কুদুম গুহা
অন্যতম এক অভিজ্ঞতা। ঘুরে এলাম বাংলাদেশের একদম দক্ষিনের এলাকা হোয়াইংকং থেকে হরিণ খোলা হয়ে চাকমা পল্লি পার হয়ে রহস্যময় কুদুম গুহা - যেই এলাকায় বিচরণ করে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ বন্য হাতি। একই সাথে অঞ্ছল টি সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রকার বন্য প্রানি ও নানা জাতের পাখি দ্বারা। এই অঞ্ছল টির সাথেই লাগানো মিয়ানমার সিমান্ত।
শুরু করা যাক তবে।
জাকির ভাই পোস্ট দিলেন তিনি কক্স বাজার। কুদুম গুহাতে গেলে কক্স বাজার হয়েই যেতে হবে। তাই ওনাকে জানালাম আমার কুদুম গুহাতে জাবার প্ল্যান এর কথা। গতবার ও নিঝুম দ্বিপ জাবার কথা বলতেই রাজি হয়ে গেছিলেন। ব্যাস। আমি তখুনি রওনা দিয়ে দিলাম।
কক্স বাজার পৌঁছে যাই ইফতারের সময়। রাত টা হোটেলে কাটিয়ে সকাল ৮ টায় রওনা দেই ২ জন। আমি কুদুম গুহা নিয়ে কিছুটা রিসার্চ করেছি। কুদুম গুহার ভিডিও ওনাকে দেখালাম আগের রাতে। এটা দেখেই তিনি গা গু করা শুরু করে দিলেন। তাই আমি আর বাকিটা বলিনি যে গুহাতে অজগর আর যাওয়ার পথে ডাকাত ও থাকতে পারে।
কুদুম গুহা নিয়ে রিসার্চ করে যা জানতে পেরেছিলাম - এখানে হয়তো বনরক্ষা বিভাগ থেকে বনরক্ষি অথবা থানা থেকে পুলিশ এস্করট হিসেবে নিয়ে যেতে হবে। আর পুলিশ এমনিতে অনুমন্তি দিতে চায় না। কারন ডাকাত। এটা নিয়ে একটা চিন্তা ছিলো।
আমি অনেক ট্যুর দিয়েছি আমার প্রিয় মটরবাইকে করে। যেমন বগা লেক।
যাই হোক, এই ট্যুর বাইক নেই নি। বাসে যেতে হল। টেকনাফ যাওয়ার পথে আমরা শ্যামলা পুর বাজার নেমে পড়ি। এটা হোয়াইঙ্কং এলাকা। ওখান থেকে সি এন জি ধরে চলে আসি হরিণ খোলা - চাকমা পল্লি। এখানে সব চাকমা দের বসবাস। পুরা অঞ্ছল টি মুগ্ধ করে রাখলো আমাদের। আসার পথে সি এন সি ওয়ালা বদমায়েশি করলো ভাড়া নিয়ে। আমি চিন্তা করছিলাম এখন কি থানায় যাওয়া উচিত নাকি সাহস করে যেতে থাকবো। সি এন জি তে পরিচয় হল ফরেস্টের এক কর্মকর্তার সাথে। ওনার কোথায় বুঝলাম থানায় যাওয়া উচিত। কিন্তু আসলে আমাদের মন চাচ্ছিলো না প্যাচের ভেতর যেতে। তাছাড়া ২/৩ ঘন্টা সময় ও নষ্ট হতে পারে। এমনিতে খুব উদগ্রীব হয়ে আছি কখন আমরা জঙ্গল দিয়ে ট্রেকিং শুরু করবো। তাই ওখানে পৌঁছেই সিদ্ধান্ত নিলাম যা আছে কপালে যাত্রা শুরু করে দেই।
তাই বলে আপনিও যদি এভাবে যেতে চান, তবে নিজ দায়িত্তে যাবেন। কারন তো বলেছিই।
এখানে এসে গাইড নিলাম - ১ টা চাকমা ছেলেকে। ব্যাস। এবার ট্রেকিং শুরু। একে ডাকাতের ভয়, আর বন্য হাতির ভয়। গাইড মন্সি টেং কে নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট পাহাড়ি জঙ্গল আর ঝিরি পথ দিয়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে একসময় পৌঁছে গেলাম গুহার মুখে।
আহ। সপ্ন পুরুন। অনেক দিন থেকে মনের ভেতর ইচ্ছে টা ছিলো এখানে ট্যুর দেবার।
গাইড দের ভেতরে রেখে অবশেষে ঢুকে পড়লাম বিসমিল্লা বলে। যেহেতু আমি জানি যে ভেতরে অজগর থাকতে পারে, তাই আমার ভয় টা অনেক বেশি। পানি ভীষণ ঠান্ডা - অবশ্য বেশ স্বচ্ছ। টর্চ আর ক্যামেরা নিয়ে শুরু হলো গুহার ভেতর চলা। একটু জেতেই বুক পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেলাম।
