২০০৭ সালের ২৩শে জানুয়ারী।
প্রচন্ড শীত চারিদিকে, সোয়েটার টা গায়ে চাপিয়ে প্রতিদিনের মত ধূপখোলা মাঠে বসে ক্রিকেট খেলা দেখছি। খেলায় চরম উত্তেজনার চলছে, সে সময় হঠাৎ লক্ষ করলাম মাঠের এক কোনে টোকাই টাইপের দুটো ছেলে ক্রিকেট খেলছে, আদতে সেটাকে ক্রিকেট খেলা বলা মনে হয় উচিত হবে না, ব্যাট বলতে একটা পাতলা কাঠের টুকরা, হাতলের দিকটা চিকন করে কেটে নিলে ধরতে সুবিধা হয় তারা সেটাও করে নি।
বল বানিয়েছে একটা অল্প বয়স্ক জাম্বুরা দিয়ে। হাস্যকর বিষয়ে পরিনত হচ্ছে ব্যাট দিয়ে বলকে আঘাত করার চেষ্টা।
বাচ্চা দুটোকে ডাকলাম।
মৃদু পায়ে দুজন এসে দাড়ালো আমার পাশে, খেলায় ব্যাঘাত ঘটায় চরম বিরক্ত।
প্রশ্ন করলাম "কিরে এই গুলা দিয়ে কি ক্রিকেট খেলা যায় ?"
আব্বারে ব্যাট কিনে দিতে কইছিলাম দেইখ্যা খুব পিটাইছে ? ছোট প্লেয়ারটি উত্তর দিল।
এরা দুই ভাই।
ব্যাটের দাম কত ?
বড় ভাই - ১৫০ টাকা।
চল তোদের কে একটা ব্যাট কিনে দেই।
চরম অবিশ্বাসী চোখে দুই ভাই তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ।
স্টিকার লাগানো নতুন ব্যাট আর লাল স্কচটেপ দিয়ে প্যাচানো বল হাতে নিয়ে দুই ভাই হতভম্ভ হয়ে গেল।
মানস চোঁখে দেখতে পাচ্ছিলাম ছোট বড় দুই ভাই আজ ব্যাট টাকে জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমানোর জন্য মারামারি করছে।
পরের দিনটা আমার জন্যে সবচেয়ে বিশ্ময় নিয়ে এসেছিলো, বিকেলে মাঠে গিয়ে দেখি যথা নিয়মে দু'ভাই নতুন ব্যাট বল নিয়ে খেলায় মগ্ন, আমাকে দেখে এক দৌড়ে কাছে এসে হাজির।
"মামা এদিকে আসেন" এরা আমাকে মামা বলে ডাকতে আরম্ভ করেছে।
ছোট ভাইটা একটা প্লাস্টিকের বক্স এনে আমাকে দিয়ে চকচকে চোখে বলল "মামা খান"।
ময়লা ধরা প্লাস্টিক বক্সের মাঝে তেলে ভাজা কয়েকটি পিঠা। ছোট্ট দুটা বাচ্চা চরম আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় আছে কখন একটা টুকরা মুখে দেব।অজানা উপকারীর জন্য কিছু করার আকুতি তাদের মাঝে প্রবল।
ময়লা চিটচিটে বক্সের সেই পিঠা আমি পরম তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছিলাম, মায়ের হাতের অনেক স্বুশাদু পিঠা খেয়েছি তবুও সেদিনের খাওয়া পিঠা আমার স্মৃতিতে অলাদা একটা স্থান দখল করে আছে।
দুটো পথশিশু আমাকে মাত্র ১৮৫ টাকার বিনিময়ে একটা স্মরনীয় দিন উপহার দিয়েছিল।
সেদিন ওদের কে ব্যাট বল কিনে দিতে আমার মাত্র ১৮৫ টাকা খরচ হয়েছিলো।
অট : আমার বন্ধুপ্রতিম ছোট ভাই বোনেরা পথশিশুদের জন্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে এগুচ্ছ, আগামী ২৮শে মার্চ টি, এস সিতে তাদের প্রথম উদ্দ্যোগের সফলতা কামনা করছি।
লেখাটা সেই মহৎ উদ্দোক্তাদের কে উৎসর্গিত।