এই বর্ষায় কিন্তু প্রকৃতির সবুজ চাদরে মোড়ানো শোভা মন মাতায় প্রকৃতিপ্রেমী প্রতিটি মানুষের। আর তাই বৃষ্টির বেয়াড়া উৎপাত সহ্য করে নিতে পারলে ভ্রমণের অতি উত্তম সময় কিন্তু বর্ষা এবং বর্ষার শেষের সময়টায়। বাঙালী মাত্রই আগে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল শীতকাল হল ভ্রমণের সময়। কিন্তু মজার ব্যাপার সারা বাংলা যে সবুজের জন্য এতো বিখ্যাত সেই বাংলার আসলে সবুজ রূপ অনেকটাই ফ্যাকাশে হয়ে যায় শীতকালে। আর তাইতো বলি, বেড়ানোর আসল মজা বর্ষায়, তবে নদীপথে বা সাগরপথে হলে একটু সাবধান। তাই সব বিষয় মাথায় রেখে বর্ষায় ভ্রমণের জন্য যে জায়গার নাম প্রথমেই মাথায় আসে তা হল বৃহত্তর সিলেট বিভাগ। আসুন না দেখি নেই সিলেট বিভাগের টুরিস্ট স্পটগুলো এক নজরে।
========================= প্রথমেই শুরু করি হবিগঞ্জ থেকে ======================
রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যঃ বাংলাদেশের এক নয়নাভিরাম স্থানের নাম রেমা-কালেঙ্গা। এ নৈসর্গিক দৃশ্য না দেখলে কারো উপলব্ধির সুযোগ নেই-এ স্থানটি কি রকম ! হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চল ১৪ হাজার ৬শ ৩২ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠা এই বনাঞ্চলের বয়স প্রায় ১শ বছর। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বনাঞ্চলে রয়েছে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, বিলুপ্ত প্রায় উতবা, কাইম, বনমোরগ, বানর, হনুমান , হরিণ, সাপ, মৌমাছি, চশমা বানরসহ ৬০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ। নয়নাভিরাম ছোট-বড় পাহাড়, টিলা ও ১টি লেক, ২শ ফুট উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার যা পর্যটকদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। সেখানে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বিশ্রামাগার আছে। রাস্তা শেষের দিকে কাঁচা মাটির হওয়ায় বর্ষাকালে যাতায়াত একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। (তথ্যসুত্রঃ http://www.habiganj.gov.bd/)
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানঃ হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এই উদ্যান । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০'রও বেশি গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া,ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদির বিশেষ নাম করা যায়। এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি। এটিবাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক (Gibbon), চশমাপরা হনুমান (Langur), কুলু বানর (Macaque), মেছোবাঘ, মায়া হরিণ(Barking Deer) ইত্যাদি; সরিসৃপের মধ্যে সাপ; পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠ ঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। এছাড়া গাছে গাছে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত পোকামাকড়, ঝিঁঝিঁ পোকা তাদের অন্যতম। (তথ্যসুত্রঃ http://www.habiganj.gov.bd/ এবং https://bn.wikipedia.org/wiki/)
বিতঙ্গল আখড়াঃ বৈষ্ণব ধর্মালম্বীদের জন্য অন্যতম তীর্থস্থান এই আখড়া বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে ১২ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিম হাওড় পাড়ে বিতঙ্গল গ্রাম অবস্থিত। এর প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ গোস্বামী। তিনি উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান সফর শেষে ষোড়শ শতাব্দীতে ঐ স্থানে আখড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। এতে ১২০ জন বৈষ্ণবের জন্য ১২০ টি কক্ষ রয়েছে। এ আখড়ায় বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় উৎসব হয়। এর মধ্যে কার্তিকের শেষ দিনে ভোলা সংক্রান্তি উপলক্ষে কীর্তন, ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে দোল পূর্ণিমার ৫ দিন পর পঞ্চম দোল উৎসব, চৈত্রের অষ্টমী তিথিতে আখড়া সংলগ্ন ভেড়ামোহনা নদীর ঘাটে ভক্তগণের পূণ্যস্নান ও বারুনী মেলা, আষাড় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রথযাত্রা উল্লেখযোগ্য। আখড়ার দর্শনীয় স্থানস্মূহের মধ্যে ২৫ মণ ওজনের শ্বেত পাথরের চৌকি, পিতলের তৈরি সিংহাসন, সুসজ্জিত রথ, রৌপ্য পাত্র ও সোনার মুকুট উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে নির্মিত এই আখড়াটি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান।
ফ্রুটভ্যালীঃ হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের পাহাড়ের টিলায় প্রায় ৩ একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে মনোরম ফলের বাগান, যার নাম দেয়া হয়েছে “ফ্রুটস ভ্যালী” বা ফলের উপত্যকা। দেশী-বিদেশী বহু দূর্লভ এবং বিলুপ্তপ্রায় ২০০ জাতের বিভিন্ন ফলের সমারোহে ফ্রুটস ভ্যালীটি পরিপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন জাতের গাছ থেকে ইতিমধ্যে ফল আসা শুরু হয়েছে যা বৃক্ষ প্রেমিকদের মাঝে আলোড়ন ও কৌতুহল সৃষ্টি করেছে। প্রতিনিয়ত বহু দর্শণার্থী দূর্লভ ফল বাগান দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে। গত দুই বছর যাবত যাব যাব করে আর যাওয়া হচ্ছে না। আমার এই তালিকার হাতে গোনা যে কয়েকটা জায়গায় এখনো যাওয়া হয় নাই, তার অন্যতম একটা এই ফ্রুটভ্যালী। ইচ্ছে আছে খুব শীঘ্রই সময় করে যে কোন একদিন ঘুরে আসব। তথ্যসূত্রঃ (http://bdsob.com )
লক্ষ্মী বাওর জলাবনঃ হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার লক্ষ্মী বাওর সোয়াম্প ফরেষ্ট (জলাবন) হতে পারে আকষর্ণীয় একটি পর্যটন স্পট। বানিয়াচং উপজেলার প্রান্ত সীমানায় খড়তি নদীর দক্ষিণ দিকে বিরাট হাওরের মধ্যে অবস্থিত এইজলাবন এলাকাবাসীর নিকট খড়তির জঙ্গল নামেও পরিচিত। কখন এই জঙ্গল সৃস্টি হয় তা প্রবীণরাও বলতে পারেন না। এখানে প্রকৃতির এই বিচিত্র রূপ সত্যিই বিস্ময়কর। বর্ষাকালে চারদিকে হাওরের পানি আর জঙ্গলের অসংখ্য গাছপালার সবুজ অরণ্য পরিবেশকে এক নান্দনিক রূপ দিয়েছে। হাওরে দূর থেকে জঙ্গলটিকে দেখে মনে হবে যেন পানির উপর ভাসছে। হিজল, কড়চ, বরুণ, কাকুরা, বউল্লা, খাগড়া, চাইল্লা,নল ইত্যাদি অসংখ্য গাছ ও গুল্মে পরিপূর্ণ এই জলাবন বলতে গেলে এতদিন অনাবিস্কৃতই ছিল। ইদানিংসিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার “রাতারগুল” নামক সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলাবন সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে বানিয়াচং এর লক্ষ্মী বাঁওর জলাবনের সাথে এর সামঞ্জস্য খুজে পাওয়া যায়। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টকে কেউ কেউ দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেষ্ট হিসাবে উল্লেখ করলেও ওয়াকেবহাল মহলের মতে বানিয়াচংয়ের লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প ফরেষ্ট একই শ্রেণীভুক্ত এবং অনেক বড়। (ছবি এবং তথ্যসুত্রঃ http://baniachong.habiganj.gov.
================= আসুন এবার চোখ বুলাই মৌলভীবাজার এলাকার দিকে ================
চা বাগানঃ সারা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী চা-বাগান থাকায় মৌলভীবাজার জেলাকে চায়ের দেশ বলে আখ্যায়িত করা হয়। জেলার প্রবেশমুখে তাইতো দেখা যায় একটি তোরণ, যেখানে লেখা চায়ের দেশে “স্বাগতম”। মোট ৯১টি চা বাগান নিয়ে সৌন্দর্যের ডালি মেলে বসে আছে সুন্দরের আঁধার এই মৌলভীবাজার। যে কোন পথ ধরে কয়েক পা এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে কোন না কোন চা বাগান। যেটায় মন চায় ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন, অনেকক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
চা জাদুঘরঃ দেশের দেড় শ বছরের পুরোনো প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ চা শিল্পের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে টি মিউজিয়াম বা চা জাদুঘর স্থাপন করেছে চা বোর্ড। ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানগুলোতে ব্যবহূত বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এ শিল্পের ঐতিহ্যের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত হয়েছে চা জাদুঘর। জাদুঘরের জন্য এ পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহৃত প্রায় শতাধিক আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় টি রিসোর্টের তিনটি কক্ষে এখন চা জাদুঘর করা হয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ এ বাংলাদেশ চা বোর্ড এটি উদ্বোধন করা হয়। এখানে চা শ্রমিকদের জন্য ব্যবহূত বিশেষ কয়েন, কম্পাস, ঘড়ি, পাম্প টিউবওয়েল, খাট, টেবিল, আয়রন ব্যাম্বো স্টিক, ব্রিটিশ আমলের ফিলটার, চা গাছের মোড়া ও টেবিল, পাথর হয়ে যাওয়া আওয়াল গাছের খণ্ড, প্রোনিং দা, প্লান্টিং হো, দিকনির্ণয় যন্ত্র, ফসিল, লোহার পাপস, ঘটি, ব্রিটিশ আমলের পাখা, কাটা কুদাল, টাইপ রাইটার, কয়েন পাথরের প্লেট, লোহার ফ্রেম টেবিল, প্রনিং নাইফ, ইলেকট্রিক ফ্যান, ফর্ক, সার্ভে চেইন, রেডিও, সিরামিক ঝাড়, ডয়ারের অংশ, বাট্টার ডিল, রাজনগর চা-বাগানের নিজস্ব কয়েন, ব্রিটিশ আমলে লন্ডন থেকে আনা ওয়াটার ফিলটার, রিং কোদাল, তীর-ধনুকসহ নাম না-জানা আরও কিছু সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এখনো সংগ্রহের কাজ চলছে। স্থপতিদের দিয়ে পরিকল্পনা করে চা জাদুঘরে মূল্যবান এসব সামগ্রী রাখা হয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
