শুভ জন্মদিন শেখ কামাল। আজ ৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মদিন। সঙ্গীতপ্রেমী, দক্ষ সংগঠক, ক্রিকেটার, দারুণ বোলার, মুক্তিযোদ্ধা, জেনারেল ওসমানীর এডিসি এমন দারুন সব পরিচয়ের বদলে এর ওর কাছ থেকে শুনে তরুণ প্রজন্মের যেসব ছেলেমেয়েরা শেখ কামালকে ব্যাংক ডাকাত হিসেবে জানেন তাদের জন্য কয়েকটি কথা।
না আমি আওয়ামী লীগের কেউ নই, বরং নানা সময়ে আমি আওয়ামী লীগের সমালোচনাই বেশি করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। শেখ কামালের মতো একজন সংগঠককে কেন ব্যাংক ডাকাত হিসেবে প্রচারণা করা হয় সেটি জানতেই একটু পড়াশোনা করে গত বছর এই লেখাটি লিখেছিলাম। এ বছর আরেকটু আপডেট করলাম। যেহেতু সে সময় আমার জন্ম হয়নি কাজেই তথ্যসূত্র দিয়ে লেখা।
শুরুতেই ব্যাংক ডাকাতি প্রসঙ্গ। শেখ কামাল সম্পর্কে অসংখ্য গুজব ছড়ানো হয়েছে। এর বেশিরভাগই করেছিলো সে সময়ের জাসদ যাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। একজন তো আজকে আবার মন্ত্রী যিনি শেখ কামাল আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন। তারাই শেখ কামালকে ব্যাংক ডাকাত বানিয়েছিলেন, অথচ বাস্তব ঘটনা হলো তিনি সেদিন ব্যাংক ডাকাতি ফেরাতে গিয়েছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কোন রাষ্ট্রপ্রধানের ছেলে যদি টাকা আয় করতে চান তাকে টাকা দিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব নেই সেখানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় তাকে কেন জড়ানো হলো? চলুন শুনি সেই কথা।
১৯৭৪ সালের যে রাতে এই ঘটনা ঘটে সে রাতে সদ্য গঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্রের ফকিরেরপুলে অবস্থানকারী দুজন খেলোয়াড়ের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির খবর পান শেখ কামাল। পুলিশ সুপার বীরবিক্রম মাহবুব আলমকে তিনিই সেই খবর দেন। এরপর পুলিশ সুপার মাহবুব আলম সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে, দুজনকে পায়ে গুলিবিদ্ধ করে। শেখ কামাল কিন্তু খবর দিয়েই বসেন থাকেননি। দুষ্কৃতকারীদের ধরার জন্য তিনি মতিঝিল এলাকায় ছুটে যান তরুণ সাহসী কয়েকজন বন্ধুকে।
২০১২ সালে প্রথমা থেকে প্রকাশিত এ বি এম মুসার মুজিব ভাই বইয়ের ৪৩ পৃষ্ঠায় এবিএম মুসা এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি তখন মনিং নিউজের সম্পাদক। মতিঝিলে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আমি একজন রিপোর্টার পাঠিয়েছিলাম। আশপাশের লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের এই বর্ণনা শুনে আমাদের পত্রিকায় একটি ছোট্ট নিউজও ছাপা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বিরোধীদের কুৎসায় চাপা পড়ে যায় সত্য ঘটনা
শেষ জীবনে এ বি এম মুসা আওয়ামী লীগের অন্যায় কাজগুলোর প্রচণ্ড সমালোচনা করতেন। আর তিনি তথ্য প্রমান দিয়েই ইতিহাস লিখেছেন। (পৃষ্ঠা ৪৩, মুজিব ভাই, লেখক এ বি এম মুসা। প্রকাশক-প্রথমা, ২০১২)।
এ বি এম মুসাকে নিয়ে যাদের আপত্তি তারা এক্ষেত্রে সর্বজনশ্রদ্ধেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর কথা বিশ্বাস করতেন পারেন। সারাজীবন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা পেশাদার এই সেনা কর্মকর্তা তাঁর এক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষ্য বইটির ৬৪ পৃষ্ঠায় সিরাজ শিকদার এবং ৬৫ পৃষ্ঠায় শেখ কামালের এই ঘটনা নিয়ে লিখেছেন। তিনি তখন ৪৬ বিগ্রেডের অধিনায়ক।
