কি? শিরোনাম দেখে অবাক হলেন? কেন? এই বইমেলায় আপনার বই বের হয় নাই? যাহ, তা কি করে হয়? নিশ্চয়ই বের হয়েছে, আপনি নিজেই হয়ত জানেন না। আসলে সমস্যা হল দৃষ্টিভঙ্গীর, ভাবনার। একটু খোঁজ করুন তো, অথবা একটু ভেবে দেখুন তো... আপনার বই কি সত্যি বের হয় নাই এবারের বই মেলায়। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, ‘নাহ তো, আমার বই বের হবে আর আমি জানব না!’। তাতো ঠিকই, কিন্তু আসুন একটু অন্যভাবে চিন্তা করি। “আমি”র পরিধিটুকু বিস্তৃত করে “আমাদের” পরিধিতে নিয়ে যাই। এই আমাদের বলতে এই সামহোয়্যার ইন ব্লগের সকল ব্লগারদের কথা বিবেচনা করুন। এখন ভেবে দেখুন এই আমাদের মাঝে লুকায়িত এক বিশাল ‘আমি’র কতগুলো বই বের হল এবারের বই মেলায়। তার থেকে নিজের ইচ্ছে মত দু’চারটি করে বই কি আমরা সবাই কিনতে পারি না?
উপরের কথাগুলো বলার অন্যতম কারণ, আমাদের বই না কেনার মানসিকতা এবং প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়া অন্য কারো বই কিনতে তেমন উৎসাহ না দেখানো। অথচ, ভেবে দেখুন এই ব্লগেই প্রতিদিন যে ব্লগাররা আপনাকে, আমাকে নানান বিষয়ে, নানান আঙ্গিকে, নানান বৈচিত্র্যের পোস্ট উপহার দিয়ে যাচ্ছেন; তাদের মাঝ হতে হাতে গোনা কয়েকজন নিজ উদ্যোগে নিজের কিছু ভালো ভালো লেখা মলাটবদ্ধ করে আমাদের জন্য নিয়ে এসেছেন এই বইমেলায়, তাও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে। তাই, আমাদের কি দায়িত্ব নয়, এই বইগুলো কিনে নিজে পড়া, অন্যকে গিফট করা, পরিচিত মহলে এদের বই সম্পর্কে বলা। প্রতিদিন যে লেখক ব্লগে আমাকে বিনে পয়সায় নিত্য নতুন পোস্ট উপহার দিচ্ছেন, তিনি কি এতোটুকু আশা করতে পারেন না আমাদের কাছ থেকে?
আসলে নতুন লেখকদের প্রোমোট করতে হবে, তবেই আরও অনেক নতুন নতুন শক্তিশালী লেখক তৈরি হবে। একজন হুমায়ুন আহমেদ চলে গিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমাদের লেখক ভাণ্ডার কত সীমিত। আজ বইমেলায় গিয়ে দেখলাম, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক আর ইমদাদুল হক মিলনদের হাইলাইট করে স্টল সাজানো হয়েছে। কিন্তু উনাদের পর? আরও দু’চার জন লেখকের নাম হয়ত বলবেন অনেকে, তারপর? আর খুঁজে পাবেন না। তাই, এখনই সময় নতুন লেখকদের উৎসাহিত করা। পরিচিত গণ্ডির বাইরে গিয়ে নতুন দু’চারজন অপরিচিত লেখকের বই কেনা। যদি বইমেলায় বেড়াতে আসা প্রতিটি পাঠক একটি করে অপরিচিত নতুন লেখকের বই কিনতেন, তাহলে চিন্তা করুন, নতুন লেখকদের বই কত বিক্রয় হত। ফলশ্রুতিতে প্রকাশকরাও উৎসাহিত হত আরও নতুন নতুন লেখকদের বই প্রকাশ করতে।
