একটু আগে একটি শীর্ষ দৈনিকে “পাকিস্তান সফর নিয়ে সিদ্ধান্ত এ সপ্তাহেই” শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হলো। সেখানে আমাদের বিসিবির শ্রদ্ধেয় সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা দল পাকিস্তান সফর করার পর সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিসিবি এখন পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে আইসিসির পর্যবেক্ষণ জানতে চায়। তা ছাড়া বাংলাদেশ দল পাকিস্তান সফরে গেলে ম্যাচ কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আইসিসির সিদ্ধান্ত কী হবে, বিসিবি জানতে চায় সেটাও। ‘এই জিনিসগুলো জানার পরই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাব। আমার ধারণা, এই ২-৪ দিনের মধ্যেই আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব’—বিবিসি বাংলাকে বলেছেন বিসিবি সভাপতি।
তিনি আরোও বলেন, পাকিস্তান যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, ‘নিরাপত্তার ইস্যুটা সবার আগে। উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তবে বলেছেন, বিসিবি থেকে যেহেতু যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে বাংলাদেশ দলের সফরটা করা উচিত, ‘আমরা একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমি শুনেছি, আইসিসির মিটিংয়েও নাকি আলোচনা হয়েছে যে আমরা পাকিস্তানে যাব। কাজেই একটা প্রতিশ্রুতি যখন আমরা দিয়েছি এবং যদি আমরা মনে করি পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাহলে আমি মনে করি আমাদের যাওয়া উচিত।’ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অংশ। প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটা না রাখলে ভবিষ্যতের জন্য বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কা নাজমুল হাসানের।
মানলাম আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু একটি প্রতিশ্রুতি কী ১৪-১৫টি মূল্যবান জীবনের চেয়ে বড় হয়ে গেল??? আজকেও পাকিস্তানে এক মন্ত্রীকে মেরে ফেলেছে বোমা মেরে। গত সপ্তাহে তাদের বিমান বন্দরে রকেট হামলা হয়েছে। যে দেশে ডাক্তার, মন্ত্রীরাই নিরাপদ না, সেখানে বাংলাদেশি খেলোয়াড়'রা কিভাবে নিরাপদ হবে? যে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী নিরাপত্তাহীন তারা খেলোয়াড়দের কি নিরাপত্তা দিবে? যে দেশটি প্রেসিডেন্সি সিকিউরিটি দিয়ে তারেক বেঁনজির ভূট্টোকে বাঁচাতে পারেনি, যেখানকার আর্মি ও পুলিশের হেডকোয়ার্টারে বোমা হামলা হয়, পোলিও রোগ নির্মূল কর্মীদের যারা মেরে ফেলে, যে দেশে শুধুমাত্র এই ২০১২ সালে বোমা হামলায় মারা গেছে প্রায় ৬০০০ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কোন সাহসে, কোন ভরসায়, কিসের লাভের জন্য আমাদের এতগুলো সোনার ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছি? একটি ওয়ানডে এবং একটি টি-টোয়েন্টি দিয়ে আমরা কী সফলতা অর্জন করবো? তাদের খেলোয়াড়রা বিপিএল না খেললে আমাদের কী এমন ক্ষতি হবে?? সেই ক্ষতিটি কী সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, মাশরাফি, নাসির, রাজ্জাক, সোহাগ, শফিউলদের থেকে দাম বেশি? এদের একজনের কিছু হলে পারবেন আপনি এর ক্ষতিপূরণ দিতে? পাকিস্তান পারবে এর ক্ষতিপূরণ দিতে?
আমাদের স্বাধীনতার পরে যদি আমরা বাঙ্গালিরা এক হতে পারি তা এই ক্রিকেট এর মাধ্যমে হতে পারি, আমাদের হৃদয়ে দেশের জন্য যদি একটু মমতা বোধ জন্মে তা এই ক্রিকেটেরই ফল, তাই যেখানে অন্য দেশের খেলোয়াড়রা নিরাপত্তার কারণে সে দেশে যাচ্ছে না সেখানে আমরা কেন যাব? আর পাকিস্তান আমাদের এমন কোন বন্ধু প্রতিম দেশ না সেখানে খেলতে যেতেই হবে।
পাকিস্তানের সাথে যদি এতই খেলার শখ হয় তবে তাদের ডাকেন আমাদের দেশে, ৬৪ জেলায় ৬৪টি ওয়ানডে হোক। আপত্তি নাই। কিন্তু আমাদের ছেলেরা অই মৃত্যুপুরীতে যাবেনা। আপনার দুইটা পায়ে পড়ি তাদেরকে পাঠাবেন না। একটি প্রতিশ্রুতি ভাঙেন। এটি ১৬ কোটি মানুষের মনের দাবি। এতে যদি বিসিবির ক্ষতি হয় আমরা ১৬ কোটি মানুষ ১টাকা করে দিলেও ১৬কোটি টাকা হয়ে যাবে। তবুও আপনি আমাদের নায়ক, আমাদের গর্ব, আমাদের প্রাণগুলোকে পাকিস্তানে যেতে দিয়েন না। এই ক্ষতিপূরণ পূরণীয় না, পূরণীয় না। এই ক্ষতিপূরণের বোঝা পাকিস্তান নিবে না, এই বোঝা জাতিসংঘ নিবে না, এই বোঝা আইসিসি নিবে না, এই বোঝা ভারত, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া কেউ নিবে না। এই বোঝা বাংলাদেশকে নিতে হবে, ১৬ কোটি মানুষকে নিতে হবে। এত ভারি বোঝা নেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই নাজমুল হাসান সাহেব। আমাদের অনুরোধটি একটু রাখুন।