মিরা’র মন খারাপ, ভীষণ খারাপ কি না বলা যাচ্ছে না। তবে মুখের ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা খুব ভালো করেই হয়েছে। রফিকের উপর তার খুব অভিমান হচ্ছে, খুব, খুব, খুব। মিরার শরীরে দানা বাঁধা ভয়ঙ্কর দানবগুলো খুব ধীরে ধীরে ক্ষয়ের শেষ প্রান্তে নিয়ে যেতে যাচ্ছে, তার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে দিন দিন কেমন মিইয়ে যাচ্ছে রফিক। মিরার খুব খারাপ লাগে রফিকের মনমরা মুখখানি দেখতে। জীবন ঘুড়ির নাটাই যদি আমাদের হাতেই থাকতো তবে তো কোন সমস্যা ছিল না, যখন খুশী, যেথায় খুশী উড়িয়ে দেয়া যেত ইচ্ছে ঘুড়িটিকে। আবার একইভাবে সময়মত ফিরিয়ে নিয়ে আসা যেত নীড়ের ঠিকানায়। কিন্তু নাটাই যখন অন্যের হাতে তখন আর মন খারাপ করে কি লাভ, যখন সেই নাটাইওয়ালা টান দিবেন নিজের কাছে ফেরত নিতে, চলে যেতে হবে। মিরা এই চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে, শুধু চিন্তা আর কষ্ট রফিকের জন্য। মিরা জানে তাকে ছাড়া কতটা অসহায় রফিক।
রফিকের এই ঝিমিয়ে পড়া দূর করতে প্রথমে ফেসবুকে একাউণ্ট খুলে দিয়েছিল মিরা, রফিক খুব আধুনিক মানুষ হলেও, অন্তঃজাল কেন্দ্রিক সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়াতে নারাজ। ওর কথা ভার্চুয়ালিটি ইজ ভার্চুয়ালিটি, বাস্তবের মানুষ আমি কেন ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করব। ফেসবুকে কয়েকদিন সময় দিয়ে হাঁপিয়ে উঠে রফিক, সবার সারাক্ষণ একই প্রশ্ন মিরার কি অবস্থা, ডাক্তার কি বলল এসব। ডাক্তার কি বলেছে তা সবাই জানে, তারপরও প্রতিনিয়ত এই প্রশ্ন যেন রফিককে আরও বেশী দুর্বল করে দেয়। শেষে মিরা রফিকের জন্য ব্লগে একটা একাউণ্ট খুলে দেয়, মিরার পীড়াপীড়িতে সেখানে দু’তিনটি লেখাও পোস্ট করেছিল রফিক। আজ রফিকের সেই ব্লগ একাউণ্টে ঢুঁকে দেখে সব কয়টা লেখা মুছে ফেলেছে রফিক। মিরার খুব খারাপ লাগছে, এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিলে মিরার প্রস্থানের পর রফিক কিভাবে বেঁচে থাকবে, কাকে নিয়ে বেঁচে থাকবে?
দুমাস পরের ঘটনা, মিরা এখন একটি নিঃস্পন্দন দেহ নিয়ে কৃত্রিম ব্যাবস্থায় ডাক্তারি পরিভাষায় বেঁচে আছে, একে কি আদৌ বেঁচে থাকা বলে? রফিক জানে না। তবে রফিকের কেন যেন মনে হয় কোন একটা মিরাকল ঘটবে, সেই মিরাকলে রফিকের প্রাণপ্রিয় মিরা আবার আগের মত কলকল ধ্বনিতে হেসে বেড়াবে, উড়ে বেড়াবে রফিকের আঙ্গিনায়। রফিক এখন নিয়মিত ব্লগে সময় দিচ্ছে, মিরার শরীর ভীষণভাবে খারাপ হওয়ার আগে রফিক মিরাকে কথা দিয়েছে সে নিয়মিত লিখে যাবে ব্লগে। আর তাইতো নিত্য নতুন লেখা নিয়ে নিজেকে ভুলিয়ে রাখে যন্ত্রণাময় রাতগুলোতে। কিন্তু বাস্তবেই কি ভুলিয়ে রাখতে পারে? রফিকের প্রতিটি পোস্টের প্রতিটি শব্দ যে অশ্রুস্নাত। কিন্তু ব্লগ দুনিয়ায় আজ রফিকের পোস্টগুলো খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। একেক পর্ব আগের পর্বের রেকর্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে পাঠক প্রিয়তায়। রফিকের আজ খুব মনে পড়ছে সেই দিনের কথা, যেদিন রাতের বেলা মিরা ভীষণ মন খারাপ করেছিল কেন রফিক তার পোস্টগুলো মুছে ফেলেছে বলে। সেদিন রফিক বলেছিল, আমার এইসব ছাইপাশ লেখা কে গিলতে আসবে। দেখনা শখানেক হিটও পড়ে না লেখায়। এসব ছাইপাশ লেখা রেখে কি হবে? সেদিন মিরা বলেছিল, দেখ একদিন তোমার লেখা লাখ লাখ মানুষ পড়বে, হয়ত সেদিন আমি তোমার পাশে থাকব না, কিন্তু দূর কোন ভুবনে, যেখানেই থাকি আমি দেখব, তুমি রাতের আঁধার আকাশের বুকে আমাকে খুঁজে নিও। আজ হঠাৎ করেই ব্লগে ঢুঁকে রফিক দেখে তার গত সপ্তাহের পোস্টখানি একলাখ বারেরও বেশী পঠিত হয়েছে। রফিক অঝরে কেঁদে ভিজিয়েছে ল্যাপটপের কিবোর্ড, আজ মিরা চেতনাহীন হয়ে লাইফ সাপোর্ট নিয়ে পরে আছে হাসপাতালের আইসিইউ’তে। রফিকের খুব ইচ্ছে হচ্ছে সেখানে ঢুঁকে চিৎকার করে বলে, মিরা তুমি দূরের ভুবনে হারানোর আগেই আমার লেখা তোমার স্বপ্ন ছুঁয়েছে। লাখো লোক পড়ছে আমার লেখা, শুধু তুমি ছাড়া। মিরা একবার শুধু চোখ খুলে তাকাও আমার দিকে, একবার শুধু পড়ে দেখ আমার লেখা। আমি জানি মিরা সেই মিরাকল ঘটবেই, আজ না হয় কাল, কিন্তু ঘটবেই। তুমি শুধু হারিয়ে যেও না, সময় অতি সন্নিকটে।
নোটঃ এই অনুগল্পটি এইমাত্র তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লেখা। ব্লগার প্লাবন২০০৩ এর কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৬ পোস্ট লাখখানেক হিট পাওয়া উপলক্ষে উনি কৃতজ্ঞতা জানাতে ।। সামুর সকলকে, সকল ব্লগার ও পাঠককে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ।। এই শিরোনামে পোস্ট দেন। সেই পোস্টে ঘণ্টাখানেক আগে মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যের মাধ্যমে কিছু করুন ঘটনা জানতে পারলাম। ব্লগার প্লাবন২০০৩ এবং উনার স্ত্রীকে নিয়ে এই কাল্পনিক গল্প। সবাই দোয়া করবেন মিরাকল ঘটিয়ে উনার স্ত্রী যেন সুস্থ হয়ে উঠেন।
আমার মন্তব্যের প্রতিত্তরে প্লাবন ভাইয়ের বলা কিছু কথা, যা না বললেই নয়। উনার ভাষায় শুনুন, এর মধ্যে আরেকটা ঘটনা বলি, আমার স্ত্রীর চাপে পড়েই কিন্তু আমার ব্লগে লেখালিখি করতে আসা। অন্যন্য ব্লগারের স্ত্রীরা যখন স্বামীর ব্লগিং কে সতীনের মত মনে করে, তখন আমার সহজ সরল স্ত্রী জোর করে আমাকে ব্লগার বানায়।
ও যখন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ল, কয়েকদিন আগে ডাক্তাররা আমাকে বলে দিল খারাপ সংবাদের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হবার জন্য । আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাচ্ছি । আমি তখন ওকে সান্ত্বনা দেবার জন্য বললাম আরে কিছু হবে না। আমার অনেক বড় ব্লগার হওয়া তুমি দেখবে না ? ও তখন আমাকে বলেছিল যেদিন তোমার কোন পোষ্টে এক লাখ হিট পড়বে সেদিন বুঝবে আমি সুস্থ হয়ে যাব । আমি হেসে ওকে বলেছিলাম, এ কোন কথা হোল ? এর মানেই হচ্ছে তুমিই আমার কাছে থাকতে চাওনা, এক পোষ্টে এক লাখ হিট ! এ কি আমার পক্ষে কোনদিন সম্ভব ? ও কিছু বলেনি, ও জানত এটা সম্ভব না ।
ওর পরই কিন্তু দেশে এসে আমি আবার লেখা শুরু করি। আপনি চিন্তা করেন এর এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার পোষ্টে এক লাখ হিট পড়ল !
আপনি কি বলবেন এটাকে ?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৫৭