এই মূহুর্তে বসে আছি আমাদের ঘরের সামনের পাকা বেঞ্চিতে। বিদ্যুৎ নেই, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সামনের বারান্দায় বসে কথা বলছেন শ্রদ্ধেয় বাবা আর পাশের বেঞ্চিতে বসে আশেপাশের বাড়ীঘর সহ বহুদিনের জমানো খোঁজখবর মাঝেমাঝে বলে যাচ্ছেন মমতাময়ী মা। শুনে যাচ্ছি তাদের কথা, মাঝে মাঝে সাড়া দিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ কখন আসবে ঠিক নেই তাই বাহিরের অন্ধকারটাকে আরো মোহনীয় করে রাখার জন্য অন্ধকারের গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করলাম। তাদের সাথে কথার ফাঁকে কী বোর্ডে টাইপ করে যাচ্ছি কথাগুলো।
তোমার সাথে কথা বলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি তখন তোমার ফ্রেন্ডের বাসায় গল্পে মেতে আছো।মেতে আছো বললে হয়তো ভুল হবে, ফ্রে্ন্ডদের অনুরোধে হয়তো যেতে বাধ্য হয়েছো। তাদের সাথে কথার ফাঁকে আমাকে সময় দেয়া কঠিন , কতকটা বিব্রতকরও তোমার জন্য হয়তো। তাইতো আমি আর তোমার সাথে কথা বাড়ালাম না, কিছু মনেও করলাম না। তোমাকে সুযোগ করে দিলাম গল্পে মেতে থাকার।
বিদ্যুৎ নেই বলেই বাহিরের বেঞ্চিতে এসে বসলাম। ছোটবেলায় অনেক দিন কাটিয়েছি এরকম। শহুরে পরিবেশে এ অনুভুতি পাওয়া সম্ভব নয়। প্রায় দেড় বছর পরে বাড়ীতে এসে এ অনুভুতির মাঝে প্রবেশের জন্যই অন্ধকারে এসে বসা। অন্ধকার পরিবেশটা বেশ উপভোগ্য লাগছে। সামনের ছোট ফাঁকা যায়গায় গাছগাছালিতে ভরপুর, এক পাশ দিয়ে নিজেদের চলার জন্য ছোট রাস্তা। গাছ-গাছালির ফাঁক গলিয়ে চাঁদের আলো আসার সুযোগ পাচ্ছেনা। আশে পাশে অসংখ্য অচেনা পোঁকারা একটানা শব্দ করে যাচ্ছে। বিরামহীন আওয়াজে ডেকে যাওয়ায় নেই তাদের কোন ক্লান্তি, নেই কোন সমাপ্তি। বাসা থেকে খানিকটা দূরে মেইন রোড দিয়ে মাঝে মাঝেই শব্দ করে চলে যাচ্ছে যন্ত্রচালিত ছোট বড় যানবাহনগুলো।
দুরের হিন্দু বাড়ী থেকে একটানা ঢোলের শব্দ ভেসে আসছে সেই সন্ধ্যা থেকে। কখন তা বন্ধ হবে জানা নেই। মা বলছিলেন, ওদের কি হাত ব্যথা করেনা? অন্ধকারে এসে স্ক্রীনে এসে মাঝে মাঝেই বসছে আলোর সন্ধানী পোঁকা-মাকড়েরা।বাবা সোফায় বসে রেষ্ট নিচ্ছেন আর মা টুকটাক কাজে ব্যস্ত আমি একাকিত্বের আরো গভীরে প্রবেশে মত্ত। একভাবে বসে থেকে পা ঝিন ধরে গিয়েছে, বসে থাকা কঠিন তবুও লিখে যাচ্ছি শুধু তোমার অভাবে আমার একাকিত্ব ঘুচানোর জন্য।
আকাশের দিকে চোখ যেতেই তোমার চেহারাটি আবার ভেসে উঠলো মনের জানালায়। গাছের ফাঁক গলিয়ে পূর্নিমার চাঁদ কিঞ্চিত এসে ধরা দিলো আমার কাছে। কাল যখন একসাথে লঞ্চের বারান্দায় তোমার দিকে একবার তাকাচ্ছিলাম আর আরেকবার ঐ চাঁদের দিকে তাকাচ্ছিলাম তখন ঠিক করতে পারছিলাম না আসলে কোনটা বেশী সুন্দর………??? মাঝে মাঝে ঐ চাঁদ দেখছিলাম কিন্তু ঐ চাঁদ দেখা বাদ দিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতেই যেন ভাল লাগছিলো।চাঁদের আলোয় তোমার মায়াবী মুখটিতে খেলা করছিলো ভিন্ন এক আবেক, অসাধারণ মমতা। অবশেষে সমাধানে পৌছলাম এভাবে…. চাঁদ ও তুমি দু‘জনই জনের সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমন্ডিত। আবারও তার কথা প্রমানিত হলো যিনি বলেছেন এভাবে……………
‘‘কবিতা, চাঁদের আলো আর প্রিয়ার মুখ কখনো পুরাতন হয় না।‘’
তাইতো তোমাকে যতই দেখি ততোই ভালো লাগে, তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, আরো বেশী ভালবাসতে ইচ্ছে করে।
এই ক্ষনটায় খুব ফিল করছি তোমাকে, তোমার শূণ্যতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তুমি পাশে থাকলে হয়তো তোমার হাতে একটু বাতাস করে দিতে, হয়তো তুমি তোমার শরীরের উষ্ঞতা বিলিয়ে যেতে আমাকে, মাঝে মাঝে এ উষ্ঞতা গ্রহনে বাধাও দিতে। আমি হয়তো তোমার সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিতাম এ অন্ধকার মূহুর্তটিকে। তুমি হয়তো এ অন্ধকারে কিঞ্চিত ভীত হয়ে আমার আরো কাছে এগিয়ে আসতে, আমিও তোমাকে তোমার সাথে মিশে গিয়ে সাহস যোগাতাম। আমি তোমার হাতের বাতাস খেতে খেতে হয়তো গান ধরতাম……….‘‘ তোমার হাত পাখার বাতাসে , প্রাণ জুড়িয়ে আসে……………’’। হয়তো আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে অন্ধকারের আরো গভীরে ডুবে যেতাম, ঝিরিঝিরি বাতাসে তোমার চুলগুলো আমার মুখমন্ডলে জড়িয়ে যেতে, হয়তো তোমার চুলের ঘ্রানে আমার নাকটি ডুবিয়ে দিতাম তোমার চুলে। তোমার হাতের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে মেতে উঠতাম আমাদের শেষ না হওয়া গল্পের মাঝে।
কল্পনা করে যাচ্ছি, ভেবে যাচ্ছি, অনুভব যাচ্ছি, অনূভুতিতে আঘাত করে যাচ্ছি, সবই তো ঠিক আছে কিন্তু এ কল্পনা, এ ভাবনা, এ অনুভবের কোথায় গন্তব্য জানিনা আমি? কোথায় গিয়ে দাড়ি টানতে হবে তাও বলা মুশকিল। তুমি হয়তো তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে গল্পের ফাঁকে এসব ভাবার সময় পাচ্ছোনা কিন্তু একাকিত্বের মাঝে ভাবছি বসে কোথায় গিয়ে এ ভাবনারা মিলিত হবে? কোথায় গিয়ে এ ভাবনারা পরিপূর্নতা পাবে। কোথায় গিয়ে এসব ভাবনারা বাস্তবে ধরা দিবে?
হ্যাঁ, এসব কল্পনার সবই যে ফিকে হয়ে গিয়েছে তা কিন্তু নয়। অনেক স্বপ্নরা ধরা দিয়েছে, অনেক হয়তো ধরা দিবে, অনেক কল্পনারা হয়তো কখনো ধরা দিবেনা। যেসব স্বপ্নরা, কল্পনারা ধরা দিয়েছে তাদের জন্য জন্য এ হৃদয় প্রীত, সেসব স্বপ্নদের কারণেই এ আত্মা বেঁচে আছে। আর যেসব স্বপ্ন , কল্পনারা ধরা দিবেনা তাদের জন্য নেই কোন তারাহুরা, নেই কোন জোড়াজুড়ি কারন আমি জানি অবশ্যই আমার স্বপ্নরা, ভাবনারা কখনো আমার সাথে প্রতারণা করেনি, করেনা। হয়তো তাতে অপেক্ষা প্রহর গুনতে হয় বহুক্ষন, বহুকাল, বহুবছর। তাতে কি , তোমাকে পাওয়ায় আমার আছে অতৃপ্তি তবে আমার স্বপ্নে, ভাবনায়, কল্পনায়, ভালবাসায় নেই কোন ক্লান্তি।
লক্ষীটি, গত একটি সপ্তাহর বেশী তোমার সাথে প্রতিটি দিন দেখা করেছি। কথা বলেছি, সময় কাটিয়েছি, তোমাকে নিয়ে স্বপ্নের রাজ গড়েছি, তোমার সাথে আকাশ দেখেছি, বাতাস খেয়েছি, তোমার স্পর্শ পেয়েছি, আমার বুকের ডান পাশে ডান বাহু দিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি একান্তভাবে, তোমাকে মিশিয়ে নিয়েছি আমার সাথে। তুমি সে জড়িয়ে ধরাতে কেমন বোধ করেছিলো জানিনা কিন্তু আমার প্রাপ্তিগুলোর মাঝে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এগুলোই। আরো অনেক বড় প্রাপ্তির অপেক্ষার দিন গুনছি। জানিনা সে অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে, আদৌ শেষ হবে কিনা জানা নেই। যদি অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে এসব ছোট প্রাপ্তিকে জমা করবো বড় প্রাপ্তির কাছে আর যদি বড় প্রাপ্তিরা ধরা না দেয় তবে এসব প্রাপ্তি হয়ে উঠবে মহামূল্যবান। তখন অপেক্ষা করবো আরেকটি জগতের জন্য, যখন তোমাকে চেয়ে নিতে কোন সমস্যা হবে না।
আজ থেকে তোমার প্রত্যক্ষ সাক্ষাতের সৌভাগ্য থেকে হয়তো বঞ্চিত হবো, তোমার শরীরের উষ্ঞতা গ্রহন হয়তো হবেনা, হয়তো তোমাকে খুব কাছ থেকে ভালবাসায় জড়িয়ে নেয়া যাবেনা ………. জানিনা এ অপেক্ষার প্রহর কতদিনের জন্য। কত দিনের জন্য এ খানিকের বিচ্ছেদ। জানিনা কতদিন পরে আবার দেখা হবে তোমার সাথে। প্রত্যক্ষ সাক্ষাতের সুযোগ না হলেও তোমাকে আমার হৃদয়ের গভীরে গেঁথে নিয়েছি। আমার মনটা খারাপ হলেই মনের গভীরে প্রবেশ করে তোমাকে দেখে নিবো বারবার। কথা দিচ্ছি লক্ষ্মীটি ফিরে আসবো তোমার কাছে খুবই শীঘ্রই………. সেদিন কি তোমার ভালবাসা পাবো তো??
আদ্র চোখে, শীতল মনে আর ভাবতে পারছিনা অন্ধকারে বসে বসে…………… তোমার অপেক্ষায় রইলাম।
৮.৩০ পিএম , ১৮.১০.১৩