শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করেছে যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা - ২০০১ নামে পরিচিত । নীতিমালাতে যে ধরণের শাস্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তা হল -
০১। শারীরিক শাস্তি :
শারীরিক শাস্তি বলতে যেকোন ছাত্র-ছাত্রীকে যেকোন ধরণের দৈহিক আঘাত করা বুঝাবে । যেমন -
ক) কোন ছাত্র-ছাত্রীকে হাত-পা বা কোন কিছু দিয়ে আঘাত করা/করা ।
খ) শিক্ষার্থীর দিকে চক/ডাস্টার বা এ জাতীয় কোন বস্তু ছুড়ে মারা ।
গ) আছাড় দেয়া ও চিমটি দেয়া ।
ঘ) শরীরের কোন স্থানে কামড় দেয়া ।
ঙ) চুল ধরে টানা বা চুল কেটে দেয়া ।
চ) হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম চাপা দিয়ে মোচড় দেয়া ।
ছ) ঘাড় ধরে ধাক্কা দেয়া ।
জ) কান ধরে টানা বা উঠবস করানো ।
ঝ) চেয়ার, টেবিল বা কোন কিছুর নীচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাঁটু গেড়ে দাঁড় করানো ।
ঞ) রোদে দাঁড় করে বা শুইয়ে রাখা কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করে রাখা ।
ট) ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে এমন কোন কাজ করানো যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
০২। মানসিক শাস্তি :
কোন শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষে এমন কোন মন্তব্য করা যেমন- মা-বাবা/বংশ পরিচয়/গোত্র/বর্ণ/ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করা বা এমন কোন আচরন করা যা শিক্ষার্থীর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে ।
সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ. উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা (আলিম পর্যন্ত) সহ অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে যা অমান্য করলে দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় শাস্তি না দিয়ে পারা যায়না । অনেক শিক্ষার্থীর অসদাচরণের জন্য শাস্তি দিতেই হয় । কিন্তু মনে রাখতে হবে অবাঞ্চিত আচরণ দূর করার শেষ চেষ্টা হল শাস্তিদান । শুধু তখন শাস্তি দেয়া যায়, যখন অনেক রকম কৌশল প্রয়োগ করেও শিক্ষার্থীকে প্রতিহত করা যায় না ।
শাস্তি দেয়ার আগে -
* শিক্ষার্থীর অন্যায় আচরণকে উপেক্ষা করার ভান করুন । এসময় অন্য শিক্ষার্থীদের প্রশংসনীয় কাজকে সমর্থন করুন ।
* নিয়ম ভঙ্গকারী কোন শিক্ষার্থীকে আপনি পছন্দ করেন না এটা যেন শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থী বুঝতে পারে । দেখবেন অনেকেই নিয়ম ভঙ্গকারী শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে দল হতে বর্জন করবে ।
* আপনার আলোচিত বিষয়বস্তুতে আপনি স্থির থাকুন ।
* কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সংশোধনের জন্য সময় লাগে, ধৈর্য হারাবেন না । শিক্ষার্থীর অন্যায় আচরণকে এক মুহূর্তের জন্যও আমল দেবেন না ।
দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরণের কৌশল প্রয়োগের পরও যদি শিক্ষার্থীর মধ্যে কোন পরিবর্তন না আসে, তবে তাকে শাস্তি দিন ।
কিন্তু শাস্তি দেওয়ার আগে ভাবুন -
* শাস্তির ফলাফল কী হবে ?
* শিক্ষার্থীর আদৌ কোন ইতিবাচক পরিবর্তন হবে কিনা ?
* তার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা ?
* অন্যান্য শিক্ষার্থীর মধ্যে এর কি ধরণের প্রতিক্রিয়া হবে ?
এসব কিছু ভেবে নিয়ে যদি দেখেন শ্রেণীশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এবং শিখন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শাস্তি দেয়া জরুরি, তখন শিক্ষার্থীর অপরাধের মাত্রার উপর নির্ভর করে -
* মৃদু ভৎর্সনা করুন ।
* কঠোর তিরস্কার করুন ।
* তার কাজে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করুন ।
* শ্রেনী থেকে তাকে সাময়িকভাবে বর্জন করুন ।
* শ্রেনীর বাইরে রাখুন ।
* আনন্দ থেকে বঞ্চিত করুন ।
* মাসিক পরীক্ষার মোট নম্বর থেকে ১/২ নম্বর কমিয়ে দিন ।
সূত্র :
আবশ্যকীয় শিখন দক্ষতা (মডিউল - ১ ও ৩)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
টিচিং কোয়ালিটি ইমপুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্ট
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ।