শুরু করি। শুক্রবার ডঙ্কা বাজাতে বাজাতে রওনা দিলাম মোটরবাইক দিয়ে। যেখানে যাওয়ার কথা ওখানে না গিয়ে মাঝপথে সিদ্ধান্ত বদলে চলে গেলাম বান্দরবন প্রায় ২.২০ তখন। তাই দেরী। প্রথমে গেলাম নীলাচল। নীলাচল না দিয়ে নীল- আঁচল দিলে আরো ভালো লাগতো।
এখানে সবাই যায়। নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে গ্রীষ্মকালে এখান থেকে মেঘ দেখা যায় একদম কাছে। আপনাকে ছুয়ে ছুয়ে যাবে। মেঘের সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে চান? মেঘের উপরে চলে যেতে যান? চলে যান নীলাচল – নীলগিরি।
ঘুরতে ঘুরতে একটা পথ পেলাম – জিজ্জাসা করে জানলাম এই পথ গেছে রইংছরি। আমার আবার নতুন পথ পেলে ঢু দেয়া অভ্যাস। চলা শুরু করতেই প্রানে সাড়া লাগলো। যেমন ভেবেছি তাই। পাহাড়ের আঁকা বাকা রোড এর দুপাশে সারি সারি গাছ পালা। অনেক্ষন চালালাম মগ্ধ হয়ে। বাইকার দের জন্য আরো একটি পথ। দারুন।
রাত থাকলাম হিল ভিউ তে। সকাল ৭ টা কুয়াশার ভেতর রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য রুমা বাজার হয়ে ঋজুক ঝর্না। গতবার বগা লেক গিয়েছিলাম এই রুমা বাজার দিয়েই হয়েই। y জংশন এ এসে ডানে নীলগিরির পথে না গিয়ে বায়ে রওনা দিলাম। বেশ পথ। পৌঁছে বাইক রেখে নাস্তা করে নিলাম। নদির পাড়ে গিয়ে শুনি নৌকা শুধু হাটবার, অর্থাৎ ব্রহশ ও সোম বার ছাড়বে – ৫০ বা ১০০ টাকা মত ভাড়া। এখন নিলে ১৫০০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ করে যেতে হবে। খবর নিলাম। হাটা পথে ২ ঘন্টার ট্র্যাকিং। ভালোই হল। গাইড নিলাম ৪০০ টাকা দিয়ে (কাজল ভাই) দিলাম রওনা।
ট্র্যাকিং এর পথ টা ভালো লাগলো। পাহাড়ের মাঝে দিয়ে আঁকা বাকা পথ। মাঝে মাঝে জঙ্গল। মাঝে ৩ বার শঙ্খ নদী পার হতে হল। মাঝে মাঝেই তামাক, ফেলু ডাল, সিম ইত্তাদির খেত। মাঝে পার হলাম মারমা দের একটা পাড়া।
একটা অস্থায়ি রেস্ট হাউজে পান করলাম মাটির শাঙ্কিতে রাখা পাহাড়ি ঝর্নার পানি। এত ঠান্ডা পানি আমার জীবনে খাইনি। প্রান ঠান্ডা হয়ে গেলো। এক সময় পৌছে গেলাম।
গিয়ে যাকে বলে প্রথম দর্শনে প্রেম। বিশাল ঝর্না। এই শীতকালেও পানির তীব্রতা অনেক।
বেশ বড়ই ঝর্না টা। নেমে গেলাম। খুব ই ভালো লাগলো। অবশেষে ঋজুক ঝর্না কে থলে তে পুরে ফেললাম।
কিছু টিপ্সঃ
১) You never know – কখন কি লাগবে। তাই পানিতে নামার জিনিসপত্র সাথে রাখুন (হাফ পেন্ট, স্যান্ডেল)
২) রোদের জন্য ক্যাপ (গরম কালে), শীত হলে মাফলার দিয়ে এক ঢিলে ২ পাখি পারতে পারবেন।
৩) ট্র্যাকিং বা অনেক হাটা চলার অভ্যাস না থাকলে নৌকা করে যাবেন। নাহলে পায়ের খবর হয়ে যাবে। মাসল পুল করে কান্না কাটি করতে কবে।
৪) কস্ট করলে কেস্ট মেলে। ট্র্যাকিং করে গেলে অনেক অজানা জিনিস জানা যায়, দেখা যায়।
৫) বাইক করে গেলে অবশ্যই বাইকের কন্ডিশন খুব ভালো করে চেক করে নেবেন (ব্রেক শু, চেইন, ফুয়েল, ইত্যাদি)
৬) বর্ষায় গেলে প্রচুর জোক ধরবে। তাই রবারের জুতা পরে নিন। ওখানে কিনতে পাওয়া যায়। রেইন কোট নিন। বর্ষায় প্রকৃতি কিন্তু আসল রুপ মেলে ধরে।
৭) নিবন্ধিত কোণ সেন্টার থেকে গাইড নিন। অচেনা কারো সাথে যাবেন না/ খাবেন না। আগে জিজ্ঞাসা করে নেবেন – টোটাল কত দিতে হবে। পরে আর কোণ কিছু দিতে হবে কিনা। নাহলে পরে বলবে – এই ফি, ওই ফি দিতে হবে।
আমার ভ্রমন ব্লগ এ আরো কিছু ভ্রমন কাহিনী আছে। এখানে দেখুন।
সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৮