কমলার বাগানঃ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে কমলার চাষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় সারাদেশে ৩৫০ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয়ে থাকে। সিলেটের অতীত ঐতিহ্য রক্ষায় এবং দেশে কমলার চাহিদা পূরণে ২০০১ সালে তৎকালীন কুলাউড়ায় বর্তমান জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে কচুরগুল ও হায়ছড়া এলাকায় ৬৯হেক্টর জমি নিয়ে কমলা চাষ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এরপর আরও ৫৫হেক্টর জমিতে তা সম্প্রসারিত হয়। চাষিরা নিজ উদ্যোগে অতিরিক্ত ৪৫হেক্টর জমিতে কমলা চাষ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। বৃহত্তম সিলেট বিশেষ করে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী, বড়লেখা, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার পাহাড়ি এলাকার মাটি কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
মাধবকুণ্ড এবং পরীকুণ্ড ঝর্ণাঃ প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন এই জনপ্রিয় ঝর্নাটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি এর গা বেয়ে অবিরাম ধারায় সাঁ সাঁ শব্দে নিচে পড়ছে। অবিরাম পতনের ফলে নিচে সৃষ্টি হয়েছে কুণ্ডের। আর কুণ্ডের প্রবাহমান স্রোতধারা শান্তির বারিধারার মতো মাধবছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কুণ্ডের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন শিবমন্দির। যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের। এর বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে ছড়া। ছড়ার উপরের অংশের নাম গঙ্গামারা ছড়া আর নিচের অংশের নাম মাধবছড়া। পাহাড়ের উপর থেকে পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা পানির স্রোত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হঠাৎ খাড়াভাবে উঁচু পাহাড় থেকে একেবারে নিচে পড়ে যায়। এতে দুটি ধারা সৃষ্টি হয়। একটি বড়, একটি ছোট। বর্ষাকালে ধারা দুটি মিশে যায়।
মূল জলপ্রপাতের বাম পাশে প্রায় ২০০ গজ দূরে আরও একটি পরিকুণ্ড নামের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেও অনবরত পানি পড়ছে। কিন্তু সেখানে যেতে হলে আপনাকে একটু কষ্ট করে যেতে হবে। তবে কষ্ট করে সেখানে গেলে হতাশ হবেন না আশা করা যায়। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাঃ শিকারী সীতেশ বাবু। এ নামেই তার বহুল পরিচিতি। নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় গড়ে তুলেছেন ক্ষুদে চিড়িয়াখানা। ১৯৭১ সনে সীতেশ বাবু শ্রীমঙ্গল উপজেলার রামকৃষ্ণ মিশন রোডের নিজ বাড়ির একাংশে। এখানে বন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বনরুই বিভিন্ন বর্ণের খরগোশ, সোনালী খাটাশ, বিরল প্রজাতির সোনালী বাঘ, সোনালী কচ্ছপ, ভাল্লুক, লজ্জাবতী বানর এবং সরীসৃপের মধ্যে অজগর সাপ, গুইসাপ প্রভৃতি। সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় ধনেশ, হেমালিয়ান টিয়া, ময়না পাখি, কাসে-চড়া, কালিম, বাজিরিক, শঙ্খচিল, তোতা, সবুজ ঘুঘু, হরিয়াল, ঘুঘু, নিশিবক ইত্যাদি। প্রতিদিন দেশী-বিদেশী পর্যটক সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা দেখতে ভিড় জমায়। শিকারী সীতেশ বাবুর এখন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে প্রায় তিনদশক যাবৎ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
মাধবপুর লেকঃ কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে পাত্রখলা চা বাগানে লেকটির অবস্থান। এটি মৌলভীবাজার শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। । মাধবপুর লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপসি'তি মনোমগ্ধকর অনুভূতি জন্মায়। মাধববপুর লেক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়েও আজ পর্যন্ত এখানে গড়ে ওঠেনি পর্যটন বিকাশের কোনো সুবিধা। মাধবপুর লেককে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর পর্যটন প্রকল্প হিসাবে হাতে নেয়া হয়। চারদিকে সবুজ পাহাড় আর উঁচু উঁচু টিলা সাথে সমতলে চা বাগানে গাছের সারি। হয়তো এরই মাঝে একঝাঁক পাখি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাবে তাদের সুরের মুর্চ্ছনা দিয়ে। পাহাড়ী পাখির গান আর নৃত্য ছাড়াও দেখা যায় নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে অঙ্কিত মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য। সুনীল আকাশ আর গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত চা বাগানের এই মনোরম দৃশ্য আকর্ষন করে নিয়ে যাবে ভিন্ন জগতে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবসি'ত লেকটি খুবই চমৎকার। প্রতিদিনই পর্যটকরা আসছেন মাধবপুর লেকে। শত শত বিনোদন প্রিয় পর্যটকদের পদভারে পুরো বছরই মুখরিত থাকে লেক। (তথ্যসূত্রঃ http://sreevumisylhet.com/madhappur.php)
হামহাম ঝর্ণাঃ হাম হাম কিংবা হামহাম বা চিতা ঝর্ণা,বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বা ঝরণা। জলপ্রপাতটি ২০১০ খ্রিস্টাব্দের শেষাংশে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সাথে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়। দুর্গম গভীর জঙ্গলে এই ঝরণাটি ১৩৫ মতান্তরে ১৪৭ কিংবা ১৬০ ফুট উঁচু,যেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ঝরণা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের উচ্চতা ১৬২ ফুট। তবে ঝরণার উচ্চতা বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত কিংবা পরীক্ষিত মত নেই, সবই পর্যটকদের অনুমান। তবে গবেষকরা মত প্রকাশ করেন যে,এর ব্যপ্তি, মাধবকুণ্ডের ব্যাপ্তির প্রায় তিনগুণ বড়। যাত্রাপথের কষ্ট উপেক্ষা করে দিন দিন পর্যটকদের উপস্থিতি দিনদিন বেড়েই চলেছে এই ঝর্ণার পাণে। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানঃ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এই বনকে 'জাতীয় উদ্যান' হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লূক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেষ্টের মতো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই বন এতই ঘন যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
হাকালুকি হাওরঃ হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর, তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার়বড়লেখা (৪০%), কুলাউড়া (৩০%), এবং সিলেট জেলার় ফেঞ্চুগঞ্জ (১৫%), গোলাপগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (৫%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতি বছরই আকষ্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ৮০-৯০টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। হাকালুকি হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বিবেচনা করা হয়। এটি জলাভূমির সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য রামসার এলাকা হিসেবে এটি সংরক্ষিত। হাকালুকি হাওরের স্থায়ী জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ জন্মে। এক সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয়, ভাসমান বড় বড় গাছপালা (swamp forest) এখন আর নেই। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
==================== এবার চোখ রাখা যাক সিলেট জেলার দিকে ===================
মাজারের পুণ্যভূমিঃ শাহজালাল (রহঃ) ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ। তাঁর পুরো নাম শায়খ শাহ জালালকুনিয়াত মুজাররদ। ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজী সালে ৩২ বত্সর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে অধুনা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন বলে ধারনা করা হয়। সিলেট আগমনের সময় কাল নিয়ে যদিও বিভিন্ন অভিমত রয়েছে; তদুপরি শাহ জালালের সমাধির খাদিমগণের প্রাপ্ত পারসী ভাষার একটি ফলক লিপি হতে উল্লেখিত সন-তারিখই সঠিক বলে ধরা হয়। পারসী ভাষায় লিখিত ফলক লিপি বর্তমানে ঢাকা যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। সিলেটে তাঁর মাধ্যমেই ইসলামের বহুল প্রচার ঘটে, সিলেট বিজয়ের পরে শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের মধ্য হতে অনেক পীর দরবেশ এবং তাদের পরে তাদের বংশধরগণ সিলেট সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস করেন। শাহজালাল ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে সিলেটেই কবর দেয়া হয়। তার এই সমাধিস্থল “হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত এবং প্রতিবছর লাখো ভক্ত অনুরাগী এই মাজার জিয়ারত করতে সিলেট আসেন। সিলেটের আরেকটি বহু মানুষের পদধুলি পড়ে যে পুণ্যভূমিতে তা হল, হযরত শাহ পরাণ (রহঃ) এর মাজার। সিলেট শহরের একটি পুণ্য তীর্থ বা আধ্যাতিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি। এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দুরত্বে শাহ পরাণের মাজার অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহর মতো এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হক সহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা মুসলিম ধর্ম বিশ্বাষ ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু আলোচিত ছোট বড় মাজার রয়েছে সিলেট জেলায়। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
