লিখতে বসেছি। কি লিখব ভেবে পাচ্ছি না। ঐ রাস্তার পাশে বসে থাকা পাগলটার কথা লিখব? মেডিকেল যেতে প্রায় প্রতিদিনই যে চোখে পড়ে । নাকি সে বৃদ্ধ লোকটার কথা যে কাঠ ফাটা রোদে তার বোঝা বহন করতে না পেরে রাস্তার পাশে তা রেখে বিশ্রাম করছে। কোটরাগত চক্ষু দিয়ে তার শুধু আফসোসই বের হচ্ছে। নাকি টাউন হলের সে মামাটার কথা যে চা বিক্রী করা টাকা দিয়ে তার ছেলেকে ভার্সিটিতে পড়াচ্ছেন।
চরিত্র কিন্তু তিনটি। কিন্তু এই তিনটি চরিত্র কিন্তু একটি মানুষকেই ঘিরে।
তিনি আমাদের কাশেম চাচা। একসময় তিনি মামা ডাকেই মুখরিত হতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে টাইটেল টাও চেন্জ হয়ে গেছে ওনার।
আর এখন? দেখলেও চেনার উপায় নেই।
সুখের সংসার ছিল তার। ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। দিন ও ভালই কাটছিল।
বিয়ের দু বছরের মাথায় খুশির সংবাদ এল চাচা বাবা হতে যাচে্ছন । খুশি আর কে দেখে। পুরো ৫ কেজি মিষ্টি খাইয়েছিল প্রতিবেশিদের।
কিন্তু বাচ্চা জন্ম দেয়ান সময় চাচার বৌ মারা গেলেন।
চাচা ভেঙে পরলেন। অনেকে আবার বিয়ে করার কথা বললেও চাচা তা করেননি পাছে সৎ মা মা মরা বাচ্চাটাকে কষ্ট দেয়।
আগলে রেখেছিল তাকে।
সময়ের পরিক্রমায় বাচ্চাটা আজ আর বাচ্চা নেই। কারো জামাই, কারো স্বামি আবার কারো দুলাভাই।
তবে আর একটা পরিচয় আছে তার, সেটা হল ঘর জামাই্।
অবশ্য বিরাট বড়লোক তার শ্বশুড়। তাতে জামাই বানিয়েছে এক শর্ত। বাবাকে ভুলে যেতে হবে। কোন পিছুটান রাখা যাবে না।
বোকা বাবা তা তো বোঝে নি। ভেবেছিল ছেলে বড় হয়ে বাবার সব দায়িত্ব নিবে। বয়স হয়ে গেছে তার।
কিন্তু ছেলে তো আজ অন্যের দখলে।
চাচা একদিন হঠাৎ তার ছেলের সব কথা জানতে পারল।
খুব কেদেছিল সেদিন পুরুষের কান্না মানায় না। তবুও কেদেছিল।
সিদ্ধান্ত নিল গ্রামে ফিরে যাবে।
কিন্তু , ছেলেকে ভার্সটিতে ভর্তির সময় যে বাড়ি ভিটে বন্ধক রেখেছিল তা চাচার মনে ছিল না।
ফিরে দেখে সব বেদখল।
মাথা গোজার ঠাই ও রইল না তার।
তখন থেকেই চাচা রাস্তায় চলেন আর কি যেন বিড়বিড় করে বলেন।
মেডিকেলের রাস্তায় প্রায়ই তার দেখা মেলে । সবাই তাকে পাগল বলে।
আমি বলি না।
আমি বলি সে একজন আদর্শ বাবা,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৭