তনুর সাথে রুদ্রর প্রথম পরিচয় কোন একজনের ফসেবুক পোস্ট এ।
পোষ্ট টা ছিল এরকম,,,,,,,,, আমার পাগলি বোনটিকে এডড করে নিন।
রুদ্র কমেন্ট করেছিল পাগল রা ফেসবুক কিভাবে চালায়। তনু রিপ্লে দিয়েছিল,
এইযে মিস্টার , কাগজ কুড়ানোর মত পাগল আমি নই
- তা তো বুঝতেই পারছি, তাহলে কোন ধরনের পাগল?
- সেটা বুঝতে পারবেন সময় হোক
- ওহ, হমম,। আমরা কি শুধু কমেন্ট করেই যাব নাকি বন্ধু হব??
-রিকোয়েস্ট পাঠান, একসেপ্ট করছি
- হমম, পাঠিয়েছি।
তখন থেকেই তাদের পরিচয়।
সেদিন রাত ৩ টা পর্যন্ত তারা চ্যাটিং করেছিল।
পরদিন দু জনেরই ক্লাস মিস।
বয়সের দিক হতে দু জনেই সমবয়সি।
রুদ্র তনুর ৩৪ দিনের বড়।
তারপর থেকে সারাক্ষন চ্যাটিং হত।
রুদ্র সে সময় সারাক্ষন ফেসবুকে থাকত, আর তনু ও।
এককাপ চা খেলে তনুকে পিকচার পাঠিয়ে বলত, খাবি? হা কর।
তনু বলত, না রে, ঠোট পোড়ে।
সব কথাই শেয়ার করত তারা। খারাপ লাগা , ভালো লাগা, পছন্দের জিনিস সব।
প্রতিটা পোস্টের কমেন্টে আড্ডা জমত।
সমসাময়িক সময়ে অনেক বন্ধু জুটেছিল তাদের।
সবাই মিলে জম্পেশ আড্ডা হত। পোস্ট এ লাইক ১০০ হলে কমেন্ট হত ২০০।
খুব ভা্লই দিন কাটছিল,,, শেয়ার, ইনজয়,,,,,,,
কিন্তু, বিপত্তি বাধল অন্যখানে।
সবাই তাদের সন্দেহ করতে শুরু করল, সবাই ভাবছে হয়ত তারা প্রেম করছে।
আর সমস্যাটা আরো প্রকট হলো যখন তাদের একজন ফেসবুক বন্ধু তনুকে পছন্দ করা শুরু করল,,,,
.
.
.
.
.
.যে ছেলেটা তনু কে পছন্দ করেছিল তারা নাম ছিল রুবেল। বড় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
কিন্তু তনু কয়েক বছর থেকে তার খালাত ভাইয়ের সাথে প্রেম করত।
এদিকে রুবেল রুদ্র আর তনুর এতটা ঘনিস্ট হওয়াকে মেনে নিতে পারছে না।
রুদ্রর সাথে ফোনে কথা বলে রুবেল। যে কোন উপায়েই হোক রুদ্রের মুখ থেকে বের করতে চায় যে, তনুর সাথে রুদ্রর সম্পর্ক আছে।
কিন্তু রুদ্র সবসময়ই সত্য বলে, না কোন সম্পর্ক নেই, শুধুই ফ্রেন্ডশিপ।
রুবেল মানতে নারাজ , রুদ্রকে সে ব্যাবহার করতে চায় নিজের প্রয়োজনে।
রুদ্র তনুর সাথে সব শেয়ার করত। তনু আবার রুবেল কে ধমক দিত।
আবার রুবেল রুদ্রকে বলত, সব কথা ওকে কেন বল তুমি?
এদিকে,
আরেকটি মেযের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় রুদ্রর।
ওর নাম সুমি।
মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুয় নি। সবেমাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে।
রুদ্রর পাশের এলাকার মেয়ে, কিন্তু রুদ্র কখনও তাকে দেখে নি।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী মাসে রুদ্রর বাড়ির পাশে মেলা বসে। দুর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসে সেই মেলাতে।
অনেক অনেক দোকান বসে।
সুমির সাথে রুদ্রর দেখা হওয়ার মোক্ষম সময় সেই মেলা ।
তা ছাড়া আর সম্ভব না। কারন লেখাপড়ার কারনে তাকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়।
তনু সবই জানত।
উপরন্ত তনুই রুদ্রর হয়ে সুমি কে প্রপোস করেছিল।
তনু জানে রুদ্র প্রেম ট্রেম করে না। তাই একটা ব্যাবস্থা করার চেষ্টা করছিল বহুনি থেকেই।
...........
