somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারায়ণগঞ্জ শহরের টোকাইরাও জানে তকীকে কারা হত্যা করেছে

১১ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথাটি বলছিলেন, একজন মা। যার বয়স ষাটের কম নয়। আমি অবাক হয়ে গেছি তার কথা শুনে। আরো দু’একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউই বিষয়টা স্পষ্ট করে বলছে না। সবাই বলছে, আমাদের হাতে তো প্রমাণ নেই। প্রমাণ ছাড়া তো আমরা কোনো কথা বলতে পারি না।

হ্যা, আমরা প্রমাণ ছাড়া কোনো কথা বলতে পারি না। আরো পারিনা, যদি প্রতিপক্ষ অনেক প্রভাবশালী হয়; গডফাদার হয়। সেই পরিবারটি এতোই প্রভাবশালী যে, পুলিশ পর্যন্ত তাদেরকে সন্দেহ করার সাহস পাচ্ছে না। সত্যিই আজব এক দেশ।

আমি গত রাতে নারায়ণগঞ্জের মশাল মিছিলে যোগ দিয়েছিলাম। এবারই প্রথম কোনো মশাল মিছিলে যোগ দিলাম। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। অনেক মানুষ এক সঙ্গে শ্লোগান দিচ্ছে। অনেকের হাতে মশাল। আমার হাতেও একটা। পবিত্রতা বা পিউরিটি বলতে কোনো কিছু থাকলে তাকেই ওই নামে ডাকা যায়।

অনেক মানুষ একসাথে দেখলেই আমার কান্না পায়। অধিকাংশ সময়ই কান্নাটা কষ্টের। যখন দেখি ভুল দাবি নিয়ে মানুষ শ্লোগান দেয়, তখন কষ্ট আরো বাড়ে। শাহবাগে শুরু হওয়া আন্দোলনের ২য়/৩য় দিনে গিয়ে প্রথম সুখে কেঁদেছিলাম। সে ছিল প্রথম প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার চেয়েও বেশি আবেগের ব্যপার। পরে আমু বা আলীদের দখলে যাওয়ায় কষ্ট বেড়েছে। এখন অবশ্য আমার বন্ধুরা গণজাগরণ সংস্কৃতি মঞ্চ গড়েছেন। তারাই শাহবাগকে জাগিয়ে রেখেছেন। গতকাল সেখানেই যাবো বলে ভেবেছিলাম। সন্ধ্যায় কথা ছিল, লোকের চলতি সংখ্যা কেনার জন্য আজিজের লিটলম্যাগ চত্ত্বরে যাবো। লোক সম্পাদকের সাথে সকালে ফোনে তেমনটাই বলেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গেলাম নারায়ণগঞ্জে। জীবনে প্রথম আমার নারায়ণগঞ্জ যাওয়া গতকালই।

না, আমি হোমরা-চোমরা ব্লগার নই। এক্টিভিস্টও (অফলাইন বা অনলাইন) না। কিন্তু আমি মহাবিশ্বের একটা প্রাণী, একজন মানুষ, পৃথিবীর বাসিন্দা আর বাংলাদেশের নাগরিক। এই দেশটা আমারও। মগের মুল্লুকে বাস করি বলে কি নিজের চিন্তার কথাটাও বলতে পারবো না?

রাতে মশাল মিছিল শুরু হলো। আমরা যাচ্ছি। স্লোগান দিচ্ছি। হাত তুলে তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করছি। সেই মিছিলে দেখি আমার বাঁ পাশে একজন নারী। পরনে সাদা প্রিন্টের শাড়ি (শুনেছি স্বামী বেঁচে থাকলে কেউ সাদা শাড়ি পরে না)। বয়স চল্লিশের ওপর। রঙিন শাড়ি পরা বেশ কয়েকজন নারীকেও দেখলাম। শিশুদেরও দেখলাম। এরা তো এক্টিভিস্ট না। এদের পিঠে তো চে গুয়েভারার ছবিওয়ালা রশি ব্যাগ নাই।

একজন নারী কাঁদলেন, তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না। তাঁর প্রশ্ন, তকীর মতো ছেলেকে কেউ হত্যা করতে পারে? তকী তো এক্টিভিস্ট না। সে বলেছিলো, বড় হয়ে বাবাকে একটা স্টুডিও করে দেবে।

