শ্রদ্ধেয় হূমায়ুন আহমেদ স্যার প্রয়াত হওয়ার পর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজ "হিমু" নিয়ে সাহিত্য বিশারদেরা চিন্তায় পরে গেলেন। তবে কি "হিমু" সিরিজ এভাবেই হারিয়ে যাবে? তবে আমার মত স্বনামধন্য লেখকের পক্ষে বিষয়টা লজ্জাজনক বটে! তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দায়িত্বটা আমার কাঁধেই তুলে নেব। সেই সুবাদে লিখতে শুরু করে দিলাম।
হিমু নিয়ে আমার প্রথম সিরিজটা শেষের দিকে। রিভাইস দিচ্ছি বসে বসে। নামটা এখনো ঠিক করে উঠতে পারছি না। রাতটাও শেষ হতে চলেছে। ঘুম ঘুম চোখে শেষ লাইনটা লিখতে শুরু করি।
-লোকটি ঘুমিয়ে পড়লো.........।"
এমন সময় দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ।
-চা হবে? ঘুমানো দরকার!
-হবে। আপনি?
-আমি হিমু। যার সম্পর্কে এতদিন ধরে ছাইপাস লিখলেন তাকেই চিনতে পারছেন না?
বলেই লোকটি আমাকে ঠেলেই রুমে ডুকে পড়ে।
-এটা কি হলো?
-চা আনুন। বলছি!
-দাড়ান আনছি!
-দাড়ানোটা কি জরুরী?
-না। আপনি চুপ করে বসে থাকুন।
-তো আপনি হিমু?
লোকটি কোন উত্তর দেয় না।
-উত্তর দিন।
-আপনার হাতটা পকেট থেকে বের করতে পারেন। আমি ডাকাত নই।
আমি পয়েন্ট টুটু ক্যালিবার টা ছেড়ে হাত বের করলাম।
-তো হিমু সাহেব। হঠাৎ স্ব-শরীরে আগমণ?
-ভুল শুধরে দিতে এলাম!
-কিসের ভুল?
-হলুদ রঙ আমার পছন্দ নয়।
-বুঝলাম না!
-হুমায়ুন আহমেদ আমাকে বুঝে নি। আমাকে সারাদিন তপ্ত রাস্তায় হলুদ পাঞ্জাবি পড়িয়ে হাঁটিয়েছেন। একবারও জানতে চাননি আমার বাস্তবই কি হাঁটাহাটি ভালো লাগে কিনা? হলুদ রঙ আমার পছন্দ কিনা?
যাইহোক অন্তত আপনার কাছে এটা আশা করিনি!
-হলুদ রঙ অপছন্দ কেন?
-ধুর মশাই। হলুদ কোন রঙ হলো? হলুদ তো মানব বিষ্ঠাও হয়? ছাই রঙ হলেও আপত্তি ছিল না। যদিও ছাইয়ের ব্যবহার কদাচিৎ। তাও মাঝে মাঝে হকারের কন্ঠে শোনা যায়,
-এই ছাই লাগবে ছাই?
একবার চিন্তা করেন আপনার কানে একটা শব্দ এলো,
-এই গু লাগবে গু? আপনার তখন অনুভুতি কি হবে?
এই পর্যন্ত বলে হিমু নামধারী লোকটা আমার দিকে তাঁকায়।
আমি কিছু বলার আগেই সে বলে উঠে।
-আরেক কাপ চা হবে?
লোকটি ২য় বারের মত চা খাচ্ছে। বিড়াল যেমন দুধ খায় তেমনি করে। চুক চুক শব্দ হচ্ছে।
-বুঝলেন লেখক সাহেব? চা পান করাটা হচ্ছে একটা শিল্প। যেটা সবাই পারেনা।
-বুঝলাম। তা আপনি কি বিদায় হবেন নাকি ফ্লাক্স সহ নিয়ে আসবো?
-না আমি দিনে দুইকাপের বেশি খাই না। পাতলা কাঁথা হবে? কাঁথা ছাড়া ঘুমটা ঠিক জমে না।
-কোথায় ঘুমুবেন?
-কেন খাঁটে! কোন সমস্যা?
-না সমস্যা নাই। তবে খাঁটটা তো সিঙ্গেল বেডের।
-ও আমার হয়ে যাবে।
-আমি?
-আপনি লেখাটা শেষ করুন। সকাল হয়ে এলো বলে।
-দেখুন আপনি যথেষ্ট সময় নষ্ট করেছেন আমার। আমি জানি আপনি হিমু টিমু কিছুই নন। সেটা আপনিও ভালই জানেন। কি উদ্দেশ্যে এসেছেন সেটা বলে বিদায় হলে খুশি হবো।
-ঘুমাতে এসেছি। বিছানার চাদরটাতো বেশ! আপনি লেখক না হয়ে কবি হলেই পারতেন! লিখতেন, যখন চাদর কাঁথা হয়ে যায়...।
চাদর মুড়ি দিয়ে লোকটি ঘুমিয়ে পড়লো। আমার কি করা উচিত সেই মুহুর্তে ভেবে পেলাম না। একবার ইচ্ছে হলো লোকজন ডাকি। আরেকবার ভাবলাম, চাদরসহ পেচিয়ে মালটাকে ফুটপাতে ঝেড়ে আসি। পর মূহুর্তে ভাবলাম লোকটির দ্বারা কোন ক্ষতির সম্ভাবনা অন্তত নেই। হিমুরা আর যাই করুক কখনো কারো ক্ষতি করতে পারেনা।
-কি শেষ করতে পারলেন?
লোকটি কখন উঠে পড়েছে বুঝতে পারিনি। খেয়াল হলো সকাল হয়ে গেছে। লিখতে লিখতে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
-হ্যা শেষ। শুধু নামটা বাকি।
-এক কাজ করুন। আপনি ফ্রেস হয়ে বাজার করে আসুন। আমি ততক্ষণে লেখাটা পড়ে যুতসই একটা নামকরণ করে ফেলি।
-আপনি তো ঘুমাতে এসেছিলেন? ঘুম হয়েছে? এইবার বিদায়!
-বাজার করে আসুন। নাস্তা করে চিন্তা ভাবনা করে দেখবো বিদায় নেওয়া যায় কিনা। এক জোড়া ইলিশ আনবেন। আজকে বেশ বড় ইলিশ পাবেন বাজারে।
-আপনি কি করে জানেন?
-রাতে শেষ রাতে আসার সময়ে এক মাছ ব্যাপারীর সাথে দেখা হয়েছিল। ওর ঝাঁকায় বড় ইলিশ দেখলাম। দিতে চাইলো নেই নি। আপনি গিয়ে নিয়ে আসুন ছোড়াটা কিছু টাকাও পাবে আবার ওর ইচ্ছেটাও পূরণ হবে। ওর অনেকদিনের ইচ্ছে আমাকে ইলিশ খাওয়াবে। আমার কাছে একসাথে এতটাকা হয়ে ওঠে না। যান আর কথা বাড়াবেন না।
এক জোড়া ইলিশ নিয়ে বাজার থেকে ফিরছি। অনেকদিন ইলিশ খাওয়া হয় না। উদ্ভট এক লোকের বদৌলতে অন্তত অনেকদিন পর ইলিশ খাওয়া হবে। ভাবতেই মন থেকে সব চিন্তা ভাবনা দূর হয়ে গেল। আর সাথে সাথেই মনে হলো লেখাটার নামটা পেয়ে গেছি।
"হিমুর ভবিষ্যৎ"। নামটা বেশ খাসা হয়েছে। ভাবতেই মনটা আন্দোলিত হয়ে উঠল। গুন গুন করতে করতে হাঁটার গতিটা একটু বাড়িয়ে দিলাম।
লেখার টেবিলে বসে আছি। হিমু নামধারী লোকটা চলে গেছে। পান্ডুলিপিগুলো বার বার উল্টেপাল্টে দেখছি। প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা কেমন চকচকে সাদা। এ ও কি সম্ভব? লেখাগুলো বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। মাথার চুল টানতে ইচ্ছে হলো। দুর্ভাগ্য সেটাও নেই। টাক মাথায় একবার হাত বুলিয়ে নিলাম। কিন্তু তাতে কোন ফল হলো না। মেজাজ টা বিগড়োতেই থাকলো। হঠাৎ চোখ পড়লো টেবিলের পাশে ছোট্ট একটা চিরকুটে।
-হিমুর কোন ভবিষ্যৎ থাকতে পারে না!
নিচে ছোট্ট করে একটা স্বাক্ষর।
-হু আ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