মেলার দিন,,,
রুদ্র একটু ভয় পাচ্ছে।
প্রথম কোন মেয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।
তনু ফোন দিল।
দিয়ে বলল রেডি তুই?
-হ্যা রে রেডি
-কি পড়েছিস?
- প্যান্ট আর টি শার্ট
-গাধা নাকি, যা শার্ট আর জিন্স পর , প্রথম দেখা বলে কথা, পটাতে হবে না?
অগত্যা রুদ্র তাই করল ।
তনু ভিডিও কল দিল।
বলল, হাত গুলো গুটিয়ে নে। আর বুকের বোতাম টা খুলে দে, যাতে মেয়েটা ইমপ্রেস হয়।
রুদ্র তাই করে মেলাতে গেল।
সুমির সাথে দুর থেকে দেখা।
কথা বলার সুযোগ হলোনা।
কথা হলো রাতে ফোনে।
.....
হঠাত, সুমি রুদ্রর ফেসবুক আইডি চেয়ে বসল।
অনিচ্ছা সত্বেও রুদ্র কে দিতে হল।
আইডি নেয়ার একমাত্র কারন,,
তনুর সাথে রুদ্রর চ্যাটিং দেখা।
একসময় তনু রুদ্র কে সন্দেহ করতে শুরু করল।
সম্পর্কে ফাটল শুরু হল সুমি আর রুদ্রের।
তনু আনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারল না। কারন তনু জানে না যে, তার জন্যই এই বিচ্ছেদ।
...........
সুমি রুদ্রকে বলেছিল , হয় আমি থাকব নয়তো তনু।
রুদ্র তনুকেই বেছে নিয়েছিল।
তার কাছে মনে হয়েছিল, প্রেমিকা নয়, তার চেয়ে বন্ধুই উত্তম।
তনু এটা জানতে পারেনি।
সারাক্ষন বিমর্ষ হয়ে থাকত রুদ্র।
তনু অনেক চেষ্টা করে রুদ্র কে ভাল রাখতে।
......
তনুর রিলেশনশিপ ভেংঙে যায়।
রুবেল এটা জানতে পেরে আরও আগ্রাসি হয়ে ওঠে।
রুদ্রের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে।
রুদ্রের নামে নানান খারাপ কথা তনু কে বলে।
তনু তো সবই জানত।
একদিন, সহ্য করতে না পেরে তনু কল দিয়ে কন্ফারেন্স করে ।
রুবেল কে ব্লক করে তনু ফেসবুকে।
অনেক বলার পর আবার রুবেল তনুর ফ্রেন্ড হয়।
.....
ধীরে ধীরে রুদ্র আর তনু আরও ঘনিষ্ট হয়।
সারাদিন সারাক্ষন তারা একে অপরের খোজ খবর রাখে।
হঠা্ত রুদ্রর মনে হতে থাকে সে তনু কে ভালবেসে ফেলছে।
কিন্তু এটা তো ঠিক নয়।
বন্ধু কখনও প্রেমিকা হতে পারে না।
আস্তে আস্তে রুদ্র সরে আসতে থাকে।
কিন্তু দুরুত্ব যেন বাড়ে না। কমতেই খাকে।
যার সাথে প্রতিটা ক্ষন কথা হত, ভিডিও কলে দেখা হত তাকে কি এক নিমিষে ভুলে যাওয়া সম্ভব??
তবুও চেষ্টার কমতি রাখে নি রুদ্র।
সেবার তিন মাস কথা বলা বন্ধ ছিল।
হঠাত একদিন তনুর কল এল..
-কিরে ভুলে গেছিস তো
-নারে ভুলিনি তোকে কি ভোলা সম্ভব
-ভুলতেই হবে ভুলে যা
-বাহ, হঠাত এই কথা?
-আমার বিয়ের কথা চলছে (কান্ন ভরা কন্ঠে)
রুদ্রর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল
- তাই হেব্বি মজা হবে, কি করে ছেলে?
