* মনোভাব হল কোন বিষয়ের প্রতি মানুষের মনের পছন্দ, অপছন্দ, ভাল লাগা-মন্দ লাগা ইত্যাদির বহি:প্রকাশ।
* মনোভাব হল কোন বস্তু বা বিষয়ের প্রতি অভিজ্ঞতা দ্বারা সুসংহত মনোদৈহিক প্রস্তুতি ।
* মনোভাব হল পরিবেশের কোন বস্তু বা বিষয়ের প্রতি প্রতিক্রিয়ার জন্য ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি যা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সুসংহত হয়।
* মনোভাব হল কোন কিছুর পক্ষে বা বিপক্ষে যাবার পূর্ব প্রস্তুতি।
* মনোভাব হল স্থায়ী ক্রিয়াশীল প্রতিক্রিয়া।
মনোভাব গঠন:
একজন ব্যক্তির মনোভাব গঠন হয় তিনটি পর্যায়ে ।যথা : ১) অভিজ্ঞতা ২) অনুভূতি ৩) কর্মপ্রবণতা ইত্যাদি।ধরা যাক একজন শিক্ষক এর বিষয়বস্তু জ্ঞান, তার বুঝানোর ক্ষমতা ও শিক্ষার্থীদের সাথে আচরন খুব ভাল। এ বিষয় গুলো শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রভাব ফেলে অর্থাৎ শিক্ষার্থী ঐ শিক্ষকের প্রতি ভাল ধারণা লাভ করে ফলে ঐ শিক্ষকের প্রতি তার অভিজ্ঞতা হয় ভাল । এই ভাল অভিজ্ঞতার ফলে শিক্ষার্থীল যে অনুভূতি হয় অবশ্যই পজিটিভ । ফলে শিক্ষার্থী শিক্ষকটিকে পছন্দ করে এবং শিক্ষকের প্রতি অনুকূল মনোভাব ব্যক্ত করে। যেমন - কেউ যদি উক্ত শিক্ষক সম্মন্ধে বিরূপ সমালোচনা করে তাহলে শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করে এবং তা খন্ডন করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে। আবার শিক্ষকটি যদি কখনও কোন অসুবিধার সম্মুখীন হন তাহলে শিক্ষার্থীটি তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে । এভাবেই মনোভাব গড়ে উঠে এবং সে মনোভাব অনুযায়ী কর্ম প্রবণ হয়ে উঠে ।
ব্যক্তি কোন বিষয়কে ভাল মনে করে, না খারাপ মনে করে ? আনন্দদায়ক মনে করে, না বেদনাদায়ক মনে করে ? এই অনুভূতি থেকেই তার কোন বিষয়ের প্রতি কর্মপ্রবণতা তৈরি করে এবং মনোভাব গড়ে উঠে।ব্যক্তি যদি কোন বিষয়ের প্রতি ধনাত্মক মনোভাব পোষণ করে তাহলে সে বস্তুটিকে অর্জন করতে চাইবে, সাহায্য করতে চাইবে, সমর্থন করতে চাইবে। বিপরীত দিকে, কোন বিষয়ের প্রতি একজনের ঋণাত্মক মনোভাব থাকলে ব্যক্তি বস্তুটিকে এড়িয়ে যেতে চাইবে বা ধ্বংশ করতে চাইবে ।
বিগত এক দশকে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক দিক থেকেই এ পরিবর্তন । কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিকর ও মারাত্মক পরিবর্তন হয়েছে আমাদের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের মনোভাবে । আর এ পরিবর্তন শুরু হয় সংস্কৃতিক মনোভাবের পরিবর্তন থেকে। ৪/৫ বছর আগে থেকে বা তার আগে থেকে শুরু হয় আমাদের দেশে অদ্ভুত স্টাইলে কথা বলা ও অদ্ভুত সব আচরন ও বেশভূশা নিয়ে বিভিন্ন নাটক, সিনেমা যা কিশোর-কিশোরী, তরুন-তরুণীদের মারাত্মক ভাবে আকর্ষন করে । কিশোর তরুন বয়সে কোন কিছু সম্পর্কে ভাল মন্দ বিচার করা যায়না বা বয়সটাই এরকম যে অদম্য নিষিদ্ধ কৌতুহল কিশোর কিশোরীদের এসবের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়ে যায় । ফলে তাদের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় এভাবেই ।