এবার আসি নিজের কথায়। গত দুই বইমেলায় বই কিনেছিলাম ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ এর ট্র্যাভেল লাইব্রেরি’র জন্য, সব ভ্রমণ এবং ভ্রমণ সম্পর্কিত বই। এবার, বই মেলায় যাওয়া হয় নাই। আজ দুপুরে সুযোগ করে ঘুরে এলাম বই মেলা থেকে, একটু ফাঁকা থাকবে এই আশা নিয়ে। ফাঁকা ছিল, কিন্তু রাস্তায় প্রচুর ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকতে হয়েছে। আজ বইমেলায় যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের এই ব্লগের ব্লগারদের বই কেনা। দুই’তিনদিন পর সপ্তাহ দুয়েকের ট্যুরে ভারত যাব বেড়ানোর উদ্দেশ্যে, ফলে আজ না গেলে আর সুযোগ পেতাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠে আরজু পনি’র পোস্ট থেকে খুঁজে খুঁজে লিস্ট করে নিলাম মোবাইলে, স্টল নাম্বার আর প্রকাশনীর নামসহ। ঘণ্টাখানেকের কম সময়ের ঝটিকা সফরে লিস্ট হতে কিছু বই কেনা হল, কিছু বাকী রয়ে গেল। সেগুলো পরবর্তী কোন একসময় কিনে নেব। আসুন দেখি আজ কি কি বই কিনলামঃ
(১)
বিলেতঃ পাখির চোখে দেখা
রেজওয়ানা আলী তনিমা
যে বইটি কিনব বলে এবার বইমেলায় যাওয়ার প্ল্যান করলাম, সেটি ছিল রেজওয়ানা আলী তনিমা’র “বিলেতঃ পাখির চোখে দেখা” বইটি। এই সিরিজের লেখাগুলো নিয়মিত পড়া হয়েছে, খুব প্রিয় একটা সিরিজ। তাই এই বইটি অবশ্যই কেনা হবে এমন প্ল্যান করে বইমেলায় যাওয়া।
(২)
ফাঁদ ও সমতলের গল্প
ডি মুন এবং মাহমুদ০০৭
গত বছর যে বইটি কেনা হয় নাই বলে আক্ষেপ ছিল, এবার বইমেলায় গেলে সেই বইটি কিনবই বলে প্ল্যান ছিল। আর সেই বইটি হল প্রিয় দুই ব্লগার, ডি মুন এবং মাহমুদ০০৭ এর গল্পগুচ্ছ “ফাঁদ ও সমতলের গল্প”। স্টল খুঁজে পেতে একটু কষ্ট হলেও বই খুঁজে পেতে কষ্ট হয় নাই। বইটি কিনে অন্যরকম ভাল লাগছে।
(৩)
আনন্দভ্রম
হাসান মাহবুব
এর সাথে যে বইটি কিনব বলে প্রথম থেকেই প্ল্যানে ছিল, তা হল হাসান মাহবুব এর নতুন বই “আনন্দভ্রম”। ব্লগে অনেকেই তো গল্প-কবিতা লিখি, কিন্তু যাদের লেখনীতে প্রফেশনালিজম আছে, এমন লেখক খুবই কম, হাতে গোনা দু’একজন। আর তাদের মধ্যে হাসান মাহবুব নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতেই থাকবেন। তাই উনার এই বই কেনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম এবং অবশেষে কিনে নিয়ে এলাম আজ।
(৪)
কালের চিহ্ন
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
খলিল মাহমুদ তথা “সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই” ভাই, আমার মতে বর্তমানে এই ব্লগের সবচেয়ে সেরা এবং ক্ল্যাসিকাল রাইটার। উনার গল্প পড়লে মনে হয় প্রতিষ্ঠিত সুনীল, সমরেশ এদের কারো লেখা পড়ছি। তাই উনার এবারের বইমেলায় নতুন বই “কালের চিহ্ন” আজ কিনে নিলাম। ইচ্ছে আছে উনার এবং হাসান মাহবুব ভাইয়ের আগের বইগুলোও সংগ্রহ করার। তথ্য উপাত্ত আজ সব যোগাড় হয়েছে, কিনে ফেলব সময় সুযোগ করে।
(৫)
প্রেম হল প্রেমের মত
সকাল রয়
