ডারউইন ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী যিনি “বিবর্তন তত্ত্বের” ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রাকৃতিক জগত সম্পর্কে আমাদের চিন্তাধারাকে পাল্টে দেন।
চার্লস রবার্ট ডারউইন (Charles Robert Darwin ) ১৮০৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের শ্রপশ্যয়ারের (Shropshire) শ্রুযব্রিতে (Shrewsbury) এক ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নানা জসিয়াহ্ ওয়েজঊড (Josiah Wedgwood) ছিলেন চীনামাটির সামগ্রী প্রস্তুতকারক। দাদা ইরাসমাস ডারউইন (Erasmus Darwin) আঠারশ শতকের ইংল্যান্ডের নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের একজন।
ডারউইন প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা পেশা গ্রহণের পরিকল্পনা করেন এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে (Edinburgh University) অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Cambridge University) ধর্মশাস্ত্র পড়েন। ১৮৩১ সালে তিনি His Majesty’s Service Beagle নামক জরিপ জাহাজে (Survey Ship) পাঁচ বছরের বৈজ্ঞানিক অভিযানে যোগ দেন।
সেই সময়ে ইউরোপের অধিকাংশ মানুষ বাইবেলের বর্ণানুসারে “ঈশ্বর ৭ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেন” বলে বিশ্বাস করত। এই অভিযানকালে ডারউইন লিয়েলের (Lyell) ভুতত্ত্বের মূলনীতি (Principles of Geology) অধ্যয়ন করেন। লিয়েল (Lyell) এ বইতে ধারণা দেন যে, শিলাস্তরের অভ্যন্তরে প্রাপ্ত জীবাশ্মসমূহ প্রকৃতপক্ষে লক্ষ বা কোটি বছর আগের জীবিত প্রাণীর নিদর্শন। অভিযানে দেখা অতি সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্টসমূহ লিয়েলের (Lyell) যুক্তি ডারউইনের মনে দৃঢ় প্রভাব ফেলে। দক্ষিন আমেরিকার ৫০০ মাইল পশ্চিমের গ্যালাপগস (Galapagos) দ্বীপে পৌঁছেই তার ধারনার সাফল্য দেখতে পান। ডারউইন প্রতিটি দ্বীপেই স্বতন্ত্র ধরণের Finch পাখি দেখতে পান যাদের মাঝে রয়েছে নিবিড় সাদৃশ্য আবার তাৎপর্যপূর্ণ বৈসাদৃশ্য।
১৮৩৬ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে ডারউইন তাঁর পর্যবেক্ষণসমূহ এবং প্রজাতির বিকাশের রহস্য উম্মচনে সচেষ্ট হন। ম্যালথাস (Malthus) এর ধারনায় প্রভাবান্বিত হয়ে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিবর্তন তত্ত্বের প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকে থাকার প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রদানের মাধ্যমে স্বীয় পরিবেশে সর্বাপেক্ষা যোগ্য প্রাণীকুল (বা উদ্ভিদকুলই) টিকে থাকবে ও বংশবৃদ্ধি করবে। ধীরে ধীরে, সময়ের সাথে প্রজাতির পরিবর্তন সাধিত হয়।
ডারউইন ২০ বছর তাঁর তত্ত্বের উপর গবেষণা করেন। আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস (Alfred Russel Wallace) নামক অপর প্রকৃতিবিজ্ঞানীও অনুরূপ ধারণা পোষণ করেন জেনে ১৮৫৮ সালে তাঁরা যৌথভাবে তাঁদের আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। ১৮৫৯ সালে ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উদ্ভব প্রসঙ্গে (On the Origin of Species by Means of Natural Selection) প্রকাশ করেন।
বইটির ভাষ্য চরমভাবে বিতর্কিত ছিল কারণ, ডারউইনের তত্ত্বের যৌক্তিক ব্যাপ্তি অনুযায়ী homo sapiens (মানুষ) অন্যান্য প্রাণীর মতো এক ধরনের প্রাণী। এটা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের উদ্ভব সম্ভবত- Apes (লেজবিহীন বানর) থেকে; যা পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কিত প্রচলিত বিশ্বাসকে বিনাশ করে। ডারউইন তীব্র আক্রমণের স্বীকার হন, বিশেষভাবে গীর্জা (খ্রিস্টীয় উপাসনালয়) কতৃক। তবে, অবিলম্বেই তাঁর মতবাদ প্রচার লাভ করে এবং এবং নতুন প্রথারুপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ডারউইন ১৮৮২ সালের ১৯ শে এপ্রিল মারা যান এবং তাকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাঁবি (Westminster Abbey) তে শায়িত করা হয়
[BBC History থেকে অনূদিত]
মূল রচনা
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১৮