আমার একটা মানুষ ছিলো।
সে প্রতিবছর একবার উপহার পাঠাতো। প্রথমবার উপহার পেয়ে ভাবলাম, দিনটা হয়তো বিশেষ। কি কারণে বিশেষ খুঁজতে খুঁজতে বুঝলাম, তার কোনো বিশেষ দিনের কথাই মনে থাকে না। সে আমার জন্মদিন অব্দি কখনো মনে রাখে নাই। আমাদের প্রথম পরিচয়ের দিনও ভুলে গেছে। ভালবাসা দিবস কিংবা ঈদ তার কাছে কোনোটাই তেমন আহামরি কিছু না। অথবা সবদিনই তার কাছে বিশেষ ছিলো। জানিনা আসলে। সেইজন্যই বছরজুড়ে অপেক্ষা করতে হতো। সত্য বলতে, এই অপেক্ষারা ছিলো সুখের। যেনো অপেক্ষা করতে পারলেই বাঁচবো।
ত, প্রথমবার তার কাছ থে পেলাম বাক্স ভর্তি শুকনো পাতা। সেই পাতার মাঝে একটি চিরকুট, 'তোমাকে না দেখতে পেয়েই ওরা এমন শুকায়ে গেলো।একবার পেলাম, এক দিস্তা কাগজ। সমস্তটাতেই আমার নাম লেখা। চিরকুটে লেখা ছিলো, 'এত যে তোমারে ডাকি, তবুত তো ফুরায় না।'
যেবার আয়না পাঠালো সেবার লেখা ছিলো 'এইখানে তাকায়ে দেখোতো, সবচেয়ে সুন্দর মানুষটারে দেখতে পাও?' চিরকুট হাতে নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ভালো লাগে। একবার আসলো, একটা ক্যানভাস। হাবিজাবি দাগ টানা। চিরকুটে ছিলো, 'তোমারে আঁকতে গিয়েই শিখলাম, তোমারে যে আঁকা যায় না।
এক প্যাকেট সিগারেট আর একটা দিয়াশলাইয়ের সাথে ছিলো, 'আমাকে ওমন পুড়াইয়া দিতে তুমি জ্বলে উঠবা কবে?'এক শীতে পাঠিয়েছিলো একটা ছাতা। চিরকুট পড়ে জানলাম বৃষ্টি আমাকে একা একা ভিজিয়ে দিতে পারলে তার হিংসা হয়। শীতের দিনে তার মাথায় বৃষ্টি এসে কেনো ভর করেছিলো সেসব কিছুই লিখেনি। তাই অই পুরো শীত কেটেছে গায়ে শীত, মনে বৃষ্টি, আর মাথায় ছাতা নিয়ে।
আরো কি কি যে থাকতো সেইসব উপহারে। একবার ত এক বোতল পানি পাঠালো। চিরকুটে ছিলো 'তোমার নাকি কর্ণফুলী পছন্দ?'
আমরা একসাথে বসে সংবাদ দেখতে গিয়ে মন্ত্রী-আমলা-কামলা নিয়ে হাসি তামাশা করিনি। মায়ের যতটা লুকানো দুঃখ আমার কাছে ছিলো, সেসব আমার কাছেই আজও তেমনি লুকানো। তবু আমি এই মানুষটাকে ভালবাসতাম শৈশবের প্রথম চক-স্লেটের মত বিস্ময় নিয়ে। এই মানুষটা আমাকে ভালোবাসতো কিনা আমি জানিনা। কারণ এইরকম কোনো মানুষ আমার কখনো ছিলো না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:১২