আমার আরেকজন পছন্দের ব্লগার, ইদানীং যাকে কম দেখা যায় সামুর উঠোনে, সকাল রয়। উনার প্রথম গল্পের বই “প্রেম হল প্রেমের মত” খুঁজে পেলাম একই স্টলে, হাসান মাহবুব ভাইয়ের বই যে স্টলে ছিল, অনুপ্রাণন প্রকাশনীতে। আশা করি ভালো কিছু গল্প পড়া হবে।
(৬)
আয়াজ আলীর ডানা
সাজিদ উল হক আবির
সাজিদ উল হক আবির এর ব্লগে প্রথম যে জিনিসটা চোখে পড়েছিল, তার প্রোফাইলে লেখা কিছু কথা। “সাধু সাবধান! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন ডন-বৈঠক ও ভারোত্তোলন প্রশিক্ষনে ব্যাস্ত। রাজনীতি নিয়া গুঁতাইয়া বিরক্ত করিবেন না। তাহা হইলে বঙ্গালা সাহিত্যের বদলে আপনি ঝাঁকি খাইয়া যাইতে পারেন!শিব ঠাকুরের আপন দেশে কখন যে কি হয়!” সেই সময় থেকে আমি উনাকে ফলো করছি, ঝাঁকি দেখার জন্য। তাই এবারের বই মেলায় তার নতুন বই “আয়াজ আলীর ডানা” আগ্রহ নিয়ে কিনলাম। দেখা যাক ঝাঁকি কেমন দেখা যায়। এই ব্লগে সাজিদ উল হক আবির, আলম দীপ্র এবং তানজির খান, এই তিনজনকে আমার কাছে মনে হয়েছে, এরা সাহিত্য চর্চায় অনেকদূর যাবে একদিন।
(৭)
অগোছালো শব্দ-কথা
সজল জাহিদ
আমার বাল্য বন্ধু এবং ভ্রমণ পাগল রবিউল হাসান খান মনা’র সাথে কয়েকদিন আগে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি যে, সজল জাহিদের ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে বই বের হয়েছে এবারের বই মেলায়। ব্লগে ভ্রমণ সংকলন করতে গিয়ে ভ্রমণ বিষয়ে লেখালেখি করেন এমন সবার লেখার সাথে পরিচয় আছে মোটামুটি। সজল জাহিদের লেখাও পড়েছি, আজ তার বইখানা কিনে নিলাম। আশা করি সজল জাহিদের "অগোছালো শব্দ-কথা" বইটি সাফল্যের মুখ দেখবে।
(৮)
বিদ্যাকৌশল
রাগিব হাসান
সবশেষে যে বইটির কথা বলব, এটি আরও কয়েক কপি কিনতে হবে আমার। চমৎকার একটি বই, গুণী মানুষের কাছ থেকে এমন বই নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক উপকারী হবে। প্রত্যেকের উচিত এই বইটি অনুজ ভাইবোন, ছেলেমেয়ে বা পরিচিত সকল স্টুডেন্ট (সে যে বয়সী বা যে ক্লাসেরই হোক না কেন)’কে উপহার দেয়া। কোন বইটি? হ্যাঁ আমি বলছি, ডঃ রাগিব হাসান এর “বিদ্যাকৌশল” বইটির কথা। সকলের এই বইটি কেনা এবং একবার পড়ে দেখা উচিত। এরপর আপনি হিসেব করতে পারবেন আপনার কয় কপি লাগবে এবং কাকে কাকে উপহার দিবেন।
আজকে এই কয়টিমাত্র বই কেনা হল। হামিদ আহসান, রোদেলা, নোমান নমি, একুয়া রিজিয়া, সোনালী ডানার চিল সহ আরও কয়েকজনের বই কেনার ইচ্ছে ছিল, সময়-সুযোগের অভাবে আজ কেনা হল না। আর যে যে বই কেনা হল, ইচ্ছে আছে পড়া শেষে পাঠপ্রতিক্রিয়া জানিয়ে আলাদা আলাদা পোস্ট দেয়ার।
শেষে সবার উদ্দেশ্যে বলব, সবাই বই মেলায় যান। নতুন লেখকদের বই কিনুন। আর সহব্লগারদের বই তো অবশ্যই কিনবেন। তো, কবে যাচ্ছেন আবার বই কিনতে? আমার বই, আপনার বই, আমাদের বই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