﷽
পরিচয়ঃ তিনি ছিলেন আউলাদে রসূল।
যেই স্বত্তার সৃষ্টির কারনেই বাকী সব সৃষ্টি সেই মহানতম প্রেমাস্পদ হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলি'হি ওয়া সাল্লামের পবিত্র নূরানি রক্ত মুবারাক তাঁর শরীরে প্রত্যেক শীরা ধমনীতে ছিলো সতত প্রবাহমান। সেই রক্ত মুবারাক ধারন করে চলেছেন তিনি অতি আদবে আর মুহাব্বাতে যেই রক্ত মুবারাক ঝরেছিলো উহুদ ময়দানে। বয়েছিলো কারবালার প্রান্তরে। সেই রক্ত মুবারাকই প্রবহমান ছিলো সায়্যিদ আমীমুল ইহসান رحمة الله عليه এর দেহে। নূর নবীজীর সাথে যে তাঁর রক্তের সম্পর্ক। আত্নার বন্ধন।
একটি নাম- সায়্যিদ আমীমুল ইহসান। যে নাম লিল্লাহি বারীতায়ালা দরগাহে কবুল হয়েছে এতো উত্তমভাবে যার সাক্ষী আজ সমগ্র বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন মুজাদ্দেদি। কাইউমে জামান, কামালাতে নবূয়াতে পরিপূর্ণ ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদে আলফে সানী শায়খ আহমাদ ফারুকী সেরহিন্দি রহ এর সিলসিলার, আদর্শের একনিষ্ঠ অনুচারী, অনুগামী, অনুসারী। সেই সিলসিলার সুত্রানুসারে আপনি নিশ্চয় আল্লাহর যিকির করতেন নিরবে, নির্শব্দে। যার নাম ''যিকরে খফি''। না জানি নিরবে নিরবে প্রেমের বন্যা বয়ে দেওয়া সেই যিকির, সেই বক্ষজাত স্বরণের ক্ষরণ খোদার রহমাতের, প্রেমের সাগরে দিয়েছিলো পর্বতসম জোয়ার। না হয় আল্লাহতায়ালার একি প্রেমের বাহানা এই একটি নাম 'সায়্যিদ আমীমুল ইহসান' কি করে স্থান করে নিলো আল্লাহতায়ালার ঘর, মসজিদে। বাংলার প্রায় প্রতিটি মসজিদে স্থান পায় সেই নাম! তাঁর প্রনিত 'নামাজ রোজার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার' যখন ঝুলানো থাকে, তখন সেই সাথে মসজিদে যুক্ত থাকে এর প্রনয়ণকারী, আল্লাহতায়ালার এক অতি প্রিয় আউলিয়ার নাম-'সায়্যিদ আমীমুল ইহসান' মুজাদ্দেদি বারাকাতি رحمة الله عليه।
বিহার থেকে বাংলায়, যুগ পরিক্রমায় যেমন ভাবে এসেছিলো তাঁর পুর্বপূরুষ জাজনীর থেকে দিল্লী। দ্বীন ইসলামের বাণী প্রচার যাদের জীবনের ব্রত তাদের পূন্যময় জীবনালেখ্য যে এরকমই। তাঁরা ছুটে চলেন পশ্চিম থেকে পুবে।উত্তর থেকে বয়ে চলা বাতায়ন হয়ে যায় দখিনা হাওয়া। সেই সিড়ি বইলেন তিনিও। শেষ হলো বাংলায়। তিনি বাংলাকে ভালোবাসলেন, বাংলার মানুষকে ভালোবাসলেন। বাংলার মানুষ তাকে আপন করে নিলো। এমন আপন যে তিনি এই বাংলায় আজ চির শায়িত। এর মাঝে হয়ে গেলো কত কথা, কত স্মৃতি, কত ইতিহাস। আল্লাহতায়ালার মুকাররম বান্দা যারা তারাই আউলিয়া সমাজ। তাদেরই একজন পূর্নচন্দ্র ছিলেন তিনি। সেই আলামত প্রকাশ পায় তাঁর প্রতিটি কর্মে, চেতনায়, ভাবনায়।
নূরনবীজির সুন্নাহর নূরে তাঁর জীবন ছিলো নূরানি। মারেফাতের নূর, ইলমের নূর, বেলায়াতের নূর, কুরআনের নূর, নূরুন আলা নূর। যেন নূরের সমাহার। তাঁর জীবন ছিলো নূর, আলোকবর্তিকা। সেই নূরের আলোয় আলোকিত হয়েছিলো জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম জুমাহ'র আগত নেকবখত মুসল্লিদের অন্তর,মাদ্রাসার আলিয়া তালেবে ইলম দের হৃদয়। সেই আলো ছড়িয়েছে বাংলা, পাক, হিন্দ সহ মিশরের আল আযহারে। বাহারুল ইলম, হিকমাহর আধার, রহস্যের জাম তিনি, যেমন ভাবে অলংকৃত করেছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের মুকাররম আসন সেই সাথে ছিলেন ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা رحمة الله عليه এর একনিষ্ঠ অনুসারী, ছিলেন হানাফি বুজুর্গ, মুফতিয়ে আযম। বাংলার সীমানাছেদ করে আল আযহারে যখন তাঁর প্রনিত হানাফী ফিকহের কিতাব "ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার" ইত্যাদি পঠিত হয় তখন একজন আহনাফ হিসেবে, বাংলাদেশী হিসেবে গর্বে বুকভরে যায় সবার। আশেকে রসূল, প্রথম খতীব, আলিয়ার হেড মাওলানা, মুহাদ্দিস, মুফতি এ আযম, মুজাদ্দেদি বুজর্গ, কত হাক্কানি আলেমগণের শায়খ, মুহিহে সুন্নাহ আউলাদে রসূল কত বহুমাত্রিক তাঁর পরিচয়।সায়্যিদ আমীমুল ইহসান কত অপূর্ব এক নাম। যেন আদবের, আদর্শের, মুহাব্বাতের, চেতনার, জ্ঞানের এক সুউচ্চ তোরণ। এক উজ্জ্বল ইতিহাস। যে নাম শুনলেই আশেক'র হৃদয় অশ্রুসিক্ত হয়। বিনম্র শ্রদ্ধায় জেয়ারতের আরজুতে ব্যথিত অন্তর প্রেমাতাল হয়। যারা আল্লাহর অলি তাদের কোন ক্ষয় নেই, শেষ নেই। তারা চলমান নূরের সফরে, ছুটে চলেন এক সফর শেষে আরেক সফরে।
কলুটলা (প্রাচীন নকশবন্দ মসজিদ) বর্তমানে মুফতিয়ে আজম মসজিদে, যেখানটায় তিনি শায়িত আছেন তাঁর সমাধিসৌধের দরোজার উপরে ঠিক এই কথাই যেন লিখিত আছে "আল্লাহর প্রেমে যাদের অন্তর জীবত থাকে তাঁরা কখনো নি:শেষ হন না। তাঁরা থাকেন পৃথিবীপৃষ্ঠে অস্তিত্বে চিরস্থায়ী হয়ে"
হে আউলাদে রসূল আল্লাহর অলি সায়্যিদ আমীমুল ইহসান আপনাকে সালাম। আর সালাম প্রতিও যারা হেদায়েতের অনুসারী।
প্রভুর ক্ষমা প্রত্যাশী
বান্দা মিসকিন
মাসুক আহমেদ
১০ সাওয়াল, ১৪৩৬ হিজরি
সোমবার।
(তাঁর বেসাল দিবসে)।
الحمد لله رب العالمين