অনেকদিনের স্বপ্ন, আমার নয়, ভ্রমণ নিয়ে যারা কাজ করে যাচ্ছেন এই দেশে, তাদের সকলের। ট্র্যাভেলিং এন্ড এডভেঞ্চার জগতের সকলকে এক ছাঁদের নীচে সমবেত করার। দেশের প্রায় সকলধরণের ট্র্যাভেল এন্ড এডভেঞ্চার এক্টিভিটি’র সাথে সম্পৃক্ত নবীন-প্রবীণ পথিকৃৎদের এক মিলনমেলা বসেছিল গত শুক্রবার এবং শনিবার, ধানমন্ডি’র রবীন্দ্র সরোবরে। সারাদিন ধরে দর্শনার্থীরা দেখা পাচ্ছিল তাদের ট্র্যাভেলিং জগতের পরিচিতজনদের। পর্যটন এর বিকাশ এবং এই শিল্পে তরুনদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি’র লক্ষ্যে দুইদিন ব্যাপী ধানমন্ডি’র রবীন্দ্র সরোবরে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “Bangladesh Youth Tourism Fest 2016”। পর্যটন বর্ষ ২০১৬’কে সামনে রেখে মাসিক পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে এই ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল এর সহযোগিতায় ছিল “বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন” এবং “বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড”। এই আয়োজনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল “বাংলাদেশ স্কাউটস” এবং “এফবিসিসিআই”। প্রমোশনাল পার্টনার হিসেবে ছিল “বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশনাল গ্রুপ” এবং রেডিও পার্টনার হিসেবে ছিল “রেডিও স্বাধীন ৯২.৪ এফএম”।
এই আয়োজন অংশগ্রহণ করে দেশের পর্যটন নিয়ে কাজ করে যাওয়া অলাভজনক শীর্ষস্থানীয় সকল ট্যুরিজম এন্ড এডভেঞ্চার গ্রুপগুলো। এর সাথে দুয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্টলও ছিল (বিশেষ কারণে)। আসুন এক নজরে দেখে নেই কোন কোন গ্রুপ ছিল দেশে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া এই ইয়ুথ ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যালেঃ
VromonBangladesh
Travelers of Bangladesh
BD Cyclist
Eco Tourism – Nature Study & Adventure Club
Spark Adventure Club
Berai Bangladesh
Trekkers BD
Dhaka Drivers Club
Adventure Gear Climbing & Mountaineering
Bangladesh Kite Fedaration
Cox’s Bazar Life Saving and Surfing Club
Beyond Adventure & Tourism
Bangladesh Tourism Board
Bangladesh Parjatan Corporation
National Hotel & Tourism Training Institute
Parjatan Bichitra
CBT Bangladesh
Peak69 Outdoor & Adventure Shop
Bangladesh Rover Scouts
Arunima Resort Golf Club
Green Holidays
Regent Hospitality Training Institute
BSB Cambrian Educational Group
IBAIS University
Update College
প্রতিদিন বেলা দশটা হতে শুরু হয়ে এই ফেস্টিভ্যাল চলেছে রাত আটটা পর্যন্ত। সকাল থেকে রাত অবধি শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ ভ্রমণপ্রিয় মানুষের পদচারনায় মুখর ছিল এই আয়োজন। প্রদর্শনীতে ছিল নানান ট্র্যাভেল এন্ড এডভেঞ্চার সামগ্রী। বাংলাদেশের স্কুবা ড্রাইভিং এন্ড স্নরকেলিং এর পথিকৃৎ মুজিব ভাইয়ের ঢাকা ড্রাইভার্স ক্লাবের স্টলে ছিল স্কুবা ড্রাইভিং এর নানান সরঞ্জামের প্রদর্শনী এবং এই সম্পর্কে নানান প্রশ্ন-উত্তর এর কার্যক্রম। আগ্রহী দর্শনার্থীরা মেলার এক প্রান্তের প্রবেশ মুখের প্রথম এই স্টলে ঢুঁকে আগ্রহ নিয়ে জানতে চেয়েছেন স্কুবা ড্রাইভিং এবং স্নরকেলিং সম্পর্কে। মেলার অপর প্রবেশ পথে ছিল বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের স্টল। দানবীয় আকারে বিশাল এক ঘুড়ি এবং আরও কিছু সরঞ্জাম নিয়ে অংশগ্রহণ করা এই স্টলে দর্শনার্থীদের ছিল উৎসুক দৃষ্টি। ইকো ট্যুরিজম এর স্টলে ছিল লাইভ কুইজের আয়োজন দুদিনব্যাপী। ল্যাপটপে রাখা বিভিন্ন ট্র্যাভেল এন্ড এডভেঞ্চার রিলেটেড ছবি দেখিয়ে করা হচ্ছিল একটি প্রশ্ন। সঠিক উত্তর দিতে পারলে সাথে সাথে একটি পুরস্কার, ইকো ট্যুরিজম এর দারুণ একটি ব্যাচ। বিডি সাইক্লিস্ট এর স্টলে ছিল দুদিন ধরেই জটলা। সাইক্লিং এর স্পীডোমিটারযুক্ত রাইডে বসে কে কত গতি তুলতে পারে তার প্রতিযোগিতা ছিল দুদিনব্যাপী। ভ্রমণ বাংলাদেশ এর স্টলে ছিল প্রতি ঘণ্টার কুইজের আয়োজন। এডভেঞ্চার গিয়ার ক্লাইম্বিং এন্ড মাউণ্টেনিয়ারিং এর আয়জনে দেখানো হয়েছে রোপ ক্লাইম্বিং, যার লিডিং এ ছিলেন দেশের ক্লাইম্বিং এন্ড মাউণ্টেনিয়ারিং এর অন্যতম শীর্ষস্থানীর ব্যক্তিত্ব মীর শামছুল আলম বাবু ভাই। ট্রেকারস বিডি’র তারেক ওবায়দা ভাই নিয়ে এসেছিলেন কাওয়াক, ধানমন্ডি লেকের জলে তা ভাসিয়ে সকলের আগ্রহ মিটিয়েছেন উনার দলের সদস্যরা। বেড়াই বাংলাদেশের স্টলে দুদিনই উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে কাজ করে যাওয়া মাহমুদ হাসান খান। ট্রেকারস বিডি’র স্টলে তারিক ওবায়দা, ভ্রমণ বাংলাদশের স্টলে রবিউল হাসান খান মনা, টিওবি’র স্টলে সালেহিন আরশাদি, পিক৬৯ এ ফজলে রাব্বি, বিডি সাইক্লিস্ট এর স্টলে নিয়াজ মোরশেদ, ইকো ট্যুরিজম এর স্টলে ডাঃ ওয়ারশি এবং অপু নজরুল... এরকম নানান সেলিব্রেটি ট্রেকার, ট্র্যাভেলার, মাউণ্টেনিয়ার, সাইক্লিস্ট, স্কুবা ড্রাইভার, ক্লাইম্বার, সার্ফার এর উপস্থিতি এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিল আগত দর্শনার্থীদের। আমার মত উৎসুক দর্শক সকল সেলিব্রেটিদের এক ছাঁদের নীচে দেখে ছিল যারপরনাই উৎফুল্ল। চারিদিকে ছিল আড্ডা, গল্প, ছবি তোলা আর পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়।
শুক্রবার বিকেলে এই ফেস্টিভ্যাল এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাননীয় বেসামরিক বিমান চলাচল এবং পর্যটন মন্ত্রী, জনাব, রাশেদ খান মেনন, এমপি। যদিও উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল শুক্রবার সকাল দশটা থেকেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প এবং এর সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। কিছু কিছু বক্তব্য শুনে হাসি পেয়েছে। প্রতিদিন একলাখ বিদেশী পর্যটক এর আগমনের মত আষাঢ়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন কেউ কেউ। কেউ বললেন বিলিয়ন ডলারের পর্যটন ব্যবসার সম্ভাবনার গল্প। আসলে, আমাদের দেশে উর্বর মস্তিস্ক আর প্ল্যানিং এর অভাব নেই বুঝি। প্রথমদিন সন্ধ্যার পরে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিল্পী প্রতিক হাসান পরিবেশন করেন গান, সাথে ছিলেন আরও কিছু সহশিল্পী। দ্বিতীয় দিন ছিল নানান আয়োজন অংশগ্রহণকারী দলগুলোর পক্ষ থেকে। ট্রেজার হান্ট, লাটিম খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, ক্লাইম্বিং, কাওয়াকিং সহ নানান আয়োজন। বিকেলের শেষে শুরু হয় প্রতিটি গ্রুপের কর্ণধারদের মতামত বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের গল্প। ছিল তাদের কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথোপকথন। তারা বলেছেন স্বপ্নের কথা, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে; বলেছেন করনীয় এবং বর্জনীয় নিয়ে।
সবশেষে পর্যটন বিচিত্রার কর্ণধার মহিউদ্দিন হেলাল ভাই সমাপনি বক্তব্য রাখেন। সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি জানান, এই উৎসবের এটা ছিল প্রথম ভাগ। দ্বিতীয় ভাগে আগামী তিনমাসে এই সকল শীর্ষ স্থানীয় দলগুলোর পরিচালনায় দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে দশটা ট্র্যাভেলিং রুটে অনুসন্ধানিক ট্যুর পরিচালিত হবে। সেখান থেকে উঠে আসবে সেই সকল রুটের নানান ভাল-মন্দ দিক, করনীয় সম্পর্কে রিপোর্ট। ধারন করা হবে ছবি এবং ভিডিও। এইসব কিছু নিয়ে জুলাই-আগস্ট নাগাদ হবে এই ফেস্টিভ্যালের সমাপনি পর্ব, একটি প্রদর্শনী দিয়ে। উনার বক্তব্য শেষে বিভিন্ন গ্রুপের ভিডিও প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয় প্রোজেক্টর স্ক্রিনে। আর এই প্রদর্শনীর সাথে সাথে সাঙ্গ হয়ে প্রথমবারের মত আয়োজিত “বাংলাদেশ ইয়ুথ ট্যুরিজম ফেস্ট ২০১৬”; আগামীতে আরও ব্যাপক এবং বড় পরিসরে আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৮