জাফলংঃ বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তি এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালখান অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ। এই উত্তলভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে চার ধরণের কঠিন শিলা পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ভোলাগঞ্জ-জাফলং-এ পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি। এছাড়া বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে ঐসব পাহাড় থেকে ডাওকি নদীর প্রবল স্রোত বয়ে আনে বড় বড় গণ্ডশিলাও (boulder)। একারণে সিলেট এলাকার জাফলং-এর নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। আর এই এলাকার মানুষের এক বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই পাথর উত্তোলন ও তা প্রক্রিয়াজাতকরণকে ঘিরে। জাফলং-এ পাথর ছাড়াও পাওয়া গেছে সাদামাটি বা চীনামাটিও, যদিও সেখানে মাটি বা বালি পরিশোধন করার মতো কোনো অবকাঠামো নেই। এই এলাকায় যেমন সাধারণ বাঙালিরা বসবাস করেন, তেমনি বাস করেন উপজাতিরাও। জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জী। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
ভোলাগঞ্জঃ সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলো মিটার। ভারতের আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে এক সময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতো। কালের পরিক্রমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ। নাম ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। রোপওয়ের আয়তন প্রায় একশ’ একর। আর এ কারণেই স্থানটি পর্যটকদের কাছে এত আকর্ষণীয়। দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর অবস্থানও এ এলাকায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারী আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের। ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর সাথে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছে ধলাই নদী মিলিত হয়েছে-পিয়াইন নদীর সাথে। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান ভারতের পাহাড়ী রাজ্য মেঘালয়ে। ধলাই নদীর উজানে এ রাজ্যের অবস্থান। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় ঘেরা এ রাজ্যের দৃশ্য বড়ই মনোরম। ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকায় অবস্থান করে পাহাড় টিলার মনোরম দৃশ্যাবলি অবলোকন করা যায়। বর্ষাকালে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি ধলাই নদীতে পাহাড়ী ঢলের সৃষ্টি করে। (তথ্যসূত্রঃ http://www.sylhet.gov.bd/)
তামাবিলঃ তামাবিল বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। এখান থেকে ভারতের পাহাড়, ঝর্ণা ছাড়াও অনেক দর্শনীয় স্থান অবলোকন করা যায়। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরে তামাবিল অবস্থিত। তামাবিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে সরাসরি ভারতের পাহাড়,পর্বত,ঝর্ণা,জলপ্রপাত দেখা যায়। সীমান্তের ওপারে অনেক গুলো জলপ্রপাত রয়েছে এই জলপ্রপাতগুলো বিকাল বেলা ও গোধূলির সময় দেখতে চমৎকার লাগে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমায় তামাবিল সীমান্তে। তাছাড়া ভারতের শিলং ভ্রমণের সময় এই তামাবিল স্থলবন্দর দিয়েই যাতায়াত করতে হয় বলে এর পর্যটন গুরুত্ব ইদানীং খুব বেড়ে গেছে। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
জৈন্তাপুর আলুবাগানঃ সিলেট তামাবিল সড়কের জৈন্তাবাজার সংলগ্ন আলুবাগান এলাকার জৈন্তাপুর হিল রিসোর্ট এবং এর পাশের জৈন্তা পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে ঝর্ণা দেখার জন্য প্রতি বর্ষায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে এই এলাকায়। যারা রিসোর্টে থাকতে পারেন, তারা প্রাণ ভরে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য। আর যারা বহিরাগত, তারাও কিন্তু বঞ্চিত যান না এই রূপসুধা পান করা থেকে।
লালাখালঃ স্বচ্ছ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ। তেমনি এক নির্জন মনকাড়া স্থান লালাখাল। বাংলাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালা খালে। যাবার পথে আপনির দুচোখ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন কিন্ত সৌন্দর্য শেষ হবে না। ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন নদীর পানির দিকে।কি সুন্দর নীল, একদম নীচে দেখা যায়। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। (তথ্যসূত্রঃ http://www.sylhet.gov.bd/)
