বিশ্বজিতের ঘটনার পর গত কয়েকদিন ধরে দেশে বেশ একটা বিতর্কের উদ্ভব হয়েছে। সাংবাদিকসহ অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কেন সেদিন সাংবাদিক বা সাধারণ কোন মানুষ বিশ্বজিতকে হাসপাতালে নিলো না। যারা এই প্রশ্ন করছেন সবার আগে তাকে আমার প্রশ্ন-নিজের বুকে হাত দিয়ে বলুন তো সেদিন বাহাদুর শাহ পার্কে আপনি থাকলে আপনি কি বিশ্বজিতকে বাঁচানোর চেষ্টা কিংবা তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করতেন? আমি জানি ৯৯.৯৯ ভাগই করতেন না।
আমি আমার ব্যাক্তিগত জীবন থেকে এই অভিজ্ঞতা জানি। আমি দেখেছি রাস্তায় আহত হয়ে কেউ পড়ে থাকলে কেউ তাকে হাসপাতালে নিতে আসে না। এক্ষেত্রে রিকশাওয়ালারা কিংবা কোন দিনমজুর এগিয়ে আসে। কারণ তার আমাদের মতো দলীয় পরিচয়, ভবিষ্যত পরিনত এসব কিছু ভাবতে হয় না। আমরা ভুলে যাই সব পরিচয়ে আগে আমরা মানুষ এবং মানুষের কাজ বিপদে আরকেজনকে সাহায্য করা।অনেকেই একটা প্রশ্ন করেছেন, সেদিন কোন সাংবাদিক কেন বিশ্বজিতকে বাঁচাতে গেলো না? তাহলে কি আগে সাংবাদিক না আগে মানুষ? আমার উত্তরটা হলো, অবশ্যই আগে মানুষ। কিন্তু বিষয়টা যতো সহজ বলা যায় করা ঠিক ততোটাই কঠিন।
বিশ্বজিতের ঘটনায় অবশ্য তাকে চাইলেই সাংবাদিকরা হাসপাতালে নিতে পারতো সেটা ঘটনার পরেরদিন কিংবা এখন মনে হচ্ছে। কিন্তু যখন ঘটনা ঘটেছে সাংবাদিকরা তখন জানে না তার নাম বিশ্বজিত না অন্য কিছু। তারা জানে না সে সাধারণ মানুষ না কোন দলের কর্মী। ঘটনা যদি এমন হতো বিশ্বজিত আসলেই শিবিরের কর্মী হতো তখন যদি তাকে রক্ষা করতে যেতো কোন সাংবাদিক যেতো তাহলে সরকারি দলের কর্মীরাই ওই সাংবাদিককে শিবির মনে করে ধোলাই দিতো।
আবার জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব চলাকালে যদি আপনি হত কোন সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করতে যান তাহলে শিবির আপনাকে পেটাবে। বিষয়টা অনেক জটিল। চট্টগ্রামের এক ঘটনায় হরতালের দিনে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর শিবিরবিরোধী একটি ছেলে জানতে পারে আহত লোকটি শিবিরের কর্মী এবং পরে বিষয়টি নিয়ে তাকে অনেক কথা শুনতে হয়।
তবে সবকিছুর পরেও আমার মনে হয়, সবার আগে মানুষ এই নীতি মেনে চলা উচিত এবং সেটিকে আমাদের সংস্কৃতিতে পরিনত করা উচিত। আমি মানুষ, কাজেই শত্রু হলেও আমাকে সবার আগে তাকে বাচাঁতে হবে কারণ তিনিও মানুষ। কিন্তু আমি জানি বেশিরভাগ মানুষ এই নীতি ফলো করে না। বাংলাদেশে এতো ঘটনা ঘটেছে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পথচারী, রিকশাওয়ালা ছাড়া আর কেউ তাকে উদ্ধার করে নাই। আমি নিজে দেখেছি-রাস্তায় আহত হয়ে, গুলি খেয়ে, দুর্ঘটনায় পড়ে কাতরাচ্ছে অনেক মানুষ। কিন্তু কেউ তাকে হাসপাতালে না নিয়ে তামশা দেখছে। শেষপর্যন্ত হয়তো পুলিশ বা কোন রিকশাওয়ালাই তাকে হাসপাতালে নিয়েছে। সময় এসেছে মানুষ হওয়ার।