রাত ১০ টার দিকের ঘটনা। অফিস থেকে চলে যাবো। ঠিক সেই মুহুর্তে প্রিয় চেহারার মানুষটি। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। পাঞ্জাবি পরে এসেছেন স্যার। অন দিনের মতো হাসিমুখ নয়, একটু বিষন্নই দেখালো স্যারকে। অবশ্য বিষন্ন দেখানোরই কখা। আমাদের মাননীয় সাংসদরা যে ভাষায় স্যারকে আক্রমন করেছেন।
আমাদের সাংসদদের দাবি, আলোকিত মানুষ গড়ার এই কারিগর নাকি তাদের চোর বলেছেন। আর তাই স্যারকে সংসদে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। নোংরা ভাষায় করেছেন সমালোচনা।
যাই হোক স্যারকে অফিসে বসালাম। জানতে চাইলাম কি হয়েছে? স্যার জানালেন, টিআইবির যে অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে সেই অনুষ্ঠানে তিনি সাত মিনিট বক্তব্য রেখেছেন। কিন্ত একবারের জন্যও তিনি সাংসদ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। এরপর স্যার আমাকে বক্তব্যের রেকর্ড দেন। আমি পুরো বক্তব্য শুনি।
পাঠক এবং আমাদের মাননীয় সাংসদদের বলছি, সাত মিনিটের ওই বক্তব্যের শুরুতে স্যার দুর্নীতি কি তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘চোর যে চুরি করে, ডাকাত যে ডাকাতি করে সেটি কি দুর্নীতি? আমার ধারণা এটা দুর্নীর্তি নয়। কারণ দুর্নীতি শব্দের মধ্যে আরেকটি শব্দ লুকিয়ে আছে। শব্দটি হলো ‘নীতি’। চোর বা ডাকাতের কাজ ঠিক দুর্নীতি নয় কারণ তাদের কোন নীতিই নেই। সুতরা দুর্নীতি সেই মানুষটি করে যার নীতি অছে। একটা উদাহরণ দেই। যেমন, যদি একজন মন্ত্রী এই বলে শপথ নেন যে তিনি শত্র“ মিত্র ভেদাভেদ না করে সবার প্রতি সমান বিচার করবেন কিন্তু পরে তিনি সেটি না করেন সেটা হবে দুর্নীতি।’
একইভাবে স্যার বলেছেন, আমাদের সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার শপথ নেন। কিন্তু তারা সেটি না করলে সেটি দুর্নীতি। স্যার আরো বলেছেন, একজন সাধারণ মানুষ আইন ভাঙ্গলে এক বছরের জেল হলে পুলিশের পাঁচ বছল হওয়া উচিত। কারণ পুলিশ আইন রক্ষার শপথ নিয়েছে। স্যার ঘুষ দুনীতিসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন।
স্যার যা বলেছেন পুরোটাই এদেশের সাধারণ মানুষের কথা। কিন্তু স্যার কাউকে আক্রমন করে কথা বলেননি। কিন্তু তারপরেও আমাদের সাংসদরা ক্ষেপেছেন। আর ক্ষেপবেনই না কেন দেশের সব মানুষই যে এখন তাদের চোর বলছে। আর সায়ীদ স্যার যখন নীতির কথা বলেছেন তখন এই চোররা আরো বেশি ক্ষেপেছে।
সায়ীদ স্যার একটু আগে গেলেন অফিস থেকে। অনেক কষ্ট পেয়েছেন তিনি। বললেন, আমি সাধারণ জীবনযাপন করি। কিন্তু তারপরেও আমাকে নিয়ে যা তা বলা হলো। আমি খুব মর্মাহত।
স্যারকে কি উত্তর দেবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমি জানি শুধু স্যার নয় পুরো জাতিই আমাদের মাননীয় সাংসদদের কথায় মর্মাহত। স্যার আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন। আমাদের মাননীয় সাংসদরা অনেক জ্ঞানী। তারা অনেককিছু জানেন। তারা যে কতোটা ভালো মানুষ আর কতোটা চোর সেটা আমরা জানি স্যার। আগামী নির্বাচন এলেই তারা এর জবাব পাবেন।
খুব খারাপ লাগে, আমরা এই দেশে গুনীদের মর্যাদা না দিয়ে বারবার আক্রমন করি। আমাদের রাজনীতিবিদরা যে নিজেদের কি মনে করেন তারাই জানেন? তারা হয়তো জানেন না, এদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায় বলেই নির্বাচনে ভোট দিতে যায়। তারা কোন সুখে আপনাদের ভোট দেয় না। তারা বাধ্য হয়ে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কেবল আপনাদের ভোট দেয়। কিন্তু আপানারা নিজেদের মহান মনে করেন। আর তাই ক্ষমতায় গিয়ে ধরাকে সরা করেন।
যাই হোক, স্যার আপনার কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি। আপনি স্যার এই দেশে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজ শুরু করেছেন। আর তাই আমরা আজ বিচার করতে পারি কারা ভালো কারো মন্দ। আপনি শিখিয়েছিলেন বলেই আজকে তরুণ প্রজন্ম নষ্ট রাজনীতিবিদদের ঘেন্না করে। আর তাই সাংসদদের ক্ষোভ আপনার উপর থাকবে স্যার। আপনার কাছে একটা অনুরোধ স্যার, দেখেন তো এই দেশের নষ্ট রাজনীতিবিদদের একটু মানুষ করার কোন প্রজেক্ট হাতে নিতে পারেন কিনা। তাহলে এই জাতি বেঁচে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১২ রাত ১২:৫১