ওর বাবার সম্ভবত স্বপ্ন ছিল ছবি আঁকার। তিনি চারুকলার ছাত্র ছিলেন। আঁকাআঁকি নিয়ে রাফিউর রাব্বির একটা বইও আছে। বইটা আমি দেখেছি (নামটা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছিনা)। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত হয়েছেন একজন এক্টিভিস্ট। সরল বাংলায় আন্দোলনকর্মী। তিনি আন্দোলন করেন; আন্দোলন গড়ে তোলেন। যখন রেল ভাড়া বাড়ে, বাস ভাড়া বাড়ে; তিনি প্রতিবাদ জানান। রেলের জমি বেদখল হলে, আন্দোলন গড়ে তোলেন। নদী দূষণ হলে, মানববন্ধন করেন। নদী ভরাট বা দখল হলে, প্রতিবাদ জানান। অবৈধভাবে ভূমি দখল হলে, রাস্তায় নেমে আসেন। অবৈধভাবে ভবন তৈরি করলে, প্রতিবাদ জানান; সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ করে তা ভাঙার ব্যবস্থা করেন। এটা প্রভাবশালীরা দেখতে পারে না। তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে। অবৈধ ব্যবসায়ী বা দখল-দূষণবাজরা রুষ্ট হন।

আজ থেকে কুড়ি বছর আগের কথা। তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছিল। রাফিউর রাব্বি তখন সবে কিউবা থেকে ফিরেছেন। সে আন্দোলনে তিনি বেশ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্থানীয় এক নেতা নাকি ইঙ্গিতে কিছু একটা বলেছিলো। সে কথার কোনো রেকর্ড কারো কাছে আছে কিনা তা আমরা জানিনা। তবে কুড়ি বছর পর সেই ইঙ্গিতই ফলেছে- এ কথা বলছিলেন একজন সংস্কৃতিকর্মী। তারা স্তব্ধ। নিজের সন্তানের কথা ভেবে তারা আতঙ্কিত। তারা কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন।

মশাল মিছিল নিয়ে যাচ্ছি। আমার ডান পাশে বিজ্ঞান বক্তা আসিফ। তিনি হঠাৎ স্লোগান বাদ দিয়ে বলা শুরু করলেন, আমাদের নদী পলুটেড হয়েছে। আমাদের বাতাস পলুটেড হয়েছে। আমাদের পানি পলুটেড হয়েছে। আমাদের মাটি পলুটেড হয়েছে। এসবের মূল কারণ, আমাদের রাজনীতি পলুটেড। রাজনীতির দূষণ কীভাবে প্রকৃতি-পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করে তোলে তার বড় প্রমাণ বাংলাদেশ। আগে আমাদের রাজনীতিকে দূষণমুক্ত করতে হবে। তাহলে, বাকিসব দূষণমুক্ত হবে।- কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। আসলেই তো, এভাবে তো ভেবে দেখিনি। রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম। রাজার নীতিই প্রজার নীতি। রাজা মানে শাসক গোষ্ঠী। শাসকের নীতি দূষিত হলে জনগণ তো দূষিত হবেই। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ঠকঠকামি তো একধরনের দূষণ-ই। রাজনীতির কারণে আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, আইন, বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্র দূষিত হয়েছে। এ তো বায়ু বা পানি দূষণের মতোই ভয়াবহ।

এরইমধ্যে এক নারীকণ্ঠ স্লোগান দিচ্ছে, গডফাদারের আস্তানা; আমরা কণ্ঠ মেলালাম, ভেঙে দাও-গুড়িয়ে দাও। এটা নারায়ণগঞ্জের নতুন স্লোগান। গতকালই প্রথম তারা এমন স্লোগান দিল। আজ ডিসি অফিস ঘেরাও করা হবে। সেখানে আরো নতুন স্লোগান যুক্ত হতে পারে।

আপনি এক্টিভিস্ট না হলেও সমস্যা নাই। আপনার পেশা কি সেটাও বিবেচনার বিষয় না। আপনি জীবনেও ব্লগ লেখেন নি, তাতে কি? ফেসবুকে একাউন্ট না থাকলেও চলবে। আপনার মধ্যে স্বপ্ন থাকতে হবে। দূষণমুক্ত বিশ্ব চাই। দুষণমুক্ত দেশ চাই। তার জন্য আগে রাজনীতিকে দূষণমুক্ত করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এই দূষণমুক্তির প্রথম পর্ব। এরপর শুরু করতে হবে অন্য স-ব অপরাধের দূষণমুক্তি। এটা উপলব্ধির আরেক নাম জাগরণ। অনেকেই এমনটা ভাবছেন বলে এটা গণজাগরণ।

স্বাধীনতা ব্যবসায়ী বা ধর্ম ব্যবসায়ী কাউকে আমরা বিশ্বাস করি না। পলুটেড বুদ্ধিজীবীদেরও আমরা বিশ্বাস করিনা। আমরা বিশ্বাস করি না পলুটেড এক্টিভিস্টদেরও। আপনি পলুটেড হলে মঞ্চ ছাড়ুন। মঞ্চ ছাড়াই আমরা স্লোগান দিতে জানি।

জাগোওওওও জাগোওওওওওও
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×