নদীমাতৃক বাংলাদেশের জলের রাজ্য দক্ষিণের বৃহত্তর বরিশাল। আর এই বরিশাল জেলার বিখ্যাত জমিদার বাড়ী “লাখুটিয়া জমিদার বাড়ী”। বরিশাল শহর হতে উত্তর দিকে প্রায় আট কিলোমিটার গেলে পড়ে লাখুটিয়া বাজার। শহর হতে এই বাজার যাওয়ার পথে লাখুটিয়া বাজারের কিঞ্চিৎ আগে বাবুরহাট মোড়। বাবুরহাট মোড় থেকে ইট বিছানো পথ ধরে এগিয়ে গেলে পৌঁছে যাবেন একডালা ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লাখুটিয়া জমিদার বাড়ী।
জমিদার বাড়ি নিয়ে ধারাবাহিক লেখা শুরু করার পর এই বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। উন্নতবিশ্বে যে সকল স্থাপনা হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, আমাদের দেশে সেইসকল স্থাপনা পড়ে থাকে অবহেলায়, ক্ষয়ে যায় অস্থি-মজ্জা সকল, ঘুণে ধরে বিচূর্ণ হয় ইতিহাসের পাতা। অপূর্ব সকল স্থাপনা আর নির্মাণশৈলী নিয়ে আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচেতে পড়ে আছে অসংখ্য জমিদার বাড়ি, রাজবাড়ীসহ আরও কত স্থাপনা। আর এই সব স্থাপনার কিছু কথা এই বোকা মানুষটার ছেঁড়া খাতায় লিখে রাখার প্রয়াস হল এই “বাংলার জমিদার বাড়ী” সিরিজ।
জমিদার বাড়ী সিরিজের সব লেখাঃ "বাংলার জমিদার বাড়ী"
তো বাবুরহাট মোড় থেকে ইট বিছানো পথ ধরে এগিয়ে গেলে হাতের ডান পাশে পাবেন লাখুটিয়া’র জমিদারদের মন্দির আর সমাধিসৌধ। এই স্থাপনাগুলোর বেশীরভাগই আটচালা দেউল রীতিতে তৈরি। শিখররীতির কিছু মন্দিরও চোখে পড়বে। কয়েকটি মন্দির এখনো প্রায় অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। খোসালচন্দ্র রায় লিখিত বাকেরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, লাখুটিয়া জমিদার বাড়ী’র জমিদারদের আদিপুরুষ ছিলেন রূপচন্দ্র রায় নামক জনৈক ব্যাক্তি। তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পায় লাখুটিয়া জমিদার বংশ।
পরবর্তীতে রূপচন্দ্র’র পৌত্র রাজচন্দ্র রায়ের সময়কাল হতে লাখুটিয়া’র জমিদারদের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। বর্তমানে যে জমিদার বাড়ীটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা এই রাজচন্দ্র রায়ের সময়ই তৈরি হয়েছিল। জমিদার রাজচন্দ্র তার জমিদার বাড়ী হতে কিঞ্চিৎ দূরে একটি হাটের গোড়াপত্তন করেছিলেন। এই হাটই বাবুরহাট নামে পরিচিত ছিল।
রাজচন্দ্র ছিলেন প্রজা সদ্য় একজন জমিদার। জমিদার শব্দটি শুনলে যেমন অত্যাচারী একজন শাসকের চেহারা ভেসে উঠে, রাজচন্দ্র ছিলেন সম্পূর্ণ তার বিপরীত। তিনি তার জমিদারীর পুরোটা সময় জুড়ে সজাগ ছিলেন প্রজাদের উন্নয়নের দিকে। জেলা শহর বরিশালের সাথে যে সংযোগ সড়ক রয়েছে লাখুটিয়ার, তা এই রাজচন্দ্রের সময় তৈরীকৃত। তার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব ঘটা করে উদযাপিত হত।
লাখুটিয়া জমিদারদের সব থেকে সুন্দর স্থাপনা হলো মন্দিরগুলো। সবচেয়ে উঁচু মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পংকজকুমার রায়চৌধুরী তাঁর স্বর্গত পিতা সুরেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী এবং মাতা পুষ্পরানী রায়চৌধুরীর পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশে এটি তৈরি করেছেন। লোহার দরজা পেরিয়ে জমিদারবাড়ির মূল প্রবেশপথের বাঁ পাশে রয়েছে শান বাঁধানো ঘাটওলা সুন্দর একটি পুকুর। জমিদার বাড়িটি এখন বিএডিসির তত্ত্বাবধানে আছে। বাঁ পাশে বিএডিসির ট্রাক্টর রাখার ঘর আর ডান পাশে তাঁদের গোডাউন আর অফিস কক্ষ। পেছনে আছে পাকা উঠান,বীজ শুকানো হয়। বাড়ির তিন ধারে ধানের জমি।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল যাওয়ার অনেক লঞ্চ মেলে। ভাড়া ২৫০-৬৫০০ টাকা (ডেক-কেবিন)। নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রথমে যেতে হয় শ্মশান মোড়। সেখান থেকে লাখুটিয়া বাবুরহাটে যাওয়ার টেম্পো পাওয়া যায়। ভাড়া ১৫ টাকা।
ইনফো কার্টেসিঃ
বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন-সাইফুল আহসান বুলবুল
বাকেরগঞ্জের ইতিহাস - খোসালচন্দ্র রায়
http://barisalsadar.barisal.gov.bd/node/820717
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৩৫