somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু কালাপাহাড় - ধর্ম যখন ব্যাকফায়ার করে (১৪ - ১৫ শতাব্দীর ইতিহাসের পাতা থেকে)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালাপাহাড়ের নাম পূর্ব্বভারত ও বাংলাদেশের অনেকেই জানেন ৷ ইনি এক দুর্ধশ মুসলমান সেনা ৷ ধর্মে প্রচন্ড গোঁড়া ছিলেন তিনি ৷ বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংশ করেছেন জীবনে ৷ বলতে গেলে হিন্দু মন্দির ধ্বংশ, হিন্দু মানুষ হত্যা ও নারী ধর্ষনই ছিল তার জীবনের ব্রত৷ ভারতীয় কলা ও স্থাপত্যের যে ক্ষতি তিনি করেছেন তার পূরণ হওয়া অসাধ্য৷ কিন্তু তিনি নিজে পূর্ব্বজীবনে হিন্দু ছিলেন সে খবর হয়ত অনেকেরই অজানা৷ কেন তার মনে হিন্দু বিদ্বেশ এলো এবং কেনই বা তিনি ধ্বংশের লীলা শুরু করলেন সেই নিয়েই এই প্রবন্ধ।

মধ্যযুগে ভারতের অনেকাংশেই মুসলমান শাসন ছিল৷ কেউ বা সম্রাট কেউ দেশীয় রাজা বাদশা আবার কেউ স্থানীয় জমিদার ৷ তেমনই একজন হলেন বাংলা ও বিহারের শাসনকর্তা সুলেমান কারনানী (কেউ আবার বলেন কারারানী) ৷ ইনি বাঙালী নন, নামটা সিন্ধী হলেও জাতিতে ইনি ছিলেন আফগান ৷ বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রচারে উৎসাহী ছিলেন ইনি ৷ সাধারণ মানুষ তো বটেই বিশেষ করে কোনো যোগ্য লোক দেখলেই তাকে ধর্মান্তরিত করতেন ৷ সোজা আর বাঁকা দুই ধরনের রাস্তাই তার জানা ছিল ৷ অনেক যোগ্য মানুষ তার কাছে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের পরিচয় পেয়েছে সমাজের কাছে, পেয়েছে প্রতিভার বিকাশ৷ আবার অন্য দিকে, অনেক মানুষকে ভয় দেখিয়ে জোর করে অথবা কৌশলে তাদের বৌদ্ধ বা হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলমান বানিয়ে তাদেরই দিয়ে তাদের স্বজাতির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর অমানবিক ষড়যন্ত্র করিয়েছেন কারনানী৷ তবে আমার এই প্রবন্ধের নায়ক অথবা খলনায়ক কিন্তু ইনি নন ৷ বরং তারই এক সেনাপতিকে নিয়েই এই উপাখ্যান৷

রাজীব লোচন রায় উত্তরবঙ্গের এক বাঙালী বাহ্মণ পরিবারের সন্তান ৷ তিনি বিদ্যান ও বুদ্ধিমানও বটে ৷ তার কর্মজীবন শুরু কিভাবে হয়েছিল সেকথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না৷ পরে গৌড়ের সেনানীতে যোগ দেন ইনি৷ সৈন্য পরিচালনা ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শীতা দেখান খুব শীঘ্রই৷ শাসক সুলেমান কারনানীর নজরে আসতে তাই বেশী সময় লাগেনি ৷ কারনানী এবার তার সেরা চালটা চাললেন ৷ রাজীবকে বললেন তোমার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চাই ৷ এছাড়া তোমাকে আমার সেনাপতি করতে চাই ৷ তবে একটা শর্ত আছে৷ তোমাকে গৃহত্যাগ করতে হবে ও মুসলমান হতে হবে ৷ রাজীব লোচন লোভে পড়ে গেলেন ৷ একদিকে গৌড়ের সেনাপতির আসন ও সুন্দরী শাহাজাদী এবং অন্যদিকে তার পিতৃকুল ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে শাহাজাদীর পানি গ্রহণ করলেন ৷

প্রথম কয়েকদিন ভাল কাটার পর কিন্তু রাজীব তার কৃষ্টি সংস্কৃতি ও পরিবারের টান উপেক্ষা করতে পারলেন না ৷ তিনি হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন ৷ এরকম উদাহরণ ভারতের ইতিহাসে আরো অনেক আছে ৷ দক্ষিন ভারতের বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হরিহর ও বুক্ক মুসলমান হয়েও পরে হিন্দু ধর্মে ফিরে এসেছিলেন ৷ রাজীব গৌড়ের ব্রাহ্মণ সমাজে জানালেন সেকথা ৷ কিন্তু হিন্দু ব্রাহ্মণ সমাজ তখন জাত্যাভিমানে কলুসিত ৷ সমাজ তাকে গ্রহন করলো না ৷ রাজীব লোচন এবার বাঙালী ছেড়ে ওড়িয়া ব্রাহ্মণদের দ্বারস্থ হলেন ৷ ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দির হিন্দু সমাজে বিশেষ ভাবে আদৃত ৷ তিনি ঠিক করলেন পুরী গিয়ে শুদ্ধি (purifactory ceremony) অনুষ্ঠান সেরে হিন্দু সমাজে প্রত্যাবর্তন করবেন ৷ কেঊ কেঊ আবার বলেন যে, এই যাত্রায় নাকি তার স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন ৷ তিনি নাকি তার বাবার ছলনাময় ধর্মান্তর নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন ৷ তবে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না৷

ওড়িশায় পুরীতে পৌঁছে রাজীব আবার ধাক্কা খেলেন ৷ পুরীর সেবায়েতরা জানালেন যে, কোনো যবনের মন্দিরে প্রবেশাধিকার নেই ৷ যবনরা বারবার মন্দির ধ্বংশ করেছে, নারীহরণ, বলাৎকার, লুন্ঠন থেকে দেবমুর্ত্তিকে খন্ড খন্ড করা কী করেনি তারা? এই জন্য জগন্নাথদেবের মন্দিরের দ্বার যবনদের কাছে বন্ধ৷ হতোদ্যম হয়ে গৌড়ে ফিরলেন রাজীব ৷

এরপর ব্রাহ্মণদের গোঁড়ামিকে শাস্তি দেবার জন্য উগ্র মুসলমান হয়ে ওঠেন তিনি ৷ গৌড়ের সেনার রাশ তার হাতে, স্বয়ং শাসক তার শ্বশুর তাই প্রতিশোধ নেবার অসুবিধা নেই তার ৷নতুন নাম নিলেন কালাপাহাড়। ধ্বংশের লীলা শুরু করে দিলেন পূর্ব্ব ভারতের দিকে দিকে ৷ ব্রাহ্মণদের ওপর বিদ্বেশের আগুনের দাবানলে আহুতি দিলো হিন্দু মন্দিরের কারুকার্য, ভাস্কর্য ও কলাকৃতি ৷ সবথেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দির ও গৌহাটির কামাখ্যা মন্দির, আর অবশ্যই ভারতীয় শিল্পকলা৷
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:০১
১৪টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×