- দেখ এভাবে বলিস না, কিছূ একটা কর, অন্য কোথাও বিয়ে করা সম্ভব না।
- রুদ্র বলল চিন্তা করিস না, যা করার আমি করছি।
কিন্তু কি বা করার আছে তার?শুধু মহান স্রষ্টার কাছে পরিয়াদ জানানো ছাড়া।
দুজনের দুরুত্ব ৫০০ কিলোমিটারের মত। একজন দেশের এক প্রান্তে তো আরেকজন অপর প্রান্তে।
..................
অত:পর বিয়েটা ভেঙে গেল। রুদ্র মনে করল অন্য কাউকে যেহেতু বিয়ে করা সম্ভব নয়, তাহলে হয়ত সে আমার প্রতি দুর্বল ।
যেমনটা আমি তার প্রতি।
এই ভেবে রুদ্র তনুর সাথে কথা বলত।
তনুও সায় দিত রুদ্রের সব কথাতে।
আবার হঠাত একদিন তনু বলছে, আমি আর ফেসবুক চালাব নাঅ ভার্চুয়াল লাইফের বাইরে যাব।
রুদ্র অবাক, হঠাত কি হলো তোর
-না কিছু না
- না বল
-বললাম না কিছু নয়
-তাহলে আমার কি হবে, সারাক্ষন যোগাযোগ করব কিসে?
-কিচ্ছু হবে না, আমি আছি তো পাগল।
ব্যাস আইডি ডি-একটিভ।
...................
রুদ্র ও কম যেত ফেসবুকে , একা থাকতে কার ভাল লাগে?
এভাবে আরো তিন মাসের মত কেটে গেল।
একদিন রুদ্র আবিস্কার করল , তনু অন্য একটা আইডি চালাচ্ছে। আর সেখানে আগের আইডির একজন মাত্র বন্ধু।
বুঝতে বাকি রইল না, সেটাই তনুর বয়ফ্রেন্ড।
খুব কষ্ট পেল । কিছু বলল না।
এর বি এফ এর সাথে বিয়ের কথা চলছে।
খুশি মনে সে রদ্রকে জানাচ্ছে।
যদিও সে জানে রুদ্র তাকে কতটা ভালবাসে।
তবুও বলছে ।
................
এটা বিয়েও হলো না, রুদ্র কে ফোন দিয়ে বলছে,,
বাচলাম, ওফফ কি ঝামেলা গেল। রুদ্র এবার বুঝতে পারল সত্যিকারেই তনু তাকে ভালবাসে।
আবার চলতে লাগল তাদের যোগাযোগ বরাবরের মতই।
রুদ্র যতদুর পারে তনুর শখ গুলো পুরন করার চেষ্টা করত।
তার নিজের পছন্দের গিটার পাঠিয়ে দিল তনুর কাছে।
কলেজ থেকে বৃত্তি পেয়ে কাউকেই খাওয়ায় না রুদ্র। কিন্তু তনু বাদ যেত না।
থাইল্যান্ড থেকে পাঠানো চকলেট রুদ্র পাঠিয়েছিল তনুর কাছে, যেটা তার বোনজামাই পাঠিয়েছিল।
খুব ভালই দিন কাটছিল তাদের।
................
রুদ্র সিদ্ধান্ত নিল তনুর কথা তার বাসায় বলবে, তনু ও বলল হ্যা বল
অগত্যা রুদ্র আম্মু কে বলল, তারপর আম্মু আব্ব অনেক ভেবে চিন্তা করে বলল।
সমস্যা নেই তুই যা চাস তাই হবে, আগে পড়াশোনা টা শেষ কর।
রুদ্র মহাখুশি।
তাকে আর কে পায় এত্ত খুশি সে কখনও হয়েছিল কি না বলতে পারে না।
খুশি হয়ে তনু কে বলল, জানিস সব ঠিক ঠাক, শুধু অপেক্ষা।
...........
হঠাত একদিন তনু বলছে,
দেখ রুদ্র এটা সম্ভব নয়।
বন্ধু কখনও বর বা বৌ হত পারে না। ভুলে যা সব।
ভাল থাকিস।
.............
এখনও তনু ফেসবুকে রুদ্রর বন্ধু, আগের মত কথা হয় না, সপ্তাহে একদিন আবার মাঝে মাঝে সেটা মাস পর্যন্ত গড়ায়।
কথা হয়,
তনু বলে
-কেমন আছিস?
- সবসময় ভালই থাকি জানিস তো। তুই?
- হ ভালই, কি করিস?
-এইতো ঘুমানোর প্লান
- আচ্ছা বাই।
..........
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:০০