা হয় মহিমাকে... মহিমা আর দেরী করে নি। আত্মহত্যা করে বিদায় দিয়েছিলো এই পৃথিবীকে।

২০০২ সালের ১৯ মার্চ স্কুলে যাবার সময় একদল বখাটে কিশোরী সেলিনা আক্তারকে তুলে নিয়ে গিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে.... সেলিনাও করেছিলো আত্মহত্যা।

পূর্ণিমা শীলকে নিয়ে আমি সম্পূর্ণ একটা লেখা লিখেছি আগে.... সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমাকে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ের পর হিন্দু হওয়ায় এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অপরাধে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা গণ ধর্ষণ করে। নবম শ্রেণীতে পড়া পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করতে এসেছিলো ১০-১২ জনের একটি দল... এতোটুকুন মেয়েটা এতোজনের অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না দেখে পূর্ণিমার মা কান্না করতে করতে বলেছিলেন, "বাবা'রা আমার মেয়েটা ছোট... মরে যাবে। তোমরা একজন একজন করে আসো।"

আওয়ামী লীগ সরকার এরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় এলো... বিচার হয় নি পূর্ণিমার ধর্ষণকারীদের... হবেও না।

পুলিশ ভ্যানে পুলিশের হাতে ধর্ষিত হওয়া ইয়াসমিনের কথা আমাদের অজানা নয়... ইয়াসমিন হত্যার বিচার চাইতে আসা মানুষের উপর গুলি চালিয়েছিলো বাংলাদেশ পুলিশ.... দলছুট ব্যান্ডের গাওয়া "আহ ইয়াসমিন...!" গানটা শুনেছে কি কেউ...??

আমরা যাদের পেপার পত্রিকা পড়া হতো, তাঁদের পেপারের কোণায় অবশ্য'ই একটি খবর কোন না কোন সময় চোখে পড়ার কথা... 'শাজনীন মামলা'। ট্রান্সকম গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাজনীন।
১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল বাড়ির ঠিকাদার ও তার তিন বন্ধু মিলে শাজনীনকে ধর্ষণ করে হত্যা করে... শাজনীনকে মোট ২০ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিলো... ঘাড়ে বাটালী দিয়ে আঘাত করে করে ফেলা হয়েছিলো ৩ ইঞ্চি গর্ত। স্কলাসটিকা স্কুলের নবম শ্রেণীর মেয়ে ছিলো শাজনীন... বয়স মাত্র ১৫ বছর। আসামীদের মৃত্যুদন্ডাদেশ হলেও কার্যকর হয় নি আজও।

যারা প্রথম আলো রাখেন, তারা দেখবেন... এখনো প্রতিবছর শাজনীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া চেয়ে মিলাদের সময়সূচি জানানো হয়.... কতোটা দুঃখ, কতোটা অসহায়তা মিশ্রিত কষ্ট থাকে সেই বিজ্ঞপ্তিতে... যারা পড়েন, তারা হয়তো বুঝেন।

এই সময়গুলোতে ফেসবুক ছিলো না... সহজলভ্য ছিলো না ডিশ টিভি কানেকশন। আজকে যার ঘরে টিভি নেই বা পত্রিকা যায় না... তার ঘরেও আছে মোবাইল ইন্টারনেট। এখন খবর আটকে থাকে না.. বিচার আগেও হয় নি... এখনও হবে না। বিচার কেড়ে নিতে হবে।

তনু'র হত্যার বিচার যদি না হয়, তৃষা, সিমি, রুমি, সেলিনা, মহিমা, শাজনীনরা ২০ কোটি বাঙালীকে অভিশাপ দিবে.... যে অভিশাপ শোনা যায় না... কিন্তু অভিশাপের পরিণাম বাঙালীকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে আরো সহস্র তনু'কে ধর্ষিত হয়ে... খুন হয়ে।





সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×