শোয়েব হাসান
১
গভীর রাতে ঘুম ভেংগে যায় আবিরের ।ফোন বাজছে ।স্কিনে তাকিয়ে দেখে প্রাইভেট কল লেখা । নাম্বার দেখা যাচ্ছে না ।বিদেশ থেকে কল আসলে অনেক সময় এমন হয় ।নাম্বার দেখা যায় না।একটু বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে ।
হ্যালো,
ওপাশ থেকে নারী কন্ঠ ভেসে আসে,কেমন আছো আবির ?
আবির কন্ঠটা কার উদ্ধার করার চেষ্টা করে।পরিচিত কেউ হবে।আগে কোথায় জেন শুনেছে কন্ঠটা।অনেক পরিচিত লাগছে।কিন্তু কে মনে পরছে না।
কে আপনি ?
আমাকে চিনতে পারোনি আবির ?
না আমি চিনতে পারছি না।
মনে করার চেষ্টা করতো লক্ষ্মিটি।
আবির চমকে উঠে।লক্ষ্মি বলে তাকে ডাকতো নিশি।নিশি এক সময় তার গার্ল ফ্রেন্ড ছিল ।নিশির কন্ঠের সাথে অদ্ভুত মিল।আবির প্লে বয় টাইপ ছেলে।এক সাথে একাধিক প্রেম করে।শরিরের জন্যই নিখুত অভিনয় করে মেয়েদের সাথে ।ভালোবাসার অভিনয়।সাথে মডেল তকমা বাড়তি সুবিধা দেয়। সে উঠতি মডেল।অখ্যাতই বলা চলে।কিন্তু মেয়েদের কাছে বাকচাতুরি দিয়ে নিজেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে । জামা কাপড়ের মতই মেয়ে বদলায় সে। এত মেয়ের ভিরে তাই নিশির কন্ঠটা তার স্মৃতি থেকে হারিয়েই গেছিল। অন্য একটা কারনও হতে পারে।
নিশি মারা গেছে ,প্রায় চার বছর হয়ে গেল।চার বছর অনেক সময়।সময় বড়ই নিষ্ঠুর। সব স্মৃতি কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলে।আবিরের মত ছেলেরা নিশির মত মেয়েদের মনে রাখে না। রাখতে নেই। আবির তার সাথে নিখুত অভিনয় করেছিল। যখন শরিরের স্বাদ পাওয়া হয়ে গেল।দাম ফুরালো নিশির।আসল রূপ দেখলো আবিরের।লজ্জা অপমানে আত্মহত্যা করে সে।আবির হাফ ছেড়ে বাচে।কিন্তু নিশি কিভাবে ফোন দিবে।সে তো মৃত ।আবির সন্দেহ নিয়ে বলে।।
আপনি নিশি হতে পারেন না, নিশি মারা গেছে ।
আমি মারা গেলেও ,আত্মা ভুলতে পারেনি তোমাকে আবির। না পাওয়ার বেদনা হাহাকার করে ফিরে এসেছে বার বার। আমি ছায়ার মত ছিলাম প্রতি মুহূর্ত তোমার সাথে । আমি দূরে দাঁড়িয়ে স্পর্শ করেছি তোমাকে।তুমি বোঝনি। কিস করেছি টের পাওনি।
নিশির কন্ঠটা কেমন অপার্থিব শুনায় ।গায়ে কাঁটা দেয় সেই শব্দ।আবির ভয় পেতে শুরু করে। তার নাক মুখে ঘাম জমতে থাকে। ওদিকে নিশি বলে যায়।
আবির মারা যাওয়ার পর আমার কষ্ট আরো বেড়ে গেল।জীবিত থাকতে লোক মুখে শুনতাম তোমার অপকর্মের কাহিনী ।মারা যাওয়ার পর সরাসরি দেখতে পেলাম। যেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলাম, সেই কষ্ট কমলো তো না ই আরো বহুগুন বেড়ে গেল। মিতুর সাথে তোমার রগরগে প্রেম।নিপা,রূপাদের ফ্লাটে এনে উদ্দাম সেক্স। আমি দেখতাম ।আমার আত্মা হাহা কার করত। সেই হাহা কারের শব্দে জড় হত অনন্ত কালের সব আত্মারা।তারাও দেখত তোমার অপকর্ম ।আর অভিশাপ দিত।একটা সময় আমার কষ্ট ঘৃনায় পরিনত হল।ঘৃনা নিল প্রতিশোধের রূপ।প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি।চার চারটা বছর ।আজকে সেই দিন । প্রতিক্ষার শেষ দিন।
আবির কিছু বলতে পারছে না।সম্মোহিতের মত ফোন কানে লাগিয়ে বসে আছে। লাইন কাটতে ইচ্ছা করছে না,সে ক্ষমতা ও নেই তার। হুইস্কির বোতল টেনে নেয় কাছে । ঢক ঢক করে চালান করে পুর বোতল পেটে।
আবির ?
কি, সম্মোহিতের মত জবাব দেয় সে ।
আজকের দিনটা কেন বেছে নিলাম প্রতিশোধের জন্য ।তোমার জানতে ইচ্ছা করে না ?
না করে না আমার কিছু জানতে ইচ্ছা করে না। আবির চেচিয়ে উঠে । কিন্তু মুখ দিয়ে সে চিৎকারের শব্দ বের হয় না ।
তোমার মনে আছে আমার জন্মদিনের কথা । অবশ্য তোমার মনে থাকবে কিভাবে।তোমার তো অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড। তাঁদের জন্ম তারিখ মনে রাখতে হয়, উইশ করার জন্য ।তাদের ভিড়ে আমি হারিয়ে গেছি।আমি হারিয়ে গেছি নিয়তির গহ্বরে। আমি মারা যাওয়ার পর আমার লাশটা পর্যন্ত দেখতে এলে না। এলে দেখতে জন্মদিনে দেয়া তোমার সেই নেকলেস তখনো আমার গলায়।লিপ ইয়ারে আমার জন্ম হয়ে ছিল। চার বছর পর পর একবার আসে। চার সংখ্যাটা আমার কাছে অভিশাপ। ঐশ্বরিক ভাল লাগা দিয়ে শুরু যে সম্পর্ক , চারের ঘূর্ণি ঝড়ে শেষ হয় নিদারুন কষ্টের মধ্য দিয়ে।তোমার চোখে হয়তো পরেনি।আমার জন্ম তারিখ আর মৃত্যু তারিখ একই। আমার মৃত্যু দিনেই আমি প্রতিশোধ নিব বলেই অপেক্ষা করেছি চার চারটি বছর।উহ, অপেক্ষার দিন রাত যে কত বেদনার বুঝবে না তুমি, বোঝার ক্ষমতা নেই তোমার। আজ সময় এসেছে, অনন্ত কালের গহ্বর থেকে কাংক্ষিত সময়।
২
দুই দিন পর । আবিরের বড় ভাই দাড়িয়ে আছে একটা সরকারি হাসপাতালের সামনে। সেই হাসপাতাল ।যেখানে নিশির ডেড বডির পোস্ট মর্টেম করা হয়েছিল ।পকেট থেকে আবিরের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বের করে।ডাক্তারের মন্তব্য লেখা ,অত্যধিক মদ্যপানে হার্ট আট্যাক। আবিরের ভাই দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে পা বাড়ায় সামনে । কেউ জানলো না, শুধু রাস্তার ধুলা বালি আর ইট পাথরের দেয়াল সাক্ষী হয়ে থাকল ।এক দিন এই একই জায়গায়,একই সময়ে, এভাবেই নিশির রিপোর্টটা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেছিল তার বড় ভাই...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪০