তত্ত্ববধায়ক সরকার বাতিল হওয়ার পর তৃতীয় শক্তি নিয়ে একটি মন্তব্যের কারণে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ড. আসিফ নজরুল। এখন কিন্তু বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবিরা বেশ জোরেসোরেই বলছেন তৃতীয় শক্তির কথা। খালেদা জিয়া বাইরের হস্তক্ষেপ কামনা করে বিদেশের পত্রিকায় কলাম লিখেছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিদেশে গিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন বলেও শেখ হাসিনা ঈঙ্গিত করেছেন। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ বর্জন করে বিএনপি ভারতবিরোধী পুরনো মেজাজে ফিরে গেছে। গত শনিবার বৃটেনের রাষ্ট্রদূত সরকার ও বিরোধীদলের সিনিয়র নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সৌদি আরব ও তুরষ্কের রাষ্ট্রদূতরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। এই মুহূর্তে তৃতীয় শক্তি আসার কি সম্ভাবনা আছে?
২
জামায়াতে ইসলামীর প্রতি বিএনপির সমর্থনের মধ্য দিয়ে তার জাতীয়তাবাদি বৈশিষ্ট্যের ধর্মীয়করণ স্পষ্ট হয়েছে। বিএনপির পক্ষে এটা নূতন নয়। ধর্মীয়করণ বলতে এখানে অন্য কোনো ধর্ম নয়, ইসলামিকরণ। এটা এখন নিশ্চিত বাঙালি বা বাংলাদেশি বাদ দিয়ে বিএনপি এখন ইসলামি জাতীয়তাবাদি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় নানান সুবিধা নিয়েছে। এখনও নিচ্ছে। মাঝেমধ্যে এটা উগ্র জাতীয়তাবাদকেও উস্কে দেয়। যেমনটা আমরা শাহবাগের তরুণদের মুখেও শুনেছি, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’।
এদেশে দু’টি ব্যবসায় খুব লাভ হয়েছে। এক, স্বাধীনতা পক্ষ; দুই, ইসলাম পক্ষ। ইসলামকে অলঙ্কার করে যে বিএনপি একসময় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তা এখন ফিকে হয়ে গেছে। এখন এটা ইসলামিবাদে পরিণত হয়েছে। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ বক্তব্য সে দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অন্যদিকে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে আওয়ামী লীগ এদেশে দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করে আসছে। সর্বশেষ নির্বাচনেও তারা এটাকে পুঁজি করেছে। নির্বাচনের আগে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম নামে একটা সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর সংগঠন থেকে দাবি তোলা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে তারা লুফে নিয়েছে। তরুণ প্রজন্মের ভোটাররাও এটাকে সমর্থন দিয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ নিজেদের কুকীর্তি ঢাকতে সেসময় ‘দিন বদলের’ মতো গালভরা স্লোগান ব্যবহার করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভোট পাওয়া, সেটা পুরোপুরি সফল।
৩
আমরা দেখেছি, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত বিএনপি কোনো বড় ধরনের আন্দোলন গড় তুলতে পারেনি। যদিও তারা আঠার দলীয় জোট গঠন করেছে। একের পর এক সমস্যায় পড়ে দলটি আন্দোলনহীন হয়ে পড়েছে। জ্বালানী তেল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি, সন্ত্রাস, সড়ক-নৌ দুর্ঘটনা, বিডিআর বিদ্রোহ, গুম-খুনের মতো জনস্বার্থের কোনো বিষয় নিয়েই তারা আন্দোলন তৈরি করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে উৎখাত, তারেক-কোকোর দুর্নীতি, নেতা-কর্মীদের নামে ধারাবাহিক মামলায় দলটি ইমেজ সঙ্কটে পড়েছিল। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক বাতিল ইস্যুতেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। যা দিয়ে তারা পরবর্তীতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন এতোদিন দেখেছিল।
