সাম্প্রতিক এক রিসার্চ ওয়র্কে দেখা গেছে যে ওল্ড হোম কনসেপ্টটা এখনো বাংলাদেশে এতোটা প্রকট না। বেশিরভাগ মানুষ-ই নিজের বুড়ো মা-বাবাকে আঁকড়ে থাকতে ভালবাসে। শত অভাবেও তাদের মনে টিকটিক করতে থাকে মা-বাবার অবস্থানটা। অবশ্য অমানুষদের অংশ-ও আছে তবে সেটা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এ্যমেরিকায় এশিয়ান দেশগুলো নিয়ে একটা প্রশংসামূলক অনুষ্ঠান-ও হয়ে যায় এ উপলক্ষে!
প্রতিবেশী দেশ নেপালের বয়ষ্ক স্কেলের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সেই তীব্র অসহায় মানুষগুলোর সংখ্যা ৩২১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে ২০১১ নাগাদ। কাঠমান্ডুতে পশুপতি বৃদ্ধাশ্রম সবচে' বড় বৃদ্ধাশ্রম যেটা সরকার চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বেশ ক'বছর হলো। ১৪০ জন মা আর ৯০ জন বাবা নিয়ে চলছে আশ্রমটি। খাবারের অভাব বা আশ্রয়ের প্রচন্ড অসঙ্গতি অসহায় মানুষগুলোকে বোবা জানোয়ারের মতো বেঁচে থাকতে বাধ্য করছে। ছেলে-মেয়েরা বাবা-মা'কে কুকুর-বিড়ালের সাথে মরতে ছেড়ে দিয়ে গেছে। সেই মা-বাবারা হালকা ভালবাসা পেলেই কুঁকরে নিজেকে ছেড়ে দিচ্ছেন একটুখানি অবলম্বনের জন্য।
আমি জানি আমাদের দেশটাও কতো সমস্যা-অভাবে জর্জরিত। তবে আমরা আমাদের শেকড় ছেঁড়ার চিন্তাও করতে পারি না। মা-বাবার অবস্থান দেশ-জাতি বুঝে হয় না। তাঁরা সব দেশেই, সব সমাজেই, সব জাতিতেই সমান সম্মানের দাবী রাখেন। তাঁদের অসহায় সময়টায় আমাদের তাঁদের প্রয়োজন। একসময় আমরা বোবা পশুর মতোন যখন গুঙিয়ে উঠেছি, ভাঙা কন্ঠে অবোধ্য ভাষায় তাঁদের ডেকেছি তখন তাঁরা তাঁদের সব ছেড়ে আমাদের কাছে ছুটে এসেছেন, আমাদের বুকে মিশিয়ে অভয় দিয়ে হয়তো বলেছেন, "বাবা, আমি আছি না?" আমরা সেই পরম আশ্রয়ে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েছি তাঁদের অপার্থিব গন্ধ নিয়ে। কে যেন আমাকে বলেছিল... মানুষ যতো ভাল শিক্ষাগুলো পায় সেগুলো দেয় তাদের বাবা-মা, আর খারাপ বিষয়গুলো তারা নিজেরা গেঁথে নেয় বাড়ির বাইরের পরিবেশ থেকে। যাদের হাত ধরে, বুকে মাথা রেখে, অসহায় সময়ে অবলম্বন করে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হলাম তাঁদের আমরা বৃদ্ধ-পঙ্গু অবস্থায় এমন একটা যায়গায় ছেড়ে দিতে পারি না- যেখানে তাঁরা পড়ে গেলে তাঁদের উঠিয়ে দেয়ার মতো কেউ থাকবে না, খাবার না পেয়ে তাঁরা কুকুরের খাবারে ভাগ বসাবেন আর অসহায়ত্বে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা ধূলো-কাঁদা মাখা নোংরা পূঁতীগন্ধময় রাস্তায় এলিয়ে পড়বেন। আমরা ঘরের অভাব দূর করতে উচ্ছিষ্টের মতো মা-বাবাকে ছুড়ে ফেলতে পারি না। কারন তাঁরা তাঁদের সবচে' বড় দুর্যোগেও আমাদের আঁকড়ে ছিলেন। তাঁরা আমাদের এই ভেবে আগলে রাখেন নি যে আমরা বড় হয়ে তাদের দেখবো; বরং তারা সব ভাবনা-চিন্তা ছাপিয়ে ভেবেছেন যাতে তাঁদের অন্যতম প্রিয় অংশটা অক্ষত থাকে। আমরা কোন মা-বাবার অসম্মান দেখতে পারি না। তাঁদের অসহায়ত্ব মানতে পারি না। আর আমরা এসব পারি না দেখেই আমরা মানুষ।
মানবতার অবক্ষয়ের প্রচন্ড তীব্র একটা চিত্র তুলে এনেছেন একজন মেধাবী ফটোগ্রাফার (জিএমবি আকাশ)। আমি কিছুক্ষণ আগে তার এ্যলবাম দেখে নিজের ভেতরে প্রচন্ড একটা আলোড়ন পেয়েছি। একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি মানুষের ভেতর মানুষ-বোধ জাগাতে চেয়েছেন ছবিগুলো দিয়ে। কারন হয়তো এর চে' বেশি সামর্থ্য তার নেই। আমি কিছু ছবি দেখিয়েছি এই পোস্টে, বাকিগুলো তার এ্যালবামে গেলে দেখতে পারবেন।
কিন্তু আমাদের কি উচিৎ না কিছু একটা করা ? আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি আমার সাথে থাকার জন্য। আমার একার পক্ষে হয়তো কিছু করা সম্ভব না কিন্তু আপনারা সবাই আমার পাশে থাকলে অসাধারণ কিছু করা সম্ভব। আপনারা প্রত্যেকে আপনাদের ফেইসবুক প্রোফাইলে আকাশ ভাইয়ের এ্যালবাম লিংক-টা শেয়ার করুন। আপনাদের বন্ধুদের অনুরোধ করুন শেয়ার করতে। ফেইসবুক বা আপনাদের যেসব সোশ্যাল প্রোফাইল আছে সেসবে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন। এতে করে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ব্যপারটা ছড়িয়ে দিতে পারবো। আমরা সবাই ব্যপারটাকে গুরুত্ব দিলে এটা ছড়িয়ে যাবে। আমরা জানি মা-বাবাকে কিভাবে সম্মান করতে হয় আর যারা সেটা জানে না তাদের জানানোটাও আমাদের কর্তব্যের মধ্য পড়ে।
আমি খুব তীব্রভাবে মানবতার দিব্যি দিয়ে সবাইকে অনুরোধ করছি এ্যালবামটা শেয়ার করতে। এটা করতে আপনার খুব কম সময় বা আয়াস ব্যয় হবে কিন্তু একটা সতর্ক সংকেত ছড়িয়ে যাবে চারপাশে। আমাদের স্বল্পসাধ্যে আমরা কিছু বিপন্ন বাবা-মা-র জন্য এতোটুকু কি করতে পারি না ???
আপনাদের চরম মূল্যবান সময় থেকে এক মুঠো সময় নিংরে নিচের লিংক-টা শেয়ার করুন। চলুন আমরা সবাই মিলে প্রমাণ করে দেই যে - আমরা মানুষ !!!
Click This Link
ফটোগ্রাফার : জিএমবি আকাশ