পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনে টাকা ছাড়ে অনুমোদন দেয়নি। একই অভিযোগে জাইকাও তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। সেই প্রেক্ষিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই সরকার আবুল হোসেনকে পরিবর্তন করে ডায়নামিক নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের কাছে শুধু এইটুকু যথেষ্ট মনে হয়নি। হাস্যকর কথা বলল বাংলাদেশ সরকার, তারা নাকি আবুলের বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতি পায়নি। যাইহোক পরবর্তীতে ডায়নামিক যোগাযোগ মন্ত্রী উচ্চবিলাসী মনোভাব নিয়ে বিশ্বব্যাংকে পাশ কাটিয়ে চড়া সুদে মালয়েশিয়া থেকে সাহায্য নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন যা বাংলাদেশের আত্নঘাতী ছাড়া আর কিছুই না। ফলাফল হলো যা আমরা সহজেই (সহজ শর্তে ও খুবই অল্প সুদে) করতে পারতাম সরকারের একরুখা নীতির কারণে তা করছি অনেক চড়া মূল্যে। সরকার তাতেই খুশী কারণ তারা শুরু করতে পারছে কিন্তু জনগনের যে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সেই ভাবনা সরকারের নেই।
এবার আসি মেট্রোরেল প্রকল্পে:
রাজধানীর যানজট কমাতে গত বছর সেপ্টেম্বরে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় এবং জাইকাকে এ প্রকল্পে অর্থায়নের অনুরোধ জানায় সরকার। মেট্রোরেলের পথ প্রথমে বিজয় সরণির দিক দিয়ে ঠিক করা হলেও বিমানবাহিনীর আপত্তি করে এবং সতর্ক করে দেয় তাদের ফ্লাইং জোনের মধ্যে এই ধরনের স্থাপনা করতে দেওয়া হবে না। যদিও বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত পোষন করেছিল। কিন্তু সরকার আর্মিদের থ্রেডের কারণে অন্য কোন কিছু না ভেবে মেট্রোরেলের পথ বিজয় সরণির বদলে সংসদ ভবনের পাশ ঘেঁষে ঠিক করে। যদিও তা নিয়ে পত্রিকায়, টিভিতে নেটে অনেক লেখালেখি হয়েছে। সংসদ ভবনের পাশ ঘেঁষে মেট্রোরেল হলে কি কি সমস্য হতে পারে তা বিষদ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সরকার বিমানবাহিনীকে বুঝানোর আর কোন চেষ্টা না করে তাদের সিদ্ধান্তই মেনে নেয়। কিন্ত এই পথ পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে জাপান সরকার তথা জাইকা খুশি হতে পারেনি।
মেট্রোরেল তৈরির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ১৮০ কোটি ডলার ঋণ হিসেবে দেবে জাইকা। জাইকার ঋণে সুদের হার হবে মাত্র ০.০০১% এবং তা ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে অতিরিক্ত সময় থাকবে ১০ বছর। (পদ্মাসেতু প্রকল্পে মারয়েশিয়ার ঋণের সাথে, সুদের হারের সাথে ও গ্রেস পিরিয়ডের সাথে একটু তুলনা করে দেখুন)
তখন থেকেই শুনে আসছিলাম মেট্রোরেল পথ ঠিক করাসহ যাবতীয় ফরমালিটিস এপ্রিলের আগে শেষ করে জাইকার কাছে জমা দিতে হবে। কারণ জাপানে অর্থবছর শুরু হয় এপ্রিলে। কিন্তু সরকার এখানে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে এপ্রিলের আগে তেমন কিছুই করতে পারেনি। ফলে জাইকার অর্থবছরের এবারকার বৈঠকে (গত ১৮ এপ্রিল) আমাদের মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়নি। আগামী ২৮ এপ্রিল জাইকার সাথে আবারো বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে কিছু না হলে এটি আগামী অর্থবছর পর্যন্ত পিছিয়ে যাবে। ফলে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে সরকার মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরুর যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তার বাস্তবায়ন হবে না।
আগামী মাসের ৩ তারিখ জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা ঢাকা সফর করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে মেট্রোরেলের প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হবে। যদি এই আলোচনা থেকে পজেটিভ কিছু বেরিয়ে আসে তবে হয়ত কিছু আশা করা যাবে।
পরিশেষে বলতে চাই এক আবুলের দুর্নীতির করনে পদ্মাসেতু প্রকল্পের এই পরিনতি হয়েছে এখন যদি বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রীর অবহেলা ও সরকারের আর্মিপ্রীতির (আর্মিভীতি) কারনে এই প্রকল্পেরও একই অবস্থা হয় তবে দাতারা আমাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। পরবর্তীতে বাংলাদেশকে বড় কোন প্রকল্পে তারা সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দিবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৮:৩২