যারা এখনো চেনেন নি আদ্রিয়ানকে তাদের জন্য... ...ও হচ্ছে আমার একঘেঁয়ে জীবনের মধ্য অসাধারণ একটা আলোড়ন!
আজকে বিকালে আমার সেলফোনে প্রায় ৪-৫ সপ্তাহ পর অসম্ভব প্রিয় একটা নাম্বার দেখে সামনের সপ্তাহের পড়াশোনা বা অন্যসব চাপ বা ঝামেলা ভুলে গেলাম।
কল ধরতেই অন্যদিক থেকে বললো, "বলো আমি কে ?"
-তুই হলি আমার জানটুশ-হানটুশ-প্রানটুশ-টাল্টু-বল্টু-গোল্টু-মিল্টু.....
আদ্রিয়ান খুব-ই ধৈর্য ধরে আমার আহ্লাদ শেষ হয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে...এক সময় আহ্লাদ শেষ হয় এবং সে বলে..."কত্তোদিন পর আন্জি! তুমি কেমন আছো!?" ( সে যে কি কারনে আমাকে আন্জি ডাকে সেটা আমি এখনো বের করতে পারি নাই। আমার নামের তিনটা অংশ মিলিয়ে সে এই নাম বানিয়ে ফেলেছে!)
- হুমম...তোকে চিৎকার করে লাভ য়্যু!
-তোমাকেও চিৎকার করে লাভ য়্যু! আচ্ছা শুনো, খুব জরূরী কয়েকটা কথা বলার জন্য ফোন করলাম। জানো? মনে থাকবে না দেখে পয়েন্ট করে রাখসি!
-আহারে আমার গোল্টু-টাল্টু-বল্টু-মিল্টু-জানটুশ-হানটুশ-প্রানটুশ...
-হিহিহি! শুনোই না। এখন সিরিয়াস হও!
-সিরিয়াস স্পেল কর
-ধুর! কেনো ?
-কর্ না!
-s-e-r-i-o-u-s
-ওকেই! হয়েছে...উম্মাহ! বল এখন আমি সিরিয়াস
-শুনো আন্জি! আমার সাথে এমন বলবা না আর! তুমি কেনো স্পেল ধরবা!? কখনো বলবা না আর এমন। আর এখন আমি জরূরী কথাগুলা বলবো। সিরিয়াস হয়ে শুনো।
-ওকে। শুন, আমি তো দেখি তুই কতো ইনটলিজেন্ট হলি, তাই স্পেল চেক করলাম। আচ্ছা আর করবো না, মাইন্ড করে না প্রানটুশ! স্যরি। বল পয়েন্টগুলা আমি খুব-ই মন দিয়ে শুনতেসি
-হুমম..আচ্ছা তোমাকে বলা হয় নি। আমার রানু খালামনির বিয়ে ছিল জানো ?
-আমাকে তো দাওয়াত-ও দিলি না !!! এমন করলি আমার সাথে তুই!!!
-না না! চিটাগাং হলো তো বিয়ে! তুমি কিভাবে আসতা বলো?
-সেটাতো তোর ভাবার কথা না! দাওয়াত দিবি না সেজন্য তুই !? আমি একটু কেঁদে নেই দাঁড়া...
-আন্জি! তুমি আজকে এমন করো কেনো আমার সাথে! আই! তুমি সত্যি কাঁদো!? আমি কিন্তু মাম্মাকে ডাকবো এমন করলে!
-আহারে! আমার টাল্টুটা! এমতি এমতি বললাম। বড়ওয়ালা স্যরি!
-শুনবা না আমার কথা তুমি ? ...এবার ওর গলায় রাগ!
-স্যরি স্যরি! আর জ্বালাবো না! সয়্যার! বল ...
-শুনো আমি ঠিক করলাম আমি তোমাকে বিয়ে করবো
-কি ?!?
-হুমম...মাকে বলেছি। মা বলেছে "ওকে"। তোমার হলুদের দিন তোমাকে রানু খালামনির মতো ইয়েলো আর রেড কালারের ফুল দিয়ে সাজাবো। অনেক বেশি সুন্দর লাগবে!
-না! ইয়েলো আমার ভাল লাগে না! রেডটা ওকে।
-আচ্ছা! শুধু রেড?
-হুমম...আচ্ছা শুন, তোকে তো দেখতে অনেক ছোট লাগবে আমার পাশে! কি বলবে সবাই! তোর রানু খালামনির জাম্মি কি তোর মতো ছোট ?
- না না না। তুমি বুঝোই নাই। আমি তো যখন অফিস-এ পড়বো তখন বিয়ে করবো। এখন না তো বোকা! পুরা সিলি গার্ল তুমি! হাহাহা!
-আমি তো একদম বুড়ি হয়ে যাবো তখন!