বিছানাকান্দিঃ বিছানাকান্দি মূলত সিলেট এর সীমান্তবর্তী একটি পাথুরে ঝিরিপথ, যেখানে গড়ে উঠেছে অপরূপ এক পাথরের বাথান। বাংলাদেশের সীমান্তে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঠাণ্ডা পানির প্রবল স্রোত থরে থরে সাজানো পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলে। ঠিক যেন একটি পাথুরে নদী। ওই দেখা যায় মেঘের সারি ওই দেখা যায় মেঘালয়... মেঘালয়ের টানেই আপনি হাঁটবেন... শত পরিশ্রমেই আপনি হাঁটবেন...। যদি হেঁটে বিছানাকান্দি যান তাহলে আপনাকে এ রকম কয়েকবার নৌকা দিয়ে পার হতে হবে। খালগুলো আগে শুকনো থাকে। তবে বৃষ্টি পানির অভাব নেই। ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে...’- ছোটবেলার কবিতার সাথে ছবির অনেক মিল। বৃষ্টি হলে বিছানাকান্দি যেতে অনেক কষ্ট হবে। কারণ বৃষ্টিতে হাঁটুপানির খালগুলো সাঁতারপানি হয়ে যাবে। আবার বৃষ্টির দিনে নৌকা পাওয়া মুশকিল। তবে যত কষ্টই হোক, যেতে পারবেন। একটু কষ্ট না করলে অপরূপ সুন্দর উপভোগ করাই বৃথা। বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত। বিজিবির একটি অফিস আছে একদম শেষ মাথায়। বিছানাকান্দি নামার আগে অবশ্যই তাদের সাথে পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে নেবেন। (তথ্যসূত্রঃ http://www.dailynayadiganta.com/)
পান্থুমাইঃ সিলেটের সীমন্তাবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের পশ্চিম জাফলং ইউ/পির পান্তুমাইর গ্রাম-প্রকৃতি প্রেমী-ভ্রমন পিপাসুদের হাত ছানী দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতির সুনিপুন হাতের তৈরী ছায়া সু নিবিড় শান্তিময় তরুচ্ছায়া ঘন, গাঢ়, সবুজের সমাহার পাহাড়ী ঝর্ণা ভ্রমন পিপাসু মনের তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে দেয়। গোয়াইনঘাটে আসা ভ্রমন পিপাসুরা পান্তুমাই না দেখলে পুরা ভ্রমনটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। পিয়াইন নদী তীর ঘেষা পান্তমাই গ্রাম,সাথেই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের সু উচ্চ ঘন,গাঢ় সবুজের পাহাড় যেন গ্রামের উপর দাড়িয়ে আছে। পাহাড়ের বুকচিরে বিরাট ঝর্ণা দিয়ে প্রবল বেগে পড়ছে স্বচ্ছ পানি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের এই ঝর্নাটির নাম বড়হিল ঝর্ণা, আর যে পথে বাংলাদেশের উপর দিয়ে এটি পিয়াইন নদীতে এসে মিশেছে তা হল পান্থুমাই। ইস্ট খাসিয়া হিল জেলার পাইনেচুলা থানার অন্তগর্ত এই পাহাড়ী ঝর্ণা ১২৬৯নং মেইন পিলারের পূর্ব দিকে অবস্থিত। গ্রামের রাস্তা থেকেই দেখা যায় সেই মনমুগ্ধকর নয়নজুড়ানো পাহাড়ী ঝর্ণা যার আঞ্চলিক ফাটাছড়া। পাশেই রয়েছে বিশাল আকারের পাথর যাহা বড়হিল নামে অবিহিত। গ্রামের রাস্তা থেকে সোজা নেমে ফুট খেলার বিশাল মাঠ পেরিয়ে ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি বাহিত নদী রয়েছে। মাঠের উত্তর পশ্চিম কোনে খালের পার পর্যন্ত এগিয়ে এলেই মনোমুগ্ধকর পাহাড়ী ঝর্ণার অনেকটা ধারে আসা যায়। (তথ্যসূত্রঃ http://www.dainikjalalabad.com/)
রাতারগুল জলাবনঃ সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনের অবস্থান। বনের দক্ষিণ দিকে আবার রয়েছে দুটি হাওর: শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত ২৬ কিলোমিটার। রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যহিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্ষাকালে এই বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে-চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলোতে। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রাণীকুল। বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই মিঠাপানির জলাবনটিতে উদ্ভিদের দু'টো স্তর পরিলক্ষিত হয়। উপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত যেখানে নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার (মুর্তা) আধিক্য বিদ্যমান । বনের উদ্ভিদের চাঁদোয়া সর্বোচ্চ ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এছাড়াও অরণ্যের ৮০ শতাংশ এলাকাই উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত । বনের স্বাস্থ্য সন্তোষজনক । এখন পর্যন্ত এখানে সর্বমোট ৭৩প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুনগাছ; আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিয়ান, গুটিজাম, বটগাছও। আছে বট গাছ। জলমগ্ন বলে এই বনে সাঁপের আবাস বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে বানর, গুইসাপ; পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি,পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। মাছের মধ্যে আছে টেংরা, খলিশা, রিঠা, পাবদা, মায়া, আইড়,কালবাউশ, রুইসহ বিভিন্ন জাত। জলে নিম্নাংঙ্গ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এখানে ভিড় করেন পর্যটকগণ। বনের ভিতর ভ্রমণ করতে দরকার হয় নৌকার, তবে সেগুলো হতে হয় ডিঙি নৌকা ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় প্রকৃতির রূপসুধা। তবে বনে ভ্রমণ করতে অনুমতি নিতে হয় রাতারগুল বন বিট অফিস থেকে। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
