somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের আদালতে অসহায় পাখি

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মানুষ খুন হলে পরে মানুষই তার বিচার করে/ নেইকো খুনীর মাফ/ তবে কেন পায়না বিচার নিহত গোলাপ।/ বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে নেওয়া নিহত গোলাপ।’ কবি গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা গানটি এখানে আপাত অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। আসলে তা নয়। আহত বা নিহত গোলাপের বিচার করার কোনো আদালত আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। পশু বা পাখি নিয়ে নানা প্রসঙ্গে মানুষ আজকাল আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। এমন একটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে আমাদের দেশে। দেশে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। বলছি দুই ম্যাকাও পাখির কথা। প্রিন্স ও প্রিন্সেসের মতো গালভরা নামে যাদের ডাকা হয়। এমন নামে ঔপনেবেশিক চিন্তার দৈন্যতাই প্রকাশ পায় । অবশ্য একটা দিক থেকে এ নামকরণ সার্থক। রাজ-রাজরাদের আমলে ছিল দাসপ্রথা। দাসদের তো শিকলে বেঁধে রাখা হতো। রাজাদের আদালতে দাস মানুষকে শেকলে বেঁধেই হাজির করা হতো। তখন ওতে কেউ কিছু মনে করতো না। কিন্তু আধুনিকতার এই সময়ে এসে পেছনে ফেরার সুযোগ কি আছে

মানুষের শখের শিকলে বন্দি আজ দুই অসহায় পাখির জীবন। মানুষের আদালতে তাদের বন্দিত্ব কোনো বিচারের বিষয় না। তারা একসঙ্গে থাকতে পারবে কিনা সেটাও এক সৌখিন পোষকের দুশ্চিন্তা। আরেকজন নির্বিকার। আদালত তাও বিবেচনায় আনেনি। দু’টো পাখিকে শেকলে বেঁধে আদালতে নেওয়া হলো; বিচারক দেখলেন; কিন্তু তাঁর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো কিনা আমরা জানিনা। অবশ্য মানুষকেও শেকলে বেঁধে আদালতে নেওয়া হয়। পত্রিকার পাতায় তা ছাপাও হয়। এ আর এমনকি কথা! কিন্তু ওই ম্যাকাও পাখি দুটো কি খুন, ধর্ষণ, হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যাচেষ্টা বা অন্য কোনো অপরাধমূলক মামলার আসামী? তারা তো কোনো মামলার আসামী নয়। তাহলে কেন তাদের শেকলে বেঁধে আদালতে নেওয়া হলো? কেন বিচারক দুটো পাখি এক সঙ্গে থাকার বিষয়টি পাখিদের ওপর ছেড়ে দিলেন না? কেন তাদের শেকল ছিন্নের আদেশ দিলেন না?

বিচারের বিষয় ছিল, তারা এক সঙ্গে থাকতে পারবে কিনা। মানুষের আদালতের কি অধিকার আছে দু’টো পাখির একসঙ্গে থাকা বা না থাকার বিষয়ে রায় দেওয়ার? আর লাখ টাকার গন্ধের জোরে পাখির বন্দিত্বের বিষয়টি কারো নজরেই আসছে না! হায় মনুষত্ব! হায় পাখিত্ব! দেশে বিদ্যমান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনটির কথাও কেউ বলছে না। বলেই বা কি হবে? কারণ ওটাও মানুষের তৈরি। যারা কিনা পাখিকে শেকল পড়ায়; আদালতে ওকালতি করে; বিচারক হয়; দেখেও না দেখার ভান করে।

আমি নিজে একজন গণমাধ্যমকর্মী। তারপরও বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের ধরন দেখে হতবাক। বিরল প্রজাতির দু’টো বন্যপাখিকে শেকল পরিয়ে বা খাঁচায় আটকে রাখার প্রসঙ্গটি কোথাও উল্লেখ নেই। শেকল পরিয়ে যেভাবে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে, তা কি আইনসম্মত? প্রচলিত আইনে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণি আটকে রাখা দন্ডণীয় অপরাধ। তবে কেউ বিদেশ থেকে সরকারের অনুমোদন নিয়ে কোনো প্রাণি আনতে পারেন কিনা তা আমার জানা নাই। ম্যাকাও জোড়ার ক্ষেত্রে কি প্রচলিত আইন প্রযোজ্য হবে? নাকি এ বিষয়ে আরো আইন আছে?

ম্যাকাও বিরল প্রজাতির বন্যপাখি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। উইকিপিডিয়া বলছে, ম্যাকাও হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার বনের নীল ও হলুদ রঙের বিরল প্রজাতির তোতা পাখি। একটি খবরে বলা হয়েছে, পুরো এশিয়ায় সবমিলে ১০ জোড়া ম্যাকাও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণি আটকে রাখা বা পোষা অবৈধ। এটি মানলে বাচ্চাসহ পাখিদুটিকে ছেড়ে দিতে তারা বাধ্য। আর যদি তা না হয়? তাহলে দেখতে হবে তাদের কেনার ক্ষেত্রে সরকারি বিধি মানা হয়েছে কিনা। যদি এসবের কোথাও ত্রুটি পাওয়া যায়, তাহলে পাখি দু’টিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করাই উচিত।

পাখিজোড়ার একটির পোষক ইকরাম সেলিম। আরেকটির পোষক ড. আবদুল ওয়াদুদ। ড. একজন পাখি গবেষক। তাঁর বাড়ি একটি মিনি চিড়িয়াখানা। অন্যদিকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মাহতাব হোসেন একজন প্রকৃতি প্রেমিক। তিনি ওই চিড়িয়াখানা দেখেছেন। বন্দি পাখি দুটিও দেখেছেন। তিনি পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর একটি সংবাদপত্রের অনলাইনে মন্তব্য করেছেন, ‘প্রকৃতি-প্রেমিক হিসেবে আমি মাঝে মাঝে আব্দুল ওয়াদুদ সাহেবের মিনি চিড়িয়াখানায় যাই। তার সংগৃহীত পাখীগুলোকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখি। আলোচ্য পাখী জোড়াও আমি দেখেছি। আর তাদের একজোড়া বাচ্চাকেও দেখেছি। আবদ্ধ পরিবেশে আসলে ওদের খুবই কষ্ট হচ্ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। তারওপরও তো আমার ব্যক্তিগতভাবে ওখানে বলার কিছু নেই।’ আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সাধারণ মানুষের যে সহজ উপলব্ধি, তা কেন একজন পাখি গবেষকের নেই? নাকি এক জোড়া পাখিকে বন্দি রেখে হাজার পাখি বাঁচানোর ফন্দি আঁটেন বলে তিনি এর আওতার বাইরে? পাখিকে শিকল বা খাঁচা মুক্ত রেখে কি গবেষণা করা যায় না? নাকি একজন পাখি গবেষকের জীবন সফল করার জন্য বন্দিত্ব বরণেই পাখির জীবনের সাফল্যের কথা তিনি বলবেন? আহা আমাদের মানুষ জন্ম! গবেষক জন্ম!

আরেকটি প্রশ্ন না তুললেই নয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে পাখির পেছনে পোষকদ্বয়ের একজনের বার-তের লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। অন্যজনও লাখ টাকা খরচ করেছেন বলেই মনে হয়। তাঁরা নিয়মিত আয়কর পরিশোধ করেন কিনা তা বলা হয়নি।

সবকিছু যদি ঠিকও থাকে, প্রচলিত আইন মেনেও যদি তারা তা পুষে থাকেন; তবুও দুটি পাখিকে খাঁচা বা শেকলে বেঁধে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে কি প্রশ্ন তোলা যায় না? পাখিকে বেঁধে রেখে তার জন্য কল্পিত স্বর্গসংসার বানানোর অধিকার মানুষকে কে দিয়েছে? একজন মানুষকে শেকলে বেঁধে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় রেখে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিলেই কি তিনি হাসবেন? বন্দিত্ব কি কখনও সুখ-শান্তি-স্বস্তি আনতে পারে? পাখাহীন মানুষ যদি বন্দি থাকতে না পারে, পাখাযুক্ত পাখি কি করে বন্দি থাকবে? আমরা যেমন মানুষের মুক্তি চাই, তেমনি পাখিরও মুক্তি চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×