কিছুদিন আগে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরে এলাম সেন্টমার্টিন। তবে এটিকে আমি ট্যুর কম, তিক্ত অভিজ্ঞতাই বলবো। ট্রাভেলারদের সতর্ক করার জন্যও বলতে পারেন কিংবা নিজের ক্ষোভ ঝাড়ার জন্যও বলতে পারেন আজকের এই লেখা।
[বলে রাখা ভালো যে, আমি গত সপ্তাহের ৩ দিনের বন্ধের মধ্যে যাওয়ার ভুলটা করেছিলাম। ]
**** ভ্রমণপূর্ব বুকিং তিক্ততাঃ ****
-----------------------------------------------
১। হোটেল বুকিংঃ প্ল্যান ছিলডিসেম্বরের শেষের দিকে যাওয়ার, তাই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হোটেলের খোঁজ লাগাই। খোঁজ করতে গিয়েই আমার মাথা নষ্ট। অধিকাংশ হোটেলই রুম খালি নেই। বিশেষ করে ভালো হোটেলগুলোর সবই বুকড এবং বেশিরভাগই বুক করে রেখেছে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট কোম্পানিগুলো। প্রায় ১ সপ্তাহ চেষ্টার পর “সেন্টমার্টিন রিসোর্ট/অবকাশ রিসোর্ট” নামক একটি রিসোর্টে দুটো রুম নিতে সক্ষম হই।
২। জাহাজ বুকিংঃ এখানেও একই অবস্থা। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকেই জানতাম যে “কুতুবদিয়া কিংবা কাজলের” স্ট্যান্ডিং/মেইন ডেক নামক টিকেটের কি বিশ্রী অবস্থা।
প্ল্যান করলাম সিটিংগুলোতে যাওয়ার। এই রুটে সিটিং জাহাজ যে কয়েকটি রয়েছে (গ্রীনলাইন, কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন এবং বে-ক্রুজ) সবগুলোতে ফোন দিয়ে আমাকে যা শুনতে হলো তা নিচে তুলে ধরছিঃ
ক) বে-ক্রুজঃ দুঃখিত স্যার। আমাদের কোন সীট ফাঁকা নেই।
খ) গ্রীনলাইনঃ আমরা শুধুমাত্র জাহাজের টিকেট বিক্রি করি না। আপনি যদি আমাদের Up-Down Bus Ticket বুকিং দেন তবে জাহাজের টিকেট দিতে পারবো :O
গ) কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইনঃ আমরা শুধুমাত্র জাহাজের টিকেট বিক্রি করি না। আপনি যদি আমাদের TOTAL TOUR PACKAGE নেন, তবে টিকেট দিতে পারবো :O
বাহ কি সুন্দর! শেষ মেষ, উপায় না দেখে যে হোটেলে বুক দিয়েছি তাদের সাথে যোগাযোগ করলাম। বলা বাহুল্য, তারা ফোন দিতে না দিতেই কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন এর ৯ খানা টিকেট আমার হাতে।
৩। বাস বুকিংঃ যাওয়ার টিকেট পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় নি। শ্যামলী এর একটি বাসেজাহাজের টিকেট পেয়ে গেলাম। ঝামেলা বাধলো রির্টান টিকেটে। কোন বাসেই নাকি টিকেট নাই। যাদের কাছে টিকেট আছে তাদের ভাষ্য অনেকটা এরকমঃ
“আমরা শুধুমাত্র ওয়ান ডাউন টিকেট বিক্রি করি না। আপনি যদি আমাদের Up-Down Bus Ticket বুকিং দেন তবে টিকেট দিতে পারবো :O ”
বাহ কি সুন্দর! শেষ মেষ, উপায় না দেখে বাঙালী হিসেবে যা আমরা করে অভ্যস্ত, তাই করলাম। টিকেটম্যানের হাতে ৫০০ টাকার একটা চকচকে নোট ধরিয়ে দিলাম। ব্যস! সৌদিয়া বাসের ৯ খানা টিকেট হাতে চলে আসলো।
৪। কক্সবাজারে হোটেল বুকিংঃ আমাদের প্ল্যান ছিল সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে ১ রাত কক্সবাজারে থাকবো। ঝামেলা বাধলো এখানেও। যত হোটেলেই ফোন দেই তাদের ভাষ্যঃ
“আমরা শুধুমাত্র ১ রাতের রুম বিক্রি করি না। আপনি যদি 2 NIGHTS ROOM BOOKING দেন তবে রুম দিতে পারবো :O ”
বাহ কি সুন্দর! শেষ মেষ, উপায় না দেখে এক বড় ভাইকে ফোন দিয়ে তার এক অাত্মীয়ের ফ্ল্যাটে আমাদের জায়গা হলো।
এতো গেলো ভ্রমণ শুরুর আগের তিক্ততা। এবার ভ্রমণকালীন তিক্ততাগুলোও একটু বলিঃ
**** ভ্রমণকালীন তিক্ততাঃ ****
-----------------------------------------------
১। বাস নাকি রকেটঃ পূর্বে কথা থেকে বুঝতেই পেরেছেন যে, যাওয়া এবং আসা দুই কোম্পানির বাসযোগে হয়েছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতা মোটামুটি একইরকম।
বাসদ্বয়ের ড্রাইভারসাহেবগণ মনে হয় পূর্বে রকেটের চালক ছিলেন। রাস্তার উপর গর্ত আছে নাকি মানুষ আছে নাকি গাড়ি আছে ওনাদের দেখার মনে হয় সময় নেই। হঠাৎ হঠাৎ ব্রেকগুলো মনে হয় পাইকারী দামে বিক্রি হইছে। চালাও তোমার উড়ালপঙ্খী। বাস কত কিমি বেগে চালাইছে বলতে পারবো না, আপনারা আন্দাজ করে নেনঃ
ক) শ্যামলীঃ ৭:৩৫ এ ঢাকা থেকে ছেড়ে চট্রগ্রাম শহরে পৌছায় রাত ১২:০৩ মিনিটে (মাঝে ২০ মিনিট কুমিল্লায় ব্রেক) এবং সেখান থেকে টেকনাফের ওয়াইং /ওয়াখ্যাং (এরকম কিছু একটা) নামক এলাকায় পৌছায় রাত ৩ টায় (মাঝে ২০ মিনিট কক্সবাজারে ব্রেক ছিল)
খ) সৌদিয়াঃ কক্সবাজার থেকে বাস ছাড়ে রাত ১০:০৫। ঢাকার ফকিরাপুল সকাল ৫:৩৫ (মাঝে ২০ মিনিট কুমিল্লায় ব্রেক)।
২। সিটিং (চিটিং) জাহাজঃ কেয়ারী ক্রজ এন্ড ডাইন এ সিটিং টিকেট থাকলেও টিকেটের কোন নাম্বার ওনারা দেন না। অনেকটা আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সিটের বন্টন হয়। আর যতটুকু শুনেছিলাম এটাতে নাকি স্ট্যান্ডিং যাত্রী নেওয়া হয় না। যাওয়ার সময় যেহেতু আগে-ভাগে উঠে বসেছিলাম তাই বুঝতে পারি নি।
ফেরার পথে একটু দেরীতে জাহাজে উঠলাম (যেহেতু সিটিং টিকেট কেটেছি তাই চিন্তা কম ছিল)। জাহাজে উঠে দেখি ১ বিন্দু সিটও ফাকা নেই। অনেক বলার পর, আমাদের ৯ জনের মধ্যে ৬ জনের জায়গা হলো ঠিকই কিন্তু ৬টি আলাদা জায়গায়। এছাড়া, এ জাহাজে আর যা যা সুবিধা পেয়েছিঃ
- বিশাল একটি রুমের মধ্যে দুটো এসি লাগানো। সেগুলো চলে কিনা সন্দেহ। রুমের মধ্যে হাস ফাস অবস্থা।
- টয়লেটের অবস্থা মাশাল্লাহ, সে আর নাই বা বলি। যদি দম বন্ধ করে টয়লেট করতে পারেন, তবে যেতে পারেন।
- ১ কাপ চায়ের মূল্য ৫০ টাকা। ১ লিটার পানি ৫০ টাকা।
[কুতুবদিয়া আর কাজলের যাত্রীদের যে অবস্থা দেখেছি তাতে আল্লাহর শুকরিয়া আমাদের অবস্থা তাদের চেয়ে ভালো ছিল]
৩। সেন্টমার্টিন হোটেলঃ হোটেলের নাম উপরে বলেই দিয়েছি। হোটেলে প্রবেশের পর রিসিপশন নামক জিনিসটি খুজতেই ১০ মিনিট চলে গেল। অনেকক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম হোটেলের কেন্টিনে ম্যানেজারের টেবিলটিই হোটেলর রিসিপশন। এ হোটেলে আর যা যা সুবিধা পেয়েছিঃ
- ম্যানেজার সাহেব টাকা আর ফোন নিয়ে খুব ব্যস্ত। অনেকক্ষন পরে আমার দিকে শুভদৃষ্টি দিয়ে কোনরকম দুটো চাবি দিয়ে দিলেন। বলা ভালো, আমরা একটি ডরমিটরী নিয়ে ছিলাম। তিনি আমাকে দিলেন দুটো নরমাল রুমের চাবি। তার দৃষ্টি আকষর্ণের পর চাবি বদল হলো।
- রুমে প্রবেশের পর চোখ আমার ছানাবড়া। পার নাইট ২৪০০ টাকা দিয়া এই রকম রুম?
- রুম পরিষ্কার করা হয় নি। পুরো ফ্লোর জুড়ে জুতার ময়লা। ম্যানেজারকে বলার পর উনি রুম বয় খুজে পাচ্ছেন না। ফোনে একজনকে গালি দিয়ে রুম পরিষ্কার করতে পাঠালেন। বলে রাখা ভালো, রুম থেকে চেকআউট হয় সবাই ১২ টায়। আমরা হোটেল উঠেছি ১টারও পরে। এতক্ষনে রুম পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা।
- গোসলখানায় ২৪ ঘন্টা টাখনু পরিমাণ পানি জমে থাকে।
- বেসিন কতদিন যাবত ধোয়া হয় নি বলতে পারবো না।
- টয়লেটের ওয়াল জায়গায় জায়গায় ফাটা এবং একটু একটু ফাকা। সেখানে দিয়ে রাতের বেলা তেলাপোকার আগমন ছিল চোখে পড়ার মত।
- রুমের অপরদিকে একটি মাত্র জানালা এবং তারও আবার কাচ ভাঙা। সেখানে পর্দা নেই।
- ২ রাত ছিলাম। কোন রুম বয় এসে জিজ্ঞেসও করে নি কিছু লাগবে কিনা। রাতের ১০টায় সাহেবদেরকে ডেকে এনে ১ বোতল পানি এবং ১টি কয়েল নিতে পেরেছিলাম। সাবান/শ্যাম্পু দিয়ে যাওয়ার কথা তারা মনে হয় ভুলেই গিয়েছিলেন।
৪। সেন্টমার্টিন অভিজ্ঞতাঃ এ নিয়ে ৩ বার সেন্টমার্টিন গিয়েছি। কিন্তু এবার সেন্টমার্টিন গিয়ে যা দেখেছি তা নিচের ছবি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে আশা করি।
আরো অনেক কিছু বলার ছিল। সেগুলো লেখতে গেলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবি। যতটুকু সবার নজরে না আনলেই নয়, ততটুকুই লেখলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১