দেশের গণমানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা সরকারি দলকে ভোট না দেওয়া। এর পেছনে প্রত্যেকটা সরকারের ব্যর্থতা দায়ী। এই সাধারণ হিসাবটাই বিএনপি কষে রেখেছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক বাতিল হওয়ায় সে আশায় গুড়েবালি। তারা চাচ্ছিল সরকারের মেয়াদ শেষে বাইরের হস্তক্ষেপ অথবা তৃতীয় শক্তির (সেনাবাহিনী অথবা সমর্থিত) উত্থান। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলন সে হিসেবটাও আপাতত বাতিল করে দিয়েছে।
৪
দলনিরপেক্ষ শাহবাগের আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ দলীয়করণ করতে পেরে নির্বাচনের পর বড় একটা সাফল্য দেখাল। বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা (এমনকি ফরহাদ মজহার) শাহবাগের আন্দোলনকে গণজাগরণ বলতে নারাজ। তাদের মতে, এটা মিডিয়ার কারসাজি।
প্রথমেই বলে নেই, শাহবাগের আন্দোলন কোনো বিপ্লব নয়। এখন এ থেকে বিপ্লব হওয়ার কোনো চান্স এখন আর নাই; তবে শুরুতে ছিল। দলনিরপেক্ষতা (বিশেষ দলের নয়। নির্দলীয় বা দলহীনও নয়), তারুণ্যের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং দেশের মানুষকে যে স্বপ্ন (পরিবর্তনের স্বপ্ন, এমনকি বিপ্লব, প্রথম সাত দিনের হিসাব তাই বলে) দেখিয়েছিল; তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি তারা। প্রথমে আওয়ামীলীগের সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবিদের প্রাধান্য এবং পরে বিএনপির নিষ্ক্রিয়তার কারণে তা পুরোপুরি আওয়ামীকরণ হয়। এটা যে গণজাগরণ এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। কারণ, এর আগে এমন আন্দোলন গত কুড়ি বছরে হয়নি। আওয়ামীকরণের ফলে কি এর ইমেজ নষ্ট হয়েছে? আমি মনে করি, না- নষ্ট হয়নি। বরং এখান থেকে নতুন কিছু শুরুর সম্ভাবনা এখনও আছে। শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম সপ্তাহেই গণজাগরণের প্রাথমিক রূপটা দেখা গেছে।
৫
আমরা দেখেছি, সরকারের মন্ত্রীকেও গণজাগরণ মঞ্চে পানির বোতল ছুঁড়ে মারা হয়েছে। কেন? দলনিরপেক্ষতার জন্য। যে ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে, সেই ট্রাইব্যুনাল সমালোচনা বা বিপক্ষে যায় এমন কিছু করলে কাউকে ছাড় দেয়নি। ডেকে নিয়ে বা অশরীরে তাকে সতর্ক করার খবর আমরা হর-হামেশাই পত্রিকায় পড়েছি। এই সতর্ক করার পরিসংখ্যান দিতে পারলে আরো ভালো হতো। শেষে স্কাইপে কেলেংকারি সংক্রান্ত কোনো খবরই প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ট্রাইব্যুনাল। সেই একই ট্রাইব্যুনাল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দন্ডের নির্র্দেশ দেওয়ার ঘন্টা দু’একের মধ্যে রায় প্রত্যাখ্যানের মতো ঘটনা ঘটলেও চুপ থেকেছে। প্রশ্ন হলো, কেন? এটা কি আদালত অবমাননা নয়? হ্যাঁ, এটা স্পষ্ট আদালত অবমাননা। তবে ট্রাইব্যুনাল কেন এ ব্যাপারে চুপ থেকেছে? এটা একটা জরুরি প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের এদেশে ফিরিয়ে আনা, প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তরুণদের ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন, বিচার শুরু হওয়া, জামায়াত-শিবিরের ফুঁসে ওঠার চেষ্টা, পুলিএশ ওপর হামলার মএধ। আইন-আদালত মানুষের জন্য, মানুষের তৈরি। মানুষ ইচ্ছে করলেই তা পরিবর্তন করতে পারে। সব সময় মতাবানরা এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এখন কেন হবেনা? এটা ঠিক শাহবাগের আন্দোলন ট্রাইব্যুনালকে প্রভাবিত করেছে। প্রভাবিত করাটাই ছিল এ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফলের পথে।
এখানেই রাজনীতিটা হয়েছে। স্বাধীনতার ব্যবসাটা এখানে আওয়ামী লীগ করেছে। এই ব্যবসাটা বিএনপির অবস্থানের বিরুদ্ধ। তারা স্বাধীনতাকে পুঁজি করে ব্যবসা আগে করেনি, এখন হঠাৎ করে করবে কীভাবে? তারপরও তাদের সুযোগ ছিল। তারাও পারতো শাহবাগে গিয়ে দু’একটা পানির বোতলের ঢিল খেতে। তা তারা করে নি। বরং তারা অপেক্ষা করেছে, আন্দোলনের পালস বোঝার চেষ্টা করেছে। মাঝখান থেকে আমার দেশ ধর্ম ব্যবসায় বেশ এগিয়ে গেল। এর সঙ্গে হঠাৎ ভোল পাল্টে যোগ দিল ইনকিলাব। জনপ্রিয় ধারার মিডিয়ার শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে যে দুর্বলতা ছিল, সেটা তারা শুরুতে তুলে ধরার চেষ্টা করলো। এটা ঠিক শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ধারার মিডিয়াগুলো বস্তুনিষ্ঠ থাকেনি। বস্তুনিষ্ঠতাকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা ব্যবসায়ী মিডিয়াও এক্ষেত্রে সতরকতার পরিচয় দিতে পারেনি।