লোভাছড়াঃ সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার একেবারে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে বালুভরা বেশ কিছু স্বচ্ছ পানির নদী। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লোভাছড়া নদী। লোভার মুখ হচ্ছে সুরমা ও লোভাছড়া নদীর সঙ্গমস্থল। চোখের সামনে লোভার উথালপাথাল ঢেউ আর অঝোরধারায় বৃষ্টি। আবার দূরে আঁকাবাঁকা পাহাড়ের গায়ে সূর্যের উঁকিঝুঁকি আর সবুজের ঝিলিক। একটু দূরে ভারত সীমান্তবর্তী ঝুলন্ত সেতুর পথ পাড়ি দিলেই লোভাছড়া চা-বাগানে পৌঁছে যাওয়া যাবে। বর্ষায় লোভা নদীর মজাই আলাদা। আর বৃষ্টির দিন হলে তো কথাই নেই। এখানে সবুজ পাহাড় আর লোভা নদীর অসাধারণ স্বচ্ছ পানি একবার দেখলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে। সঙ্গে বাড়তি পাওনা লোভাছড়া চা-বাগানের বহু পুরোনো ঝুলন্ত সেতুর সঙ্গে এখানকার খাসিয়া গ্রাম। (তথ্যসূত্রঃ http://www.prothom-alo.com/life-style/)
=============== আসুন এবার যাই সিলেট বিভাগের শেষ জেলা সুনামগঞ্জের দিকে ==============
টাঙ্গুয়ার হাওরঃ টাঙ্গুয়ার হাওর বা টাঙ্গুয়া হাওর, বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান, প্রথমটি সুন্দরবন। টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরা (ঝরণা) এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ গ্রামগঞ্জ ও কৃষিজমি। একসময় গাছ-মাছ-পাখি আর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আধার ছিল এই হাওর। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গুয়ার হাওরকে 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখনই অবসান হয় দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে 'রামসার স্থান'হিসেবে ঘোষণা করা হয়। হাটাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি। স্থানীয় বাংলাদেশী জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পরিযায়ী পাখিরও আবাস এই হাওর। এ হাওরে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এই হাওড়ে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক,শঙ্খ চিল, পাতি কুট ইত্যাদি পাখির নিয়মিত বিচরণ এই হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ হাওরের বিখ্যাত মাছের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যায় মহাশোলের কথা। টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম হলো জলজ উদ্ভিদ। এছাড়া আছে হিজল, করচ, বরুণ, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলশী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া ইত্যাদি জাতের উদ্ভিদও। (তথ্যসূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/)
টেকেরঘাটঃ টেকেরঘাট খনিপ্রকল্পের আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখার জন্য পর্যটকদের ভিড় জমে উঠে প্রতি বর্ষায়। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নৌকা সাজিয়ে বনভোজন সহকারে তাহিরপুর সীমান্তবর্তী টাঙ্গুয়ার হাওর ও টেকেরঘাট খনিপ্রকল্পে পর্যটকরা এসে হাজির হয়। জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কুল ঘেঁষা সীমান্ত উপজেলা তাহিরপুরে রয়েছে ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সীমান্ত নদী যাদুকাটা। যাদুকাটা নদীর পানি এতটাই স্বচ্ছ যে নূড়ি পাথর আর বালির খেলা দেখা যায় স্পষ্ট। যাদুকাটা নদীতে ভোরবেলা ছোট বারকী নৌকা যখন নূড়ি পাথর ও বালি আহরণের জন্য আসে তখন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে। আর এই দৃশ্য দেখে পর্যটকরাও মুগ্ধ হন। যাদুকাটা নদীর পানি এত পরিষ্কার যে,পানির দিকে তাকালে নিজের মুখ আয়নার মতো ভেসে উঠে,নদী থেকে মেঘালয় পাহাড়ের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হবে যে কেউ। টেকেরঘাট চুনা পাথর খনি প্রকল্প (বর্তমানে বন্ধ)। এখানে রয়েছে ছোট ছোট টিলা। এখানে টিলার মধ্যে একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। আর এই রেস্ট হাউজের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর বিক্রম সিরাজের সমাধি ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। টেকেরঘাট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর। (তথ্যসূত্রঃ https://www.mzamin.com/ )
বারিক্কার টিলাঃ ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি নদী যাদুকাটা ও তার পার্শ্বস্থ বারেক টিলা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের উওর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ঘেঁষে অবস্থিত বারিক টিলা ও পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি নদী যাদুকাটা যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় এক স্থান। সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিমে এবং তাহিরপুর উপজেলা থেকে উত্তরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত এ বারিক টিলা ও যাদুকাটা নদী। বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে স্রোতধারা আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া যাদুকাটার বুকজুড়ে ধু-ধু বালুচর এবং পার্শ্বস্থ ভারতের সারি সারি উঁচু-নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বাংলাদেশের বারিক টিলার সবুজ বনায়ন মাটিয়া পাহাড় এখানে আসা লোকজনের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। টাঙ্গুয়া হাওর ও বারেক টিলা, যাদুকাটার নান্দনিক নৈর্সগিকতার পাশাপাশি তাহিরপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে যাদুকাটা ও বারিক টিলার পূর্ব প্রান্তে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ আরফিনের আস্তানা, যাদুকাটা নদীতীরে লাউর নবগ্রাম শ্রী-শ্রী অধৈত প্রভুর মন্দির ও পনতীর্থ ধাম, পশ্চিম তীরে ইস্কন মন্দির, বোত্তাশাহর মাজার, বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর শুল্ক স্টেশন, কড়ইড়গড়া রাজা উইক্লিবসিমের বাড়ি, ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প, আওলি জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য। (তথ্যসূত্রঃ http://www.amardeshonline.com/)
মরমী কবি হাছন রাজা’র বাড়ি ও যাদুঘরঃ সুনামগঞ্জের পরিচিতি হাওর জেলা হলেও মরমী লোকসঙ্গীতেরও বিশাল তীর্থভূমি এই সুনামগঞ্জ। কবি হাসন রাজা,একদিকে তিনি জমিদার, অন্যদিকে মরমী কবি। জমিদার হলেও মরমী গানে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হাসন রাজাকে বৈষয়িক জৌলুস প্রভাবিত করতে পারেনি। সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রীতে(বর্তমানে তেঘরিয়া) অবস্থিত তার বাড়িটি এর বড় প্রমাণ। সমসাময়িক অপরাপর জমিদারদের বাড়ির সঙ্গে তুলনা করলে হাসন রাজার বাড়িটি নিতান্তই সাদাসিধে। কোথাও জৌলুসের ছাপ নেই। যে কোনো সামর্থ্যবান গৃহস্থবাড়ির সঙ্গে তুলনা করা যায় বাড়িটির। যেখানে ছিল হাসন রাজার খড়ের ঘর তার উত্তরে সুরমা নদীর পাড়ে এখন হাসন রাজার বংশধররা তৈরি করেছেন দালানবাড়ি। বাড়ির একটি অংশে জাদুঘর। নিচতলার ড্রইংরুমে একটি কাঠের আলমারিতে সংরক্ষিত আছে হাসন রাজার ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন কাঠের দু’জোড়া খড়ম, রুপার পানদানি, বেগুনি রঙের জরির কাজ করা চৌগা, শেষ বয়সে রাজার ভঙ্গিতে চেয়ারে বসা একটি বাঁধানো ফটো ও পাণ্ডুলিপি এবং গর্ব করার মতো আর একটি মূল্যবান বস্তু পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া পারিবারিক তরবারি। ১০ একর ভূমির ওপর নির্মিত হাসন রাজার বাড়িতে তার আমলের একটি পুকুর ও ভিটা ছাড়া তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। বর্তমানে বাড়িতে একটি কাচারিঘর, ভেতরের অংশে দুটি বসতঘর, একটি বাংলো, ধান রাখার ভারাল আছে। নতুন করে নির্মিত তিনতলা একটি বিল্ডিংয়ে বসবাস করছেন হাসন রাজার প্রপৌত্ররা। তিন কক্ষবিশিষ্ট মিউজিয়ামের প্রবেশ কক্ষে রাখা হয়েছে হাসন রাজার বিশালাকার প্রতিচিত্র। বড় বড় শো-কেসে তাঁকে নিয়ে লেখা বই, পত্রিকা, সাময়িকী, প্রতিবেদন ইত্যাদি থরে থরে সাজানো। দক্ষিণ দিকের কক্ষটি হাসন রাজার ব্যবহৃত মন্দিরা, করতাল, ডপকি, একতারা, হুক্কা, কাঠের পিঁড়ি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে। একটি চিলেকোটায় কলকাতা থেকে আনা হাসন রাজার একটি ব্যবহৃত রেডিও রাখা হয়েছে। পশ্চিমের কক্ষে তিনস্তরে সাজানে শো-কেসে হাসন রাজার অনেক মূল্যবান স্মৃতিচিহ্নের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। এই কক্ষে শোভা পাচ্ছে হাসন রাজার ব্যবহৃত কাঠের চেয়ার-টেবিল ও একটি সুদৃশ্য আলখেল্লা। এছাড়াও তবলা, পিতলের তৈরি পা ধোয়ার পাত্র, পানপাত্র, মৌজা ম্যাপ রাখার বাক্স, ভূমির নকশা, হাসন রাজার ব্যবহৃত দুই জোড়া খড়ম, ময়না পোষার দুটি পিঞ্জিরা, তলোয়ার, ছড়ির ভগ্নাংশ, পানদান, ক্যাশবাক্স, খানচা ইত্যাদি। (তথ্যসূত্রঃ http://thedailylifenews.com/)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৫২