somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকা...

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট্ট বেলায় কি হতে চাইতাম? মাঝে মাঝে স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই। স্পষ্ট কোন জবাব পাইনা। অর্থনীতিবিদ অন্তত নয়। অতদূরের সালতামামি করছি কেন, ২০০৬ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ক্লাস শুরু করেছি, তখন ও জানতাম না কি হতে চাই জীবনে। ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে যখন ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকলাম তখন নিশ্চিত জানতাম, আর যাই হোক ব্যাংকার হতে চাই না।
মধ্যবিত্তের সাধ আর সাধ্যের আজীবন টানাপোড়েন যখন একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে, তখন ভাবলাম, এবার তবে অন্য কিছু করি, এমন কিছু যার জন্য জীবনের সায়াহ্নে আমাকে আহারে বলতে হবে না। পড়াশোনা আমার বরাবরই প্রিয়, সে নিরস একাডেমিক বই হোক আর সরেস সাহিত্য হোক। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ বলে বিশ্ববিদ্যালয়ও বেছে নিলাম, নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি। চলে এলাম আমেরিকা (যত সহজে বলছি তত সহজে নয় ব্যাপারটা, বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলে যতটা হ্যাপা পোহাতে হয় তার সবটুকুই সয়েছি)। আর গল্পের শুরু এখানেই...
খুব বেশি বন্ধু আমার কখনোই ছিলনা। দেশে বরাবর একা একাই থেকেছি। সবসময় ভেবেছি আরে আমিতো ২০০৬ থেকে ঘরের বাইরে, একা থাকা আমার জন্য কি কোন সমস্যা? তখন বুঝিনি নিজ ভূমে কেউ আসলে সত্যিকারের একা নয়। আমি টের পাইনি কি গভীর মমতা দিয়ে দেশের আলো, বাতাস, মাটি আর চারপাশের পরিচিত অপরিচিত সমস্ত মানুষ আমাকে ঘিরে রেখেছিল। আমেরিকা এসে সত্যিকারের একা হলাম।
যেদিন হেক্টর এয়ারপোর্টে নামলাম, সেদিনের হাহাকারের সাথে কোন শূন্যতার তুলনা চলে না। এখনও মাঝে মাঝে মনে হয় কেন এলাম এখানে? কি আছে এ বিরানভূমে? তখন রীতিমতো ক্লাস শুরু হয়েছে, চার বছর বিরতির পর একাডেমিক পড়াশোনা শুরু করেছি, দেশে পড়েছি মার্কেটিং, ছিলাম ব্যাংকার, আর এখন পড়ছি ইকোনমিকস। কিছুর সাথেই কিছুর মিল পাইনা। ক্লাসে যাই আর আসি, প্রফেসর গটগট করে হোয়াইট বোর্ডে জটিল জটিল সব অংক কষেন আর আমি হা করে থাকি, প্রশ্ন করলে মাথা চুলকাই, কিংবা আবোল তাবোল উত্তর দিই। পড়া পারিনা, চারিদিকের ভয়াবহ শূন্যতা, মা-বাবাকে মিস করা, আজীবন অন্তর্মুখী এই আমার বন্ধু না বানাতে পারার ব্যর্থতা, সব মিলিয়ে যাকে বলে “বেড়াছেড়া” অবস্থা তখন আমার। সমাধান বের করলাম এই রোগের, আর তা হল হাঁটা, প্লেইন অ্যান্ড সিমপল হন্টন। সপ্তাহে চারদিন দুটো করে ক্লাস, যেহেতু পড়ালেখা করছি না তাই হাতে অখণ্ড অবসর, ক্লাস শেষ করে এক এক দিন অনেক দূর পর্যন্ত হাটতে হাটতে চলে যাই, ক্লান্ত হয়ে গেলে পা ছড়িয়ে বসে পড়ি রাস্তার পাশে, আর কাঁদি। একদিনের গল্প বলি। রাত তখন নয়টা সাড়ে নয়টা হবে, বসে আছি ডাউন টাউন বাস টার্মিনালে, লোক সংখ্যা সাকল্যে ৩-৪ জন। খেয়াল করিনি কখন এক মেয়ে এসে আমার পাশে বসেছে। হাই বলতে পাশ ফিরে দেখি, গাঢ় করে লিপস্টিক দেয়া, আঁটসাঁট কাপড় পরা এক স্বর্ণকেশী। মৃদু হেসে হাই বলতেই, সে নিচু স্বরে বলে উঠল তুমি কি আমার জন্য একটা ড্রিঙ্ক কিনতে পার? ক্যালকুলাস, ম্যাট্রিক্স আলজেব্রা না বুঝলেও, এইটা বুঝলাম, স্বর্ণকেশী কি চায়। আমি বললাম, ড্রিঙ্কস কিনতে পারব না, কিন্তু তোমাকে একটা কবিতা শোনাতে পারব। তোমার জন্যই আমাদের এক বিখ্যাত কবি লিখে গিয়েছেন। মেয়ে খুব অবাক হয়ে বলল আমার জন্য কবিতা? আমি মাথা ঝাকিয়ে বললাম- তবু কি তোর ইচ্ছে করে আলগা খোলা শ্যামবাজারে/ সবার হাতে ঘুরতে ঘুরতে বিন্দু বিন্দু জীবনযাপন?*
স্বর্ণকেশী জিজ্ঞেস করল এর অর্থ কি? জানিনা কেমন দুঃখ তখন আমাকে ছুয়ে গিয়েছিল, বাসে উঠতে উঠতে শুধু তীব্র বিষণ্ণ গলায় বললাম, আমি জানি না আমেরিকা...

** কবি- শঙ্খ ঘোষ, কবিতা- ফুলবাজার
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:০৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×