সিগমুণ্ড ফ্রয়েড একজন অস্ট্রিয়ান স্নায়ুবিদ (Neurologist) এবং মনঃসমীক্ষণ (Psychoanalysis) এর প্রতিষ্ঠাতা, যিনি মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রণিধানের সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তাকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী - এবং বিতর্কিত - ব্যাক্তিদের অন্যতম মনে করা হয়।
Sigismund (পরে পরিবর্তিত হয়ে Sigmund) Freud ৬ মে ১৮৫৬ সালে Freiberg, Moravia (বর্তমানে Czech Republic এর অন্তর্গত Pribor) এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বনিক। প্রথমে তার পরিবার Leipzig এ স্থানান্তরিত হয় এবং পরবর্তীতে ভিয়েনায় বসবাস করে। সেখানেই ফ্রয়েড শিক্ষালাভ করেন। ফ্রয়েডের পরিবার ইহুদী ধর্মালম্বি হলেও তিনি নিজে চর্চা করতেন না।
ফ্রয়েড ১৮৭৩ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Vienna) চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন শুরু করেন। স্নাতক শেষে তিনি Vienna General Hospital এ কাজ শুরু করেন। সম্মোহিত (Hypnotized) অবস্থায় অতীতের যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা স্মরণের মাধ্যমে স্নায়ুবৈকল্য (Hysteria) রোগের চিকিৎসায় তিনি Josef Breuer এর সহযোগী হন। ১৮৮৫ সালে ফ্রয়েড স্নায়ুবিদ (Neurologist) Jean Charcot এর ছাত্র হিসেবে প্যারিস গমন করেন। ভিয়েনায় ফিরে পরবর্তী বছরে ফ্রয়েড মস্তিষ্ক ও স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ব্যক্তিগত চিকিৎসাবৃত্তিতে নিয়োজিত হন। সে বছরেই তিনি Martha Bernays এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ৬ জন সন্তান ছিল।
তিনি এই তত্ত্ব প্রদান করেন যে, মানবমনে অচেতন অবস্থা (Unconscious State of Mind) বিদ্যমান যে অবস্থায় যৌন ও আগ্রাসী তাড়নাসমূহ তাদের বিরুদ্ধশক্তির উপর আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে অন্তহীন সংঘর্ষে লিপ্ত। ১৮৯৭ সালে তিনি নিজের উপর প্রগাঢ় বিশ্লেষণ শুরু করেন। ১৯০০ সালে তাঁর প্রধান কীর্তি স্বপ্নসমূহের ব্যাখ্যা (The Interpretation of Dreams) প্রকাশিত হয় যেখানে ফ্রয়েড অচেতন বাসনা ও অভিজ্ঞতাসমূহের আলোকে স্বপ্নের বিশ্লেষণ করেন।
১৯০২ সালে ফ্রয়েড ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নায়ুরোগবিজ্ঞানের (Neuropathology) অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন। চিকিৎসক সমাজ তাঁর অনেক ধারনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করলেও একদল ছাত্র এবং সমর্থক তাঁর কাছে জড় হতে থাকে। ১৯১০ সালে ফ্রয়েডের একান্ত সহযোগী Carl Jung কে প্রধান করে আন্তর্জাতিক মনঃবীক্ষণিক সমিতি (International Psychoanalytic Association) প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে Jung ফ্রয়েডের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং তার স্বীয় তত্ত্বের উন্নতি সাধন করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ফ্রয়েড হাসপাতাল কেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণে (Clinical Observation) কম সময় ব্যয় করেন এবং ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য ও নৃতত্ত্বের উপর তাঁর তত্ত্বের প্রয়োগে মনোনিবেশ করেন। 'ইদম', 'অহংবোধ' এবং 'অধ্যহং' কে ('id', the 'ego' and the 'superego') পৃথকীকরণের মাধ্যমে মনের একটি নতুন কাঠামোগত আদল (Structural Model) উপস্থাপন করে ১৯২৩ সালে তিনি প্রকাশ করেন অহংবোধ ও ইদম (The Ego and the Id).
১৯৩৩ সালে নাৎসিরা ফ্রয়েডের কিছু বই প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলে। ১৯৩৮ সালে নাৎসি কতৃক ভিয়েনা অধিকৃত হওয়ার পরপরই ফ্রয়েড তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা আন্না সহ লন্ডনের উদ্দেশ্যে ভিয়েনা ত্যাগ করেন।
১৯২৩ সালে ফ্রয়েডের চোয়ালে ক্যানসার ধরা পড়ে এবং ৩০ টিরও বেশী অস্ত্রপাচার করা হয়। ১৯৩৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যানসারে তিনি মারা যান।
[BBC History থেকে অনূদিত]
মূল রচনা
কিছু শব্দের অর্থঃ
মনঃসমীক্ষণঃ মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা পদ্ধতি বিশেষ - যাতে অসুস্থ ব্যক্তির সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে তার অতীতের বিভিন্ন ঘটনার অভিজ্ঞতা ও অনুভুতির আলোকে বর্তমান সমস্যার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়।
ইদম: ব্যক্তির অবচেতন উপজ্ঞা (সহজাত জ্ঞান) ও প্রবৃত্তিসমূহ।
অধ্যহং: মনের যে অংশ বিবেক ও নীতিবোধের আহ্বানে সাড়া দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৩১