স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন (প্রথম কিস্তি)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এটা নতুন করে কিছু বলার নেই... কিন্তু আমরা পর্যটক মাত্রই এই ১৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের ক্ষুদ্র একটি অংশ যা লাবনী পয়েন্ট, কলাতলী সি বীচ, হিমছড়ি এবং ইনানি সি বীচ... এই কয়েকটির মাঝেই সীমাবদ্ধ। অথচ এই সুদীর্ঘ সৈকতের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে সীমাহীন রূপের ভাণ্ডার। আর এই রূপের সুধা পান করতে আপনাকে পদচিহ্ন আঁকতে হবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সৈকতের বেলাভূমি’তে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভ্রমণ বাংলাদেশের আয়োজনে ৩৬ জনের দল রওনা দেই টেকনাফের উদ্দেশ্যে “স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন – ৫” ইভেন্টে যোগ দিতে।
শুরুর আগের কথাঃ গত ২০১৩ সালে প্রায় সাত থেকে আটবার টানা তিনদিনের ছুটি ছিল বিভিন্ন সময়ে, ফলে আমরা যারা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি তারা ছিলাম আনন্দে আত্মহারা। গত বছরের অতি প্রাপ্তির রেশ ধরেই কিনা জানিনা, ২০১৪ সালে এমন ছুটি মাত্র একবার পেলাম এই ডিসেম্বরে, বড়দিন বৃহস্পতিবার থাকায়। আর তাই এই ছুটি’কে কেন্দ্র করে এবার শিডিউল রাখা হয় ভ্রমণ বাংলাদেশের সিগ্নেচার ইভেন্ট “স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন – ৫”। শুরুতে একশত’র উপরে অংশগ্রহণকারী’র নাম থাকলেও একসময় তা কমতে কমতে ৪০ এর নীচে নেমে আসে। সবশেষে ৩৬ জনের দল নিয়ে আমরা রওনা হই টেকনাফের উদ্দেশ্যে।
এই লম্বা ছুটিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেন পর্যটকদের মেলা বসেছিল। আমরা রিজার্ভ করেছিলাম শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। শ্যামলী পরিবহণের টেকনাফ-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন চলে ১৮টি বাস, এই তিনদিনের ছুটিতে বাড়তি পর্যটকের চাপ সামলাতে এই রুটে শুধু শ্যামলী পরিবহন নামায় ৫২ টি অতিরিক্ত বাস। ফলে আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলাম পড়তে হবে লম্বা জ্যামে। তাই, ইভেন্টের আগের দিন সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, রাত ৮.০০ টার পরিবর্তে গাড়ী ছাড়বে রাতে ৬.৩০ টায়। ফলে সবার মাঝেই ছিল টেনশন, অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে লাগেজ নিয়ে ফের আসতে হবে নটরডেম কলেজের গেটে, গাড়ী ছাড়বে এখান থেকেই। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকা শহরের জ্যাম ভেঙ্গে এই অসাধ্য সাধন করা ছিল সবার জন্যই একটা চ্যালেঞ্জ। সবাই এই চ্যালেঞ্জ জয় করলেও ব্যর্থ হলেন ফেরদৌস ভাই আর শশী ভাবী। নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা পরেও উনারা জায়গামত আসতে না পারায় বাস ছেড়ে দিল। উনারা সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে ছুটলেন বাস ধরতে। কাঁচপুর ব্রিজ পেড়িয়ে বাস থামল একটা পেট্রোল পাম্পে, সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর উনারা যোগ দিলেন আমাদের সাথে। এরপর আরও সামনে থেকে আমাদের সাথে নরসিংদী থেকে যোগ দিলেন তিন ভ্রমণসঙ্গীঃ কামাল ভাই (ব্লগার সাদা মনের মানুষ), তুহিন ভাই আর মেজবাহ ভাই। দল পূর্ণ হলে আমাদের বাস ছুটে চলল টেকনাফের পানে।
শুরুর কথা (প্রথম দিন)ঃ সারা রাস্তায় বার বার জ্যামে পড়া সত্ত্বেও আমাদের দক্ষ ড্রাইভার এবং তার চতুরতার কারণে আমরা সকাল সাতটার কিছু পরে পৌঁছুই টেকনাফে। সেখানে ভ্রমণ বাংলাদেশের সভাপতি আরশাদ হোসেন টুটুল ভাই দুই দিন আগে থেকেই পৌঁছে গিয়েছিলেন আমাদের সবকিছুর অগ্রিম বন্দোবস্ত করতে। আমরা প্রথমে চলে গেলাম টেকনাফের এক রেস্টুরেন্টে, সেখানে সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিয়ে তৈরি হয়ে গেলাম প্রথম দিনের হাঁটার জন্য। আমাদের সকল ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ টুটুল ভাইয়ের কাছে জমা দিয়ে আমরা চান্দের গাড়ী করে চলে গেলাম টেকনাফ সৈকতে। সেখান থেকে শুরু হল আমাদের প্রথম দিনের হাঁটা। শুরুর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরা সবাই শুরু করলাম হাঁটা। প্রথম দিন আমাদের গন্তব্য দক্ষিণ শিলখালি ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, সেখানেই আমরা প্রথম দিন রাত কাটাবো।
হাঁটা শুরু করতেই গায়ে লাগলো সাগরের নীল জলে ভেজা নোনা বাতাসের ঝাপটা, সারা রাতের বাস জার্নি করে ক্লান্ত শরীর নিমিষেই চনমনে হয়ে উঠলো। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সবাই সৈকত ধরে হাঁটতে লাগলাম, কেউ ছবি তোলায় মত্ত থেকে, কেউ কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গানের ভুবনে ডুব দিয়ে, আর কেউ কেউ হাজারো কথার গল্পে মত্ত হয়ে। এভাবে চলতে চলতে এগিয়ে চলল “ভ্রমণ বাংলাদেশ” এর হণ্টন দলটি। সাগরের নীলাভ জলরাশি, মাথার উপরে থাকা নীলাকাশ তার সাথে আদিগন্ত ছড়িয়ে থাকা নির্জন সৈকত, যার উন্মুক্ত বক্ষে আমরা ছাড়া মাঝে মাঝে কিছু জেলে পল্লীর লোকজনের দেখা পাচ্ছিলাম। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর আস্তে আস্তে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে আরম্ভ করলো। কেউ কেউ গতির কারণে আগ-পিছ হয়ে গেল, আবার কেউ কেউ শারীরিক সক্ষমতার ভিত্তিতে।
এই ইভেন্টে একটা সুবিধা ছিল, কেউ যদি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যায়, অথবা অন্য কোন কারণে হাঁটতে অপরাগ হয় তবে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই উঠে আসতে পারবে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন পিচ ঢালা রাস্তায়। আর এই সুবিধার কারণেই অনেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও হাঁটার জন্য চলে এসেছিল কক্সবাজার। সেই দলের অনেকে, সাথে আরও অনেকে যারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হাঁটতে পারছিল না তারা উঠে গেল পাকা রাস্তায়, তারপর সিএনজি অটোরিক্সা’য় চড়ে চলে গেল দক্ষিণ শিলখালি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের উদ্দেশ্যে। সবশেষ দলটি সন্ধ্যার পরপর পৌঁছল শিলখালি। সেখানে পৌঁছে সবাই গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া শেষে যার যার বিছানাপত্র রেডি করে কেউ কেউ ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল, কেউ কেউ বসে পড়ল আড্ডায়, কেউ কেউ বসাল গানের আসর...
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন