ঢাকা শহর মেয়েদের জন্য একা বসবাসের জায়গা না । এই বোধদয় সচেতন সব অবিভাককেরই । একটু বেশি বোধ হয় মধ্যবিত্ত পরিবারের । কিন্তুু কেন ???
আশাহত সমালোচনা দেখা যায় ঢাকাবাসী মানুষদের কাছ থেকেও । তরুণ প্রজন্ম কেও হতাশ হতে যে দেখা যায়না তাও নয় ।
কথা বলে কিছুর উত্তর মিললেও অনেকটা ই অজানা । খুজেঁ বের করতে হবে কারণ । আর তার যথাযথ সমাধানও করতে হবে ।
প্রথম অভিযোগ :::::::::এখানে মেয়েরা যথেষ্ট নিরাপদ নয় ।
২০০৬ -২০০৭ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে (অপেক্ষারত ) একজন মেয়ে সে বছর যথেষ্ট যোগাযোগ রাখতে না পারায় তার ভাইভা কবে হয়েছে জানেনা । সে কারনে সে বছর তাকে মেধা তালিকা থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয় । এখানেও একই পরিনতি । জেলার প্রায় শেষদিকে বাড়ি হওয়াতে সেখান থেকে যোগাযোগ ঘাটতি থাকায় কবে রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে জানেনা । পরে এ ভর্তিও বাতিল ।
সিদ্ধান্ত হয় বিয়ে দেবে । কিন্তু মেয়েটি ইতিমধ্যে স্বপ্ন দেখে ফেলেছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে । একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ হবে তার । সে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবে । আদর্শ মেয়ে হয়ে পথ দেখাবে । কিন্তু একি হল তার । এসময় ভাল যোগ্য পাত্র পাওয়া যাচ্ছেনা । আর মেয়েটি টাকার থেকে শিক্ষা পছন্দ করে । তেমন পাত্র কোথায় যে মেয়েটিকে বুঝবে ? বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়বার অপরাধে অযোগ্য সে আজ ।
পরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটা কলেজ থেকে বিএসএস( পাস) কোর্সে ১৩ নম্বরের অভাবে সে ৭৬৭ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে । যা তার প্রথম বছরের কমতি নম্বর । কারন তার পড়া ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায় ।
কথা একটা ই বাইরের পৃথীবিটা ভালনা । তোমাকে একা কোথাও যেতে দেয়া হবেনা ।
এই ভালবাসা একসময় অথর্ব অপদার্থ করে দিতে পারে ।
পরে সে জেলা শহরে আসে পরিবারের সাথে স্নাতকোত্তর পড়ার প্রয়োজনে । এখানে এসে দৃষ্টি প্রসারিত করার একটু চেষ্টা আবার করে ।
এসময় সেশন জোটের সমস্যাকে ইতিবাচক সুযোগ হিসাবে কাজে লাগায় সে । স্নাতকত্তোর পড়ার পাশাপাশি
এখানে থেকে শিক্ষায় স্নাতক লাভ করে । এর পর যখন আবার শিক্ষায় স্নাতকত্তোর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রথমে পরিবারের আপত্তি থাকলেও পরে সে ১ম মেধা তালিকায় সুযোগ পায় তখন কোন রকমে ভর্তিটা হতে পারে । কিন্তু পড়া টা শেষ হবেতো ?????????????
প্রশ্ন ঢাকা শহরের ব্যয় তার উপর কলেজটা ধানমন্ডি , ঢাকা যেখানে ব্যয় আরো বেশি । এবার আর পরিবার কে নিয়ে যাওয়া হয়না মেয়েটির । আবার মেসে কিংবা হলে রেখে ও পড়াতে নারাজ এ পরিবার । মেয়েটি তবু আশা ছাড়েনা ।
বাবা বলে দেন তুমি যেতে পারো পড়তে পরো এক শর্তে প্রতিদিন যাবে আবার ক্লাশ শেষ করে চলে আসবে । যেখানে প্রতিদিন যাতায়াতে প্রায় ১৫ ঘন্টা সময় ১৫০০ টাকা খরচ হয় । এক বছর এ পড়া পড়তে কত টাকা লাগতে পারে ???? আর এ দীর্ঘ জার্নির শর্তটাই বা মেয়েটি কিভাবে মেনে নেবে ?? সব রক্ত বিক্রয় করেও তো এতো টাকা পাওয়া যাবেনা । যেখানে পড়তে মাত্র ৪০০০ টাকা খরচ । শুধুমাত্র ঢাকা শহরের অনিরাপদ পরিবেশ / নিরাপত্তাহীনতার দায়ে মেয়েটির পড়া হবেনা ???????
অভিমানে গলাটা ভারী হয়ে আসে মেয়েটির । অশ্রুতে ভিজে দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে আসে । মেয়েটি আপ্রাণ চেষ্টা করে এ অশ্রু যেন পরিবারের কেউ না দেখে । যদি বাবাকে কেউ বলে দেয় যে সে কাঁদছে হয়তো বাবা এ কান্না মোছাতে তার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবে । হারাতে হতে পারে অনেক বড় কিছু । যা হয়তো অর্থমূল্যে ফেরতের অযোগ্যও হতে পারে । সব বাবারাই চান তার সন্তান অনেক বড় হোক অনেকটা পড়ুক । মেয়েটি জানে তার বাবা আরো একটু বেশি চান । বাবার কষ্ট হবে এটা ভেবে সব ভুলে যাবার চেষ্টা করে । তবু........।
কিন্তু এটা কি এমন জরুরী পড়া ????? কি পাবে তার বিনিময়ে ??? না পড়লে কি হয় ??????
এসব কিচ্ছু জানেনা মেয়েটি । শুধু জানে সুযোগ থাকলে চেষ্টা করতে হবে । এ পড়াটা শেষ করতে পারেলে তার অতীতের গ্লানি মুছতে হয়তো কিছু সাহায্য হবে ।
আবার অভিযোগ আছে পরে যদি কোন কাজে লাগে এ পড়া তখন সবাই বলবে তুই তো পড়লিনা । আমরা তো বলেছিলাম ই । মেয়েটির সব এলোমেলো হয়ে যায় যেন সে আর কিছুই ভাবতে পারছেনা ।
সত্যিই কি ভাবনা ছেড়ে দেবে ???????
সমাধান :::::::
১।ঢাকা শহরকে আরো নিরাপদ বাসযোগ্য শহর হিসাবে গড়ে হবে ।
এখানে পড়াশুনার জন্য শুধু যথষ্ট প্রতিষ্ঠান রাখলে হবেনা তাতে যেন মেয়েরা সম্ম্মানের পড়তে থাকতে পারে । নিরাপদে সব কাজ করতে পারে তা দেখতে হবে ।
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেলেরা ভাগ্য পরিবর্তনের যুদ্ধে এখানে আসছে । কোনরকমে থাকছে । তাদের মানবেতর জীবন হয়তো অর্জন দেয় কারো কারো আবার অনেকটা বেশি মূল্য দিতে হয় ।
২। অনেক আগে দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রদের বিশেষ প্রশিক্ষন এর মাধ্যমে দক্ষ করা হচ্ছিল ।
অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের এভাবে কাজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে ।
৩। আর থাকার ব্যাপারে সরকারী উদ্যোগে বিশ্রাগার বিশেষ করে মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা করার বিশেষ অনুরোধ ।
৪। এ টু আই একসেস এর মাধ্যমে এসব বিশ্রামাগারের ব্যাপারে তথ্য যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ জানতে পারে সুফল নিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে ।
না জানি কত কত মানুষ নিত্য ব্যথিত চিত্ত নিয়ে পিছিয়ে পড়ার অভিযোগে অভিযুক্ত এটুকুর অভাবে ।
৫ । বড় কিছু প্রতিষ্ঠানকে শহরের একটু বাইরে অথবা অন্য জেলা শহর গুলোতেও দিয়ে ভারসাম্য আনা যায় ।
এভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ এর মাধ্যমে আরো উন্নত সমৃদ্ধ নিরাপদ ভবিষ্যৎ পেতে পারি । যেখানে নারীরা পুরুষের সাথে বাহ্যিক প্রতিযোগিতায় নয় জ্ঞানে গুণে বিদ্যায় সর্বত্র পাশে থাকতে পারি । ।
৬ । তথ্য জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছাতে বর্তমানে প্রচলিত প্রচেষ্টাকে আরো কাযর্করী করতে হবে । যেন মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় । যেন তা শুধু ব্যবসায়িক প্রয়োগে সীমাবদ্ধ না থাকে ।
২০০৬ সালে মেয়েটি পড়া ছাড়েনি ইতিবাচক পরিবর্তিত পৃথীবির আশায় । আমরা কতটা দিতে পেরেছি সেই পৃথীবি ??????? কতটা পরিবর্তন করতে পেরেছি ??????? পরিবর্তিত হতে পেরেছি ????? আজও কেন অভিভাবকগণ উচ্চিশিক্ষায় একনও এমনটাই ভাবছেন ????? এ লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে হবে । আমরাই পারি আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করতে । দৃষ্টি ভঙ্গি বদলে ফেলতে হবে ।
ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে অনেকগুলো সফলতা । তার ই ধারাবাহিকতায় আরো সফলতা আসবে বলে আশা রাখি ।
সুদিনের আশায় আবারো শুভ কামনা রইল ।
ছবির কৃতজ্ঞতায় :::::::: http://ttcdhaka.edu.bd/ এর ফোটো গ্যালারী