-না! রানু খালামনি তো বুড়ি না! ধুর! তুমি কিছুই বুঝো না!
আমি হাল ছেড়ে দিয়ে আসন্ন বিয়ের প্রস্তুতি নেয়ার ব্যপারে ভাবছি, এমন সময় ওর মা ফোন ধরে বলে..."কংগ্রেটস্ বউমামনি! আমার ছেলের প্রপোজল ডিনাই করিস নাই তো!"
-মাথা খারাপ! সাসুমা! আমার তো জাম্মির সাথে সাথে শ্বাশুরি-ও খুব পছন্দ হয়েছে! কোন সমস্যা-ই না। আজকাল বয়সটা কোন ব্যপার-ই না!
-হাহাহা! তাহলে তো দিন-তারিখ দেখতে হয়! তোর আবার অন্য কোন বয়ফ্রেন্ড নাই তো!?
-নাঃ! শুধুই আদ্রিয়ান!
-তাহলে ওকে। আচ্ছা শোন, আমি তো ছেলেকে নিয়ে সিরিয়াস চিন্তায় আছি! এখন-ই বিয়ের ব্যপারে কথা বলে...সারাজীবন তো পরেই আসে!
-আরে ধুর! রানু খালারটা দেখে ইম্প্রেসড্ হয়ে বলসে!
"মাম্মাআআআআ"----আদ্রিয়ানের চিৎকারে আন্টি ওকে ফোন দিয়ে চলে গেলো।
"আন্জি শুনো! আমি ঢাকা আসবো অগাস্ট-এ। তার আগে বাবা নিয়ে আসবে না। তখন দেখা করবা আর আমার বাকি কথাও বলতে হবে। তোমার মাম্মা-বাবা কে বিয়ের কথা বলবা"
-ওকে! আচ্ছা বিয়ের পর কি আমরা চিটাগাং থাকবো না ঢাকা?
-চিটাগাং
-না! আমি ওখানে যাবো না
-আন্জি! তুমি এমন বলবা না। আমি মাম্মা-বাবা কে রেখে ওখানে কিভাবে থাকবো?
-তো আমি কিভাবে চিটাগাং থাকবো এখানে সবাইকে ছাড়া ?
-তোমাকে বেশি করে মাঝে মাঝে ঢাকা নিয়ে যাবো তো!
-ও! ওকে
-আচ্ছা আরেকটা পয়েন্ট
-বল্
-তুমি আমাকে এখন থেকে আর "তুই" বলে বল্বা না
-কেন? প্লিজ এখন ডাকিই না! বিয়ের পর "তুমি" বলে বলি ?
-আচ্ছা! ওকে। আচ্ছা আন্জি! তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। মাম্মা বলতে মানা করেছে কারন বললে তো সারপ্রাইজ হবে না!
-হুমম...বলা লাগবে না তাহলে। শুন্ তুই সারপ্রাইজ স্পেল কর্
-ধুর! আন্জিই ই ই ই ই!
-হাহাহাহাহা! আচ্ছা লাগবে না, তোর কি খুব ইচ্ছা করছে বলতে ?
-হুমম
-বলে ফেল। আমি আন্টিকে বলবো না
-তোমার জন্য আমি একটা ব্যাগ আর মাম্মা একটা থামি কিনেছে। গিফ্ট!
-ওয়াওওওওওওওও !!! এটার কিন্তু দরকার ছিল না! আন্টিকে দে!
-এমন বলো কেনো ? তুমি না বলছো বলবা না মাম্মাকে!
-ওকে! কিন্তু ঠিক না এটা!
-তাহলে তুমি যে ক্লেডো সেন্টার আর ড্রাগন-বাউল্জি দিয়েছো ওটাও ঠিক ছিল না!
আমি আবারো হাল ছেড়ে দিলাম! একে বুঝিয়ে কোন লাভ নাই।
"আন্জি! আমি যাই! তোমাকে আবার ফোন দিবো...চিৎকার করে লাভ য়্যু!
- আমিও তোকে খুব মিস্ করি! অনেএএএক বেশি! আমি তোর কাছে চলে আসবো দেখিস! চিৎকার করে লাভ য়্যু আমার গোল্টু-টাল্টু-বল্টু-মিল্টু-জানটুশ-হানটুশ-প্রানটুশ...
আমার এলোমেলো ধোঁয়াটে জীবনটা এই ছেলেটা একদম অন্যরকম করে দেয়! আজকে তো আমার বিয়েও ঠিক করে ফেল্লো...বিয়ে করি আর না করি...ও হলো আমার গোল্টু-টাল্টু-বল্টু-মিল্টু-জানটুশ-হানটুশ এবং প্রানটুশ আর সবসময় ঠিক এমন-ই থাকবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:৩৬