একসময় বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল আসে তার মধ্যে কিছু বিদেশী চ্যানেল ছিল যা তরুন সমাজের জন্য ক্ষতিকারক কিন্তু আমি বলব এসব চ্যানেল ছিল পাশ্চাত্য দেশীয় ফলে তাদের সাথে আমাদের পোশাক আশাকে ও লাইফ স্টাইলে ব্যাপক পার্থক্য থাকায় এগুলো তেমন একটা ক্ষতি করতে পারেনি যা করতে পেরেছে আমাদের হিন্দী চ্যানেল গুলো। কারণ তাদের পোষাক আশাক জীবন যাত্রার পদ্ধতি ছিল আমাদের প্রায় কাছাকাছি ফলে আমাদের দেশের তরুন-তরণীরা এগুলোকে সানন্দে গ্রহণ করেছে । হিন্দী চ্যানেল দেখছে আর তাদের অনুকরণ করছে, হিন্দিতে কথা বলছে, হিন্দী গান, নাটকও সিনেমা নিয়ে আলোচনা করছে। এভাবেও তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করছে।
একসময় মোবাইল ব্যবহার করা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসল। আর এটার প্রভাব পড়ল গিয়ে সেই কিশোর ও তরুণ সমাজের উপর । হঠাৎ করে দেশে নগ্ন মোবাইল ভিডিওর ছড়াছড়ি হয়ে গেল। দেখা গেল কিশোর- কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা যাদের পছন্দকরতো সেসব স্টারদের পর্নো ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং কিশোর-কিশোরী তরুন তরুণীরাও তাদের কে অনুকরণ করতে লাগল।
বিভিন্ন ব্লগে যার যার নিজস্ব মনোভাবের প্রকাশ যেভাবে হচ্ছে তা দেখে ও তরুন তরুনীরা নিজেদের মনোভাব গড়ে তুলছে।
এভাবে তারা যেসব অভিজ্ঞতা লাভ করছে তাতে তাদের মনে একটা অনুভূতির সৃষ্টি করছে । যেহেতু তারা বয়সে অপরিপক্ক কিশোর, তরুণ তাই তারা এগুলোর মন্দ দিকগুলো বুঝতে চাচ্ছেনা বা পারছেনা । ফলে এসবের প্রতি তাদের পছন্দনীয় অনভূতি সৃষ্টি হচ্ছে এবং এসবের প্রতি তাদের ধনাত্মক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে ।
আগেই বলেছি যে কোন বিষয়ের প্রতি ব্যক্তির মনোভাব যদি ধনাত্মক হয় তবে সে বস্তুটিকে অর্জন করতে চাইবে, সাহায্য করতে চাইবে, সমর্থন করতে চাইবে । বড় আশংকার কথা আমাদের দেশের তরুন সমাজ ঐ বিষয়গুলির প্রতি ধনাত্মক মনোভাব পোষণ করছে । তাই তারা এগুলোকে অর্জন করতে চায়, সাহায্য করতে চায়, সমর্থন করতে চায় । আবার কোন বিষয়ের প্রতি ব্যক্তির ঋণাত্মক মনোভাব থাকলে ব্যক্তি বস্তুটিকে এড়িয়ে যেতে চাইবে বা ধ্বংস করতে চাইবে। আমাদের তরুনদের মধ্যে এটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ যারা হিন্দী চ্যানেল দেখে ও তা দেখে হিন্দী বলা শিখেছে তারা মাঝে মাঝেই ফেসবুকে হিন্দীতে স্ট্যাস্টাস দেয় ও কমেন্ট করে । আপনি তাদেরকে এবিষয়টা নিয়ে কিছু বললে বা নিষেধ করলে দেখবেন কি হয় । হয় সে আপনাকে এড়িয়ে যেতে চাইবে নয়তো আপনাকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখা শুরু করবে।
এধরণের মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠা একজন কিশোর বা কিশোরী যখন তরুন থেকে যুবক বা যুবতী হবে তখন তার এ মনোভাব স্থায়ী হিসেবে গড়ে উঠবে । এর বিপরীতে বিপরীত ধরণের মনোভাব নিয়েও গড়ে উঠছে । ফলে একসময় এক মনোভাবের ব্যক্তি অন্য মনোভাবের ব্যক্তিকে এড়িয়ে যেতে চাইবে কিন্তু এক সমাজে বা দেশে বসবাস করে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । আর তখন কি ঘটবে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে !!! উহ !! কি ভয়ংকর !!!