অন্যদিকে ধর্মকে পুঁজির ক্ষেত্রে ব্লগার রাজিব হায়দারকে ব্যবহার করে ইনকিলাব ও আমার দেশ একটা নোংরা সাংবাদিকতা করেছে। তারা উস্কে দিয়েছে ধর্মান্ধদের। ব্লগে অনেক চটিও লেখা হয়। শাহবাগে আন্দোলনে যুক্ত দু’একজন ব্লগারও এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তাই বলে কিন্তু, তারা চটি ছাপে নি। তারা ইসলাম ধর্ম এবং হযরত মুহামমাদকে (স) অবমাননা করা হয়েছে এমন সব পোস্ট পত্রিকায় ছেপেছে। এরমধ্যে কিছু লেখা রাজিব হায়দারের বলে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে পরে দেখা গেছে, সেগুলো তার লেখা নয়। আমাদের দেশের প্রেস ইনস্টিটিউট শক্তিশালী হলে এদেরকে তাৎক্ষণিক শায়েস্তা করা যেত। কিন্তু সব সমস্যার দেশে এটা সম্ভব হয়নি। উল্টো ওইসব লেখা পড়ে ও শুনে কওমী মাদরাসা, আলিয়া মাদরাসা, সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ধর্মান্ধ তরুণ ও মোল্লা-মাওলানা গোষ্ঠী ইসলাম ও হযরত মুহামমাদকে (স) অবমাননা করা হয়েছে বলে ক্ষেপে গেল। তারা ইসলাম ও মুহামমাদের (স) সম্মান রক্ষার জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিল।
৬
জামায়াত স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। বিএনপি কিন্তু তা নয়। তাহলে জামায়াতের সঙ্কট মুহূর্তে বিএনপি কেন তাদের পাশে দাঁড়াল? বিএনপি বোধ হয় এখানে ভোটের হিসাব করেছে। শুধু কি ভোটের হিসাব? আন্দোলন গড়ে তোলার সুযোগটাও নিয়েছে।
শাহবাগের আন্দোলন তাদের ইমেজ সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা ঠিক জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে অটল থেকে বিএনপিও শাহবাগের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু সেটা তারা করেনি।
গত চার বছরে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তোলার সংকটে ছিল। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সহিংসতাকে পুঁজি করে বিএনপি এখন তার সেই সংকট কাটানোর চেষ্টা করছে। আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েই কিন্তু খালেদা জিয়া বিদেশের পত্রিকায় কলাম লিখেছিলেন। সেখানে তিনি বিদেশি হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। বিদেশি হস্তক্ষেপের চেয়ে দেশের মাওলানা-মোল্লাদের সহিংস আন্দোলনের দখল নেওয়া কি সহজ নয়? এটা খালেদা জিয়াও বুঝেছেন। যেখানে সরকারের এখনও এক বছর বাকি। সেখানে এতো আগেই একটা বড় আন্দোলন গড়ে তোলার এই সুযোগ বিএনপি হাতছাড়া করবে কেন? বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্দোলন বলতে লাশ পড়াকেই বুঝায়। গত কুড়ি বছরে আমরা তাই দেখেছি। যৌক্তিক রাজনীতি শাসক বা বিরোধী কেউ করে না। অহিংস আন্দোলনের যে সূচনা শাহবাগ করেছে তা এখনও চলছে। পাশাপাশি চলছে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন।
৭
এদেশে জামায়াতের অসংখ্য আর্থিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আছে। একটা গোষ্ঠী দীর্ঘ দিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা পেয়েছেন। এরা কিন্তু সবাই মাওলানা-মোল্লা নন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া এলিট ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীও আছে। সেই সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করছে জামায়াতের ভবিষ্যৎ। সক্রিয়তা বলতে এখন সহিংসতাকেই আপাতত ধরে নিতে হবে। কারণ, তারা গত চার বছরে কোনো অহিংস কর্মসূচির সুযোগ পায়নি বলে দাবি করছে।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী দুইটা বড় গোষ্ঠী আছে। ছাত্র-শিক্ষক-চিকিৎসক-পুলিশ-বিচারক-আমলা-সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী-বখাটে-সন্ত্রাসী-রাজনীতিবিদ হেন পেশা নাই যেখানে এই দুই গোষ্ঠীর সুবিধাভোগী নাই। যারা বিভিন্ন সময় এই দুই দলের সংকট মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। গত সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক বিরোধী আন্দোলনই এর প্রমাণ। এতোদিন বিএনপির গোষ্ঠীটি চুপ ছিল। তারা কোনো ইস্যু পায়নি। দলের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ এবার তারা পেয়েছে। মাওলানা-মোল্লাদের পাশাপাশি যদি তারাও দাঁড়ায়? এদের ওপর চলমান আন্দোলনের পরিণতি নির্ভর করছে।
৮
এর বাইরেও একটা গোষ্ঠী আছে। যারা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সরাসরি সুবিধাভোগী না। তারাই হলো জনগণ। এরাই ভোট দিয়ে একজনকে সরকারে বসায় আর অন্যজনকে বিরোধী বানায়। এই জনগণের বড় একটা অংশ সংবাদপত্র পড়ে না; টিভিও দেখেনা। তারা কিন্তু সহিংসতাকে ঘৃণা করে। এদের একটা অংশ দুই ঈদের দিন, শবে বরাতের রাতে আর প্রতি শুক্রবারে মসজিদে যায়। তারা যেমন নাস্তিক্যতা ঘৃণা করে তেমনি জঙ্গীবাদকেও ঘৃণা করে। যে কোনো ঘটনার জন্য এরা সরকারকে দায়ী করে। জামায়াতের প্রথম দিনের হরতালে রঙ মিস্ত্রী, ফুটপাতের পান-সিগারেট বিক্রেতা, ভ্যানওয়ালা আর চর্মকারের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই মনে হয়েছে। এরা কিন্তু কেউই পড়তে পারেনা। টিভি দেখার সময়ও তারা পায়না।
এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ঠিক কতোটা সহিংস হতে পারে? কতটা অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে তারা? বিএনপিকর্মীরা ধর্মান্ধ মাওলানা-মোল্লাদের সঙ্গে কতোটা আন্দোলন জমাতে পারে? ওদিকে দ্বিতীয় প্রজন্মের গণজাগরণ যাকে তারা আরেক মুক্তিযুদ্ধ বলছে, এটা যদি সহিংস রূপ পায়? সত্যিই কি দেশে আরেকটা যুদ্ধ হবে? যদি যুদ্ধ হয়ই কারা জিতবে? একটি স্বাধীন দেশে বাইরের সামরিক বাহিনী ছাড়া যুদ্ধ হয়না, হয় গৃহযুদ্ধ। জামায়াত নেতাদের তেমন হুমকি এবং শাহবাগ যোদ্ধাদের আরেক মুক্তিযুদ্ধের হুমকি থাকার পরও তেমন হওয়ার আশঙ্কা নাই। তবে যুদ্ধ না হলেও বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন দেশের অর্থনীতিতে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? আপাতত মনে হচ্ছে এটাই বিএনপির ঘরে জমা হবে। কারণ প্রথাগত রাজনীতিতে দেশের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।
সরকার এই সংকট যতোটা অহিংসভাবে মোকাবিলা করতে পারবে ততোটাই তারা সফল হবে। পুলিশ-সাধারণ মানুষ-জামায়াত-শিবির যেই মারা যাক, তারা এদেশের নাগরিক। নাগরিকের প্রাণ রা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিচারবহির্ভুত ভাবে যে কেউ মারা গেলে তার দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এই দায়িত্ব এড়াতে পারেনা। তবে সরকার যদি তাৎণিকভাবে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেয়? তবে সহিংসতা এড়ানো যাবে কি?
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধীদল আলোচনার মাধ্যমে সহজেই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এতে অন্তত সহিংসতা এড়ানো যাবে। আপাতত এমনটাই আমরা আশা করতে পারি। কিন্তু অতীত বলছে সে সম্ভাবনা নাই। সেটা না হলেও তৃতীয় কোনো শক্তি আপাতত আসছে না বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, বিপুল ভোটে নির্বাচিত সরকার মেয়াদ শেষ না করে যাবে না- এটা নিশ্চিত। এখনও সরকারের জনপ্রিয়তায় এমন ভাটা পড়েনি যে পদত্যাগ করতে হবে। এছাড়া দেশে সাংবিধানিক কোনো সংকটও তৈরি হয়নি। মুক্তমতের পথও বন্ধ হয়নি (আমার দেশ বা ইনকিলাবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি)। বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চার অবাধ সুযোগও রয়েছে। এটা কিন্তু বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবীরাও বোঝেন। তারা আসলে সরকারকে চাপে ফেলতে চান। তৃতীয় শক্তির কথা বললে এই চাপ আরও দৃঢ় হয় কি?