বর্ষ শেষের ঝরা পাতা (বর্ষপূর্তিতে শততম পোস্ট)
এক বছর সময়টা কতই না অল্প। লেখালেখিটা ছোট বেলা থেকেই ছিল আমার একান্ত গোপন একটা শখ। আমার লেখার খাতা, কবিতার ডায়েরি তালাবদ্ধ থেকেছে আমার ব্যাক্তিগত ড্রয়ারের সুরক্ষ আশ্রয়ে। কেন যেন লেখাগুলো কাউকে দেখাতে মন চাইতো না। একবার বাসায় এসে দেখি আমার ড্রয়ার খোলা এবং একটি কবিতার ডায়েরি নেই! পরে খোঁজ করতে জানলাম আমি তাড়াহুড়োয় সকাল বেলা ড্রয়ার খোলা রেখে গিয়েছিলাম, এক কাজিন বেড়াতে এসে ড্রয়ার খোলা পেয়ে কবিতার ডায়েরিটি নিয়ে গেছে। তো এই হল যখন অবস্থা, তখন এক বন্ধু’র বাসায় বেড়াতে গেলে সে তার ব্লগ দেখালো, পড়ে ভালো লাগল, মজা পেলাম। বাসায় ফিরে ব্লগস্পটে একটা একাউণ্ট খুললাম। কিছু লেখা লিখতে শুরু করলাম। বন্ধুটি কিছু লেখা শেয়ার করল “সামহয়্যারইন ব্লগ” এ। তো সেই বন্ধুর পরামর্শে সামুতে একাউণ্ট খোলা এবং আজকে যার এক বছর পূর্তি হল।
প্রথম লেখাটি ছিল একটা স্যাটায়ারধর্মী লেখা লেখার অপচেষ্টা, দায়ী নিউটনের ৩য় সুত্র। মজার মজারপ মজার ব্যাপার ছিল আমি ২টি লেখা লিখে এক সপ্তাহেরও কম সময়ে জেনারেল হয়েছিলাম। কিন্তু মজার বিষয় হল আমি ওয়াচড, জেনারেল, সেইফ এই জিনিসগুলো খেয়াল করেছি আরও ছয়মাস পরে। প্রথম দিকে কনফিউজড থাকতাম কি নিয়ে লিখব এই ভেবে। সেই সময়ের পোস্টগুলো দেখলে একটু লজ্জা পাই, কি সব ছাইপাশ লিখেছি। আমার প্রথম লেখার প্রথম মন্তব্য করেছিলেন ব্লগার বোকামন , যদিও বহুদিন উনার দেখা পাই না।
তো সামুতে লেখা শুরু করার এক মাসও পূরণ হয় নাই, এমন সময় কাদের মোল্লা’র ফাসির রায় হয় আর তার প্রতিবাদে শাহবাগে গণজাগরণ। ব্লগে আমার এটেনশন নিয়ে আসে একটি ঘটনা। তা গত পহেলা বৈশাখে। সেদিন প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’য় ঢুকি, কি সার্চ দিবো ভেবে না পেয়ে দিলাম আমার সামু নিক দিয়ে সার্চ। হঠাৎ একটা রেজাল্ট দেখে থেমে গেলাম, “লিস্টি বানানো শুরু করলাম – সুখোই-৩৫ এর বাংলা ব্লগ” সেখানে আমার নিক শো করছে। ঢুকে দেখি এই পোষ্টে সুখোই সাহেব এবং কিছু সহব্লগার ছাগু লিস্টি তৈরি করেছেন এবং তাতে আমিও রয়েছি। হায় হায় একি নিউজ! হাসবো না কাঁদবো? কষ্টে সেদিন একটা পোস্ট দিলাম, “নববর্ষ ১৪২০ এ আমার প্রাপ্তি - একটি আবিস্কার - আমি একজন চিহ্নিত-লিষ্টেড ছাগু ব্লগার!!!”। শাহবাগ আন্দোলন শুরু হয় ৫ই ফেব্রুয়ারি আর আমি ৭ই ফেব্রুয়ারি একটি লেখা দেই শাহবাগ স্কয়ার: সরকারের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার পরিণতি এবং ৯ই ফেব্রুয়ারি লিখি শাহবাগ যেন বুয়েট না হয়!। আর এর ফলস্বরূপ চিহ্নিত রাজাকার-ছাগু ট্যাগ! সত্যই বিচিত্র। আমি নিজে ২ মাস পর ঘটনা জেনে ঐদিনই উনাকে মন্তব্য করে জানতে চাই ভাই কিসের ভিত্তিতে আপনি আমাকে ছাগু ট্যাগ দিলেন? মজার ব্যাপার উনি আজো কোন উত্তর দেন নাই এবং সেখান থেকে আমার নামও অপসারণ করেন নাই।
