সরকার তড়িঘড়ি করে গত মঙ্গলবার নিশ্চিন্তপুরে নিহত ১১১ জনের মধ্যে ৪৩ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছয় লাখ টাকা দিয়েছে। আজ তাজরিন ফ্যাশনস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দিয়েছে।
টাকা দিয়েছে এটা সমস্যা না। সমস্যা হলো, বাকি ৬৮ পরিবার সরকারের দেওয়া ক্ষতিপূরণের টাকা পাবে কি? অসনাক্ত ৫৮ জনসহ বাকি সব পরিবারকে খুঁজে বের করে ক্ষতিপূরণের টাকা দিলে সেটাইকি ভালো হতো না?
পত্রিকার পাতায় স্বজন হারানোদের সচিত্র খবর ছাপা হচ্ছে। বাবা-মা সন্তানের লাশ খুঁজে পাচ্ছে না। সন্তান বাবা-মায়ের লাশ খুঁজে পাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে, নিশ্চিন্তপুরের ১১১ লাশের ৫৮ জনকে চিহ্নিত করা যায়নি। তাদের অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা হয়েছে। দাফনের আগে তাদের ডিএনএ টেস্ট রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ, ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরী বিভাগ এবং সিআইডি'র সমন্বিত দল এই ডিএনএ টেস্ট করেছে। এখন যারা লাশ খুঁজে পাচ্ছে না, তাদের ডিএনএ টেস্ট করালে স্বজনরা কিছুটা হলেও নিশ্চিত হতে পারতো। নয়তো বাকি জীবন তাদের অনিশ্চয়তা নিয়ে কাটাতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, এদের ডিএনএ টেস্ট করাবে কে?
ডিএনএ টেস্ট করালে মালিক, বিজিএমইএ বা সরকার সবারই ক্ষতি। লাশ অজ্ঞাত থাকলেই বরং লাভ। ক্ষতিপূরণের টাকা কম দিতে হল। ৫৮ লাশ চিহ্নিত হলে (তাজরিন ফ্যাশনসের মালিক দেলওয়ার হোসেনের ১৩ হাজার ৩৪২, বিজিএমইএ ঘোষিত ১ লাখ এবং সরকার প্রদত্ত ৬ লাখ হিসেবে) অতিরিক্ত প্রায় ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচ হবে। তাই কোনো পক্ষই এখন স্বজনদের ডিএনএ টেস্ট করাতে এগিয়ে আসছেনা।
লাশ অজ্ঞাত থাকলে আরো একটা লাভ আছে। এখন অনেকেই বলছেন, স্বজনের লাশ পাচ্ছেন না। আমরা ধরেই নিচ্ছি, অজ্ঞাত লাশের মধ্যেই হয়তো এটি আছে। কিন্তু সব লাশ সনাক্তের পরও যদি কেউ বলে লাশ পাচ্ছিনা, তখন লাশ সংখ্যায় যে কারচুপি হয়েছে তা ধরা পড়বে।
যে লাভের আগুনে কারো বাবা/ভাই/বোন/সন্তান/স্বামী/স্ত্রী পুড়ে ছাই হলো, একই লোভের কারণে কি স্বজনরা পোড়া লাশটাও পাবে না? সন্তান কি বাবা/মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে একফোঁটা চোখের জলও ফেলতে পারবে না? আমরা শুনেছি বাবা/মায়ের কাছে সন্তানের লাশ হলো সবচেয়ে ভারি। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে, তারা সেই ভারি জিনিসটা পেলে এখন হালকা হন। এদের জন্য কে এগিয়ে আসবে?