মইনুল হোসেন লিখেছেন, শেখ কামাল সেই রাতে একটি গাড়িতে তাঁর সাত বন্ধুকে নিয়ে টহলে বেরিয়েছিলেন। সেদিন রাতে আবার সিরাজ শিকদার শহরে এসে হামলা চালাতে পারে এমন গুজব ছিল। টহলরত স্পেশাল পুলিশের একটি দল তাই একটি মাইক্রোবাস দেখতে পেয়ে কোন সতর্ক সংকেত না দিয়েই অতর্কিতে গুলি চালায়। এতে কামালসহ তাঁর ছয় বন্ধু আহত হন। পরে পুলিশই তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে পিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কামালের সঙ্গে আমার পরচিয় ছিল এবং আমি তাকে খুব ভালোভাবে জানতাম। সকালে বিজয়দিবসের প্যারেড শেষে বিকেলে আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে যাই। (পৃষ্ঠা ৬৫, এক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষ্য, মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন, প্রকাশক-মাওলা ব্রার্দাস)।
যারা ইতিহাস কিংবা ইতিহাসের বইয়ে বিশ্বাস করেন না তাদের বলি সেই রাতে শেখ কামালের সাথে ছিলেন তাঁর বন্ধু এখন বিএনপির নেতা ইকবাল হাছান টুকু। কারো সেই রাতের ঘটনা নিয়ে সন্দেহ থাকলে তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে। কারণ, যে জিপটিতে শেখ কামালরা দুষ্কৃতকারীদের ধরতে গিয়েছিলেন সেটা ছিল টুকুর এবং সেদিন জিপটি টুকুই ড্রাইভ করেছিলেন। এছাড়াও শেখ কামালের সিনিয়র বন্ধু বর্তমানে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদও সেদিন ওই জীপে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলেও সেই রাতের জানা যাবে।
এবার আরেকটা স্মৃতিচারণে আসি। ১৯৭২ সালে ঢাকা আইডিয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুল ইজদানী খান বর্তমানে সুইডেন প্রবাসী। তিনি শেখ কামাল ভাইকে যেমন দেখেছি এবং ১৫ আগস্টের স্মৃতি শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে শেখ কামালকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান নেন। তখন তিনিসহ ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কিছু তরুণ নেতা ৩২ নাম্বারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেন, কামাল ভাই আমাদের নেতা। কমাল ভাই সম্পর্কে আপনি যা জানতে পেরেছেন সেগুলো তার কোনো সততা নেই। এগুলো জাসদের মিথ্যা প্রচারণা ছাড়া। তাকে বিদেশে পাঠাবেন না। বঙ্গবন্ধু সেদিন এই তরুণ নেতাদের দাবি মেনেছিলেন। মহিবুল ইজদানী খান অবশ্য আফসোস করে বলেন, সেদিন কামাল ভাই বিদেশে চলে গেলে হয়তো ১৫ আগস্টে তাকে শহীদ হতো না।
শুরুতেই বলেছি ১৯৪৯ সালে শেখ কামালের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই শেখ কামাল ছিলেন প্রচন্ড ক্রীড়ানুরাগী। শাহীন স্কুলে পড়ার সময় স্কুল একাদশে নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল খেলতেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে নিয়মিত খেলেছেন। দীর্ঘকায় শেখ কামালের সেই চমৎকার 'বোলিং' ছিলো চোখে পড়ার মতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ কামাল শুধু খেলোয়াড় হিসাবে নয়, ক্রীড়া সংগঠক হিসাবেও আত্মপ্রকাশ করেন। বন্ধুদের নিয়ে ধানমন্ডির সাতমসজিদ এলাকায় তৈরী করেন 'আবাহনী ক্রীড়াচক্র'। ফুটবল খেলায় তিনি শুধু বাংলাদেশ কেন, গোটা উপমহাদেশেই পশ্চিমা স্টাইলে বিপ্লব এনেছিলেন। সেই ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্ট কে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দুরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশী কোচ ছিলোনা।
জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে চাইলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে একবার যেতে পারেন। ওই বাড়ির ছাদে শেখ কামালের কক্ষটির সামনে গেলে দেখবেন পিয়ানো, সরোজসহ নানা বাদ্যযন্ত্র, খেলাধুলার বিভিন্ন পুরস্কার আর বড় করে বিয়ের একটা ছবি বাঁধাই করা। দরজায় লেখা তথ্য পড়তে গিয়ে জানবেন শেখ কামাল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্পন্দন নামে একটি ব্যাণ্ড দল গড়েছিলেন।
ফিডব্যাকের সাবেক ভোকাল ও বর্তমানে ঢাকা বাণ্ডের প্রধান মাকসুদ বলেছেন, আযম খান যখন উচ্চারণ ব্যান্ড গড়লেন তখন তার সঙ্গী ছিলেন ফিরোজ সাঁই। এই ব্যাণ্ডের বিপরীতে শেখ কামালের অনুগ্রহে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে স্পন্দন গানের দল যার ভোকাল ছিলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু, মমতাজ। শেখ কামালের নির্দেশনায় তারা বাংলাদেশের বিভিন্নস্থান থেকে লোকজগান সংগ্রহ করতেন। এরপর সেগুলোতে আধুনিক যুগের ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যাবহার করে গানগুলো জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছিলেন।
আমার খুব আফসোস লাগে এমন একজন সঙ্গীতপ্রেমী, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন দেশপ্রেমিক, একজন মানবিক, একজন ক্রীড়াপ্রেমীকে কীভাবে যুগের পর যুগ অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা তরুণ প্রজন্ম ঠিকই খুঁজে নেবো সত্য ইতিহাস।
শুভ জন্মদিন শেখ কামাল। যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন। জয় বাংলা।শুভ জন্মদিন শেখ কামাল। আজ ৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মদিন। সঙ্গীতপ্রেমী, দক্ষ সংগঠক, ক্রিকেটার, দারুণ বোলার, মুক্তিযোদ্ধা, জেনারেল ওসমানীর এডিসি এমন দারুন সব পরিচয়ের বদলে এর ওর কাছ থেকে শুনে তরুণ প্রজন্মের যেসব ছেলেমেয়েরা শেখ কামালকে ব্যাংক ডাকাত হিসেবে জানেন তাদের জন্য কয়েকটি কথা।
না আমি আওয়ামী লীগের কেউ নই, বরং নানা সময়ে আমি আওয়ামী লীগের সমালোচনাই বেশি করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। শেখ কামালের মতো একজন সংগঠককে কেন ব্যাংক ডাকাত হিসেবে প্রচারণা করা হয় সেটি জানতেই একটু পড়াশোনা করে গত বছর এই লেখাটি লিখেছিলাম। এ বছর আরেকটু আপডেট করলাম। যেহেতু সে সময় আমার জন্ম হয়নি কাজেই তথ্যসূত্র দিয়ে লেখা।
শুরুতেই ব্যাংক ডাকাতি প্রসঙ্গ। শেখ কামাল সম্পর্কে অসংখ্য গুজব ছড়ানো হয়েছে। এর বেশিরভাগই করেছিলো সে সময়ের জাসদ যাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। একজন তো আজকে আবার মন্ত্রী যিনি শেখ কামাল আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন। তারাই শেখ কামালকে ব্যাংক ডাকাত বানিয়েছিলেন, অথচ বাস্তব ঘটনা হলো তিনি সেদিন ব্যাংক ডাকাতি ফেরাতে গিয়েছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কোন রাষ্ট্রপ্রধানের ছেলে যদি টাকা আয় করতে চান তাকে টাকা দিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব নেই সেখানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় তাকে কেন জড়ানো হলো? চলুন শুনি সেই কথা।
১৯৭৪ সালের যে রাতে এই ঘটনা ঘটে সে রাতে সদ্য গঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্রের ফকিরেরপুলে অবস্থানকারী দুজন খেলোয়াড়ের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির খবর পান শেখ কামাল। পুলিশ সুপার বীরবিক্রম মাহবুব আলমকে তিনিই সেই খবর দেন। এরপর পুলিশ সুপার মাহবুব আলম সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে, দুজনকে পায়ে গুলিবিদ্ধ করে। শেখ কামাল কিন্তু খবর দিয়েই বসেন থাকেননি। দুষ্কৃতকারীদের ধরার জন্য তিনি মতিঝিল এলাকায় ছুটে যান তরুণ সাহসী কয়েকজন বন্ধুকে।
২০১২ সালে প্রথমা থেকে প্রকাশিত এ বি এম মুসার মুজিব ভাই বইয়ের ৪৩ পৃষ্ঠায় এবিএম মুসা এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি তখন মনিং নিউজের সম্পাদক। মতিঝিলে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আমি একজন রিপোর্টার পাঠিয়েছিলাম। আশপাশের লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের এই বর্ণনা শুনে আমাদের পত্রিকায় একটি ছোট্ট নিউজও ছাপা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বিরোধীদের কুৎসায় চাপা পড়ে যায় সত্য ঘটনা।
শেষ জীবনে এ বি এম মুসা আওয়ামী লীগের অন্যায় কাজগুলোর প্রচণ্ড সমালোচনা করতেন। আর তিনি তথ্য প্রমান দিয়েই ইতিহাস লিখেছেন। (পৃষ্ঠা ৪৩, মুজিব ভাই, লেখক এ বি এম মুসা। প্রকাশক-প্রথমা, ২০১২)।
এ বি এম মুসাকে নিয়ে যাদের আপত্তি তারা এক্ষেত্রে সর্বজনশ্রদ্ধেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর কথা বিশ্বাস করতেন পারেন। সারাজীবন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা পেশাদার এই সেনা কর্মকর্তা তাঁর এক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষ্য বইটির ৬৪ পৃষ্ঠায় সিরাজ শিকদার এবং ৬৫ পৃষ্ঠায় শেখ কামালের এই ঘটনা নিয়ে লিখেছেন। তিনি তখন ৪৬ বিগ্রেডের অধিনায়ক।
মইনুল হোসেন লিখেছেন, শেখ কামাল সেই রাতে একটি গাড়িতে তাঁর সাত বন্ধুকে নিয়ে টহলে বেরিয়েছিলেন। সেদিন রাতে আবার সিরাজ শিকদার শহরে এসে হামলা চালাতে পারে এমন গুজব ছিল। টহলরত স্পেশাল পুলিশের একটি দল তাই একটি মাইক্রোবাস দেখতে পেয়ে কোন সতর্ক সংকেত না দিয়েই অতর্কিতে গুলি চালায়। এতে কামালসহ তাঁর ছয় বন্ধু আহত হন। পরে পুলিশই তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে পিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কামালের সঙ্গে আমার পরচিয় ছিল এবং আমি তাকে খুব ভালোভাবে জানতাম। সকালে বিজয়দিবসের প্যারেড শেষে বিকেলে আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে যাই। (পৃষ্ঠা ৬৫, এক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষ্য, মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন, প্রকাশক-মাওলা ব্রার্দাস)।
যারা ইতিহাস কিংবা ইতিহাসের বইয়ে বিশ্বাস করেন না তাদের বলি সেই রাতে শেখ কামালের সাথে ছিলেন তাঁর বন্ধু এখন বিএনপির নেতা ইকবাল হাছান টুকু। কারো সেই রাতের ঘটনা নিয়ে সন্দেহ থাকলে তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে। কারণ, যে জিপটিতে শেখ কামালরা দুষ্কৃতকারীদের ধরতে গিয়েছিলেন সেটা ছিল টুকুর এবং সেদিন জিপটি টুকুই ড্রাইভ করেছিলেন। এছাড়াও শেখ কামালের সিনিয়র বন্ধু বর্তমানে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদও সেদিন ওই জীপে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলেও সেই রাতের জানা যাবে।
এবার আরেকটা স্মৃতিচারণে আসি। ১৯৭২ সালে ঢাকা আইডিয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুল ইজদানী খান বর্তমানে সুইডেন প্রবাসী। তিনি শেখ কামাল ভাইকে যেমন দেখেছি এবং ১৫ আগস্টের স্মৃতি শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে শেখ কামালকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান নেন। তখন তিনিসহ ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কিছু তরুণ নেতা ৩২ নাম্বারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেন, কামাল ভাই আমাদের নেতা। কমাল ভাই সম্পর্কে আপনি যা জানতে পেরেছেন সেগুলো তার কোনো সততা নেই। এগুলো জাসদের মিথ্যা প্রচারণা ছাড়া। তাকে বিদেশে পাঠাবেন না। বঙ্গবন্ধু সেদিন এই তরুণ নেতাদের দাবি মেনেছিলেন। মহিবুল ইজদানী খান অবশ্য আফসোস করে বলেন, সেদিন কামাল ভাই বিদেশে চলে গেলে হয়তো ১৫ আগস্টে তাকে শহীদ হতো না।
শুরুতেই বলেছি ১৯৪৯ সালে শেখ কামালের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই শেখ কামাল ছিলেন প্রচন্ড ক্রীড়ানুরাগী। শাহীন স্কুলে পড়ার সময় স্কুল একাদশে নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল খেলতেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে নিয়মিত খেলেছেন। দীর্ঘকায় শেখ কামালের সেই চমৎকার 'বোলিং' ছিলো চোখে পড়ার মতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ কামাল শুধু খেলোয়াড় হিসাবে নয়, ক্রীড়া সংগঠক হিসাবেও আত্মপ্রকাশ করেন। বন্ধুদের নিয়ে ধানমন্ডির সাতমসজিদ এলাকায় তৈরী করেন 'আবাহনী ক্রীড়াচক্র'। ফুটবল খেলায় তিনি শুধু বাংলাদেশ কেন, গোটা উপমহাদেশেই পশ্চিমা স্টাইলে বিপ্লব এনেছিলেন। সেই ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্ট কে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দুরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশী কোচ ছিলোনা।
জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে চাইলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে একবার যেতে পারেন। ওই বাড়ির ছাদে শেখ কামালের কক্ষটির সামনে গেলে দেখবেন পিয়ানো, সরোজসহ নানা বাদ্যযন্ত্র, খেলাধুলার বিভিন্ন পুরস্কার আর বড় করে বিয়ের একটা ছবি বাঁধাই করা। দরজায় লেখা তথ্য পড়তে গিয়ে জানবেন শেখ কামাল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্পন্দন নামে একটি ব্যাণ্ড দল গড়েছিলেন।
ফিডব্যাকের সাবেক ভোকাল ও বর্তমানে ঢাকা বাণ্ডের প্রধান মাকসুদ বলেছেন, আযম খান যখন উচ্চারণ ব্যান্ড গড়লেন তখন তার সঙ্গী ছিলেন ফিরোজ সাঁই। এই ব্যাণ্ডের বিপরীতে শেখ কামালের অনুগ্রহে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে স্পন্দন গানের দল যার ভোকাল ছিলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু, মমতাজ। শেখ কামালের নির্দেশনায় তারা বাংলাদেশের বিভিন্নস্থান থেকে লোকজগান সংগ্রহ করতেন। এরপর সেগুলোতে আধুনিক যুগের ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যাবহার করে গানগুলো জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছিলেন।
আমার খুব আফসোস লাগে এমন একজন সঙ্গীতপ্রেমী, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন দেশপ্রেমিক, একজন মানবিক, একজন ক্রীড়াপ্রেমীকে কীভাবে যুগের পর যুগ অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা তরুণ প্রজন্ম ঠিকই খুঁজে নেবো সত্য ইতিহাস।
শুভ জন্মদিন শেখ কামাল। যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:১৬