গুহার ভেতর প্রচুর বাদুর আর চামচিকা। আমার বুক ধড়ফড় করছে। অজগরের প্রিয় খাবার এই চামচিকা।। এরা গুহার দেয়ালে বাড়ি খেয়ে নিচে পানিতে পড়লেই অজগর খেয়ে নেয়। তাছাড়া এখানে বাইরে পাইথনের খোলস পাওয়া গেছে। আতঙ্ক এইজন্য আরো বেশি। আহা। জাকির ভাই কি শান্ত মনে পানির ভেতর দিয়ে হাটছে। যাই হোক স্বচ্ছ পানির নিচে দেখতে পেলাম প্রচুর মাছ। আমরা প্রাচীন কালের গুহা বাসিদের মত এগিয়ে চললাম। গুহার দেয়ালে দেয়ালে "ঐতিহাসিক দের নানা রকম কারুকার্জ"। যার যার নাম খোদাই করে রেখে গেছে। ইতিহাস তুমি কেদোনা।
অন্ধকার গুহার ভেতর সময়টা ছিলো শ্বাস রুদ্ধকর। বাদুর আর চামচিকার ডাক বাড়ছিলো যতই আমরা ভেতরে জাচ্ছিলাম। বাড়ছিলো তাদের হুটোপুটি।
যত যাচ্ছিলাম অন্ধকার আরো ঘনীভূত হচ্ছিলো। মুহুর্তে মুহুর্তে ইচ্ছে হচ্ছিলো একছুটে বের হয়ে পড়ি এই অন্ধকার গুহা ছেড়ে। পায়ের নিচে কিছু পড়লেই মনে হচ্চিলো সাপের মাথার ওপর পা দিয়েছি - এই বুঝি ছোবল খেলাম সাপের। ব্যাটা কত বড় সাহস আমার মাথায় পা দেস। ঘুঘু দেখেছিস - সাপ দেখিসনি।
গুহার ভেতরটা কেমন বুঝতে হলে এই ভিডিও ও টা দেখুন
অন্ধকারে লাইট মেরে কিছুতে আলো পড়লেই মনে হচ্ছিলো অজগরের মাথা। জত আগাচ্ছিলাম অন্ধকার বাড়ছিলো। গুহার পানিতে টর্চ মেরে দেখলাম অনেক মাছ। আর প্রচুর চামচিকা হোটোপুটি করছিলো। এই করে করে শ্বাস চেপে সময়টা পার করে এক সময় ফিরতি পথ ধরলাম। গুহার বাইরে এসে হাপ ছেড়ে বাচলাম। আল্লাহর কাছে শুক্রিয়া।
কিছুক্ষণ জিরালাম। জায়গাটা একটা পাহাড়ি জঙ্গলের মাঝখানে।
ফিরতি পথ ধরলাম। ফিরে এলাম অন্য একটা পথ দিয়ে।
ফিরে এসে স্থানীয় এক পুকুরে নেমে পড়লাম। জামা কাপড় বদলে নিলাম।
এলাকাটা ছবির মত সুন্দর। সব চাকমা বাড়ি। বাড়ির ভেতরে ছবি তুলতে গিয়ে জাকির ভাই কুকুর এর দউড়ানি খেলেন।
রাস্তায় দেখলাম কিছু ছেলে মেয়ে ঝিরি থেকে মাছ ধরে নিয়ে এসেছে। মাছ দেখে আমার আক্কেল গুরুম। বেশ বড় বড় মাছ - এর ভেতর আবার বড় বড় চিংড়ি মাছ ও রয়েছে।
দেখলাম চাকমা রা বাধ বানাচ্ছে মাছ ধরার জন্য। বন্যার কারনে প্রচুর মাছ চলে এসেছে এই দিকে।
এই চাকমা পল্লির মাঝে দিয়ে একটা পিচ ঢালা পথ চলে গেছে - দারুন একটা পথ। ভবিষ্যতে বাইক নিয়ে এখানে আবার আসার ইচ্ছে আছে। পথের ২ পাশে গাঢ় সবুজ গাছের ঝোপ জঙ্গল।
চাকমারা সব অবাক হয়ে আমাদের দেখছিল। আসার সময় সি এন জি তে এলেও হেটে হেটে ফিরছিলাম। একসময় একটা রিকশা পেয়ে গেলাম। রিকশা চড়তে দারুন লাগলো।
এই ছিলো কুদুম গুহা ভ্রমন। এর আরো অনেক ছবি যদি দেখতে চান তবে আমার ব্লগ বা ফেইসবুক দেখতে পারেন।
ফিরে এসে একটা মসজিদে নামাজ পড়ে উঠে পড়লাম একটা সি লেগুনা তে। জাকির ভাই কে বললাম, চলেন আরো একটা জায়গায় যাই।
চললাম আমরা অন্য একটা জায়গায় - কুমিরের প্রজনন খামার। এখানে গিয়ে পড়েছিলাম কুমিরের কবলে।
এ নিয়ে পরে কখনো লিখবো। ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১২