আমি প্রথমদিকে মন্তব্য ব্যাপারটা’র গুরুত্ব উপলব্ধি করি নাই। তাই তেমন মন্তব্য করতাম না আর প্রাপ্ত মন্তব্যর প্রতিউত্তরও দিতাম না তেমন। এটা যে ব্লগিং এর জন্য খারাপ দিক তা প্রথম আমায় ধরিয়ে দেন প্রিয় ব্লগার ‘কাণ্ডারি অথর্ব’। আজকের দিনে সকলসহ ব্লগারদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি এই অনিচ্ছাকৃত অসৌজন্যতা’র জন্য। আমার সামুতে লিখতে গিয়ে অনেক সহব্লগার উৎসাহ জুগিয়েছেন যাদের মধ্যে স্বপ্নবাজ অভি এবং মামুন রশিদ ভাইয়ের নাম অবশ্যই আগে আসবে। নিয়মিত ব্লগে এসে উৎসাহ দিয়ে গেছেন ঢাকাবাসী, সুমন কর, এহসান সাবির, আদনান শাহরিয়ার। আপনাদের জন্যই শত ব্যাস্ততা সত্তেও ব্লগে লিখে যাচ্ছি নিয়মিত। আই লাভ ইউ গাইজ...।
আমি বোধহয় সামুর অন্যতম সৌভাগ্যবান ব্লগার। এক সপ্তাহেরও কম সময়ে সেইফ, কখন জেনারেল হয়েছি জানি না, ছয় মাসের পর প্রথম কোন লেখা নির্বাচিত পাতায় যায়। লেখাটি ছিল – “বিশ্বের সেরা পাঁচটি জিভে জল আনা ফাস্ট ফুড চেইনের গল্প” যা আমার অদ্যাবধি সবচেয়ে বেশিবার পঠিত লেখা (মাত্র ৬৬৮বার)। এই লেখা দিয়ে আমি বোধহয় সো কলড ‘মডু’দের সুনজরে পরে যাই। আমার প্রায় লেখাই তারা নির্বাচিত পাতায় স্থান দেয়, যার জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ভাই সত্য বলছি আমি সামু’র কোন ব্লগারের সাথে আজ পর্যন্ত সরাসরি মোলাকাতের সুযোগ পাই নাই, মডুতো দূরের কথা। তাই আমি মনে করি ভালো, গঠনমূলক, ভিন্নধর্মী লিখনির মাধ্যমে মডারেশন প্যানেলের দৃষ্টি আকর্ষণটা জরুরী। আজকের বর্ষপূর্তির দিনে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সামহয়ারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে আমার লেখক স্বত্বার জন্য এতটুকু আঙিনা করে দেয়ার জন্য।
এবার আসি আমার লেখা নিয়ে। আমি আমার কোন লেখাতেই ৫০% এর বেশী নম্বর দিবো না। তারপরও আমি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে গেছি এই এক বছর। তবে বেশী লিখেছি ‘ভ্রমণ’ নিয়ে, প্রায় ২৫টি। লিখেছি কবিতা, গল্প, সাইন্সফিকশন, সাই-ফাই কবিতা, রম্য গল্প, ফিচার, সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে, ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্মৃতিচারণ নিয়ে। বর্তমানে তিনটি সিরিজ লিখছি “বাংলার জমিদার বাড়ী” , “Never Underestimate Anybody: জীবন থেকে নেয়া একগুচ্ছ প্রেরণার গল্প (নিজেকে প্রমাণের গল্প)” এবং “ভ্রমণ সাহিত্যে চোখ বুলাই ”। আরও দুইটা নতুন সিরিজ নিয়ে হাজির হব খুব শীঘ্রই।
শেষে আমার পছন্দের দশটি লেখাঃ
কবিতা - মিথ্যে করে হলেও একবার বল
গল্প - মনে পড়ে রুবি রায় (ছোট গল্প) , আগুন দিনের দুঃস্বপ্ন
সাইন্সফিকশন – গর্ভ (একটি মানবিক সাইন্স ফিকশন)
সাইফাই কবিতা – শেষ হাইপারড্রাইভের পরে
রম্য – কর্পোরেট রোবটের দিনলিপি
ফিচার – ঢাকার পাড়া-মহল্লার নামের ঠিকুজী (মেগা পোস্ট)
ইতিহাস-ঐতিহ্য - ফিরে দেখা - ঢাকার প্রথম ১০টি সিনেমা হল
স্মৃতিচারণ - হারিয়ে যাওয়া শৈশবের মজার খাবারগুলো
সবশেষে সবাইকে ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা আর আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন