মাস ছয়েক আগে এক বন্ধু আড্ডার মাঝে শফিকের প্রসঙ্গ তুলেছিলো।
অল্প বয়সে বিয়ে করে এক সন্তানের বাবাও হয়ে গেছে, জীবনে অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছে কন্ত কোন কিছুতেই সফল হতে পারেনি ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করা শফিক।
আত্বহত্যা করার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে। সফল হতে পারেনি এক্ষেত্রেও।
বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম "শফিক এখন কোথায়"?
সে জানালো শফিক এখন তার সাথে ঢাকায় আছে।
বললাম "একদিন নিয়ে আসেন কথা বলা যাবে"।
দিন সাতেক পরে শফিককে নিয়ে একেবারে বাসায় হাজির বন্ধুটি।
বেশ নম্র ভদ্র এক ছেলে, কথা বলে বেশ লাগলো।
পিয়নের চাকরি দেয়া অসম্ভব ছিলোনা তবে আমার মাথায় তখন একটু ভিন্ন রকম পরিকল্পনা কাজ করছিলো।
শাহবাগ মোড়ে একটা মোবাইল রিচার্জের দোকান (অস্থায়ি) করে দেয়া যায় তবে কেমন হয়।
কয়েকজনের সাথে আলোচনা করলাম, সবাই সম্মতি দিলো, সমস্যা দেখা দিলো অন্যখানে, শাহবাগে দোকান নিতে হলে ক্ষমতাসিন দলের কোন ছাত্রনেতার সুপারিশ লাগবে।
সেটাও হলো (কিভাবে হলো তা লিখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে)।
হাজার চল্লিশেক টাকার ব্যাবস্থা করা বেশ কঠিন হলো, জমানো বলতে কিছুই ছিলো না, বন্ধু কিংবা পরিচিত জনের কাছ থেকে নিয়ে মোটামুট আটত্রিশ হাজার টাকা হলো, তিনটা নতুন মোবাইল, বড় রংগিন ছাতা, নতুন টেবিল চেয়ার নিয়ে এক বিকেলে শফিক কে বসিয়ে দিয়ে এলাম।
প্রথম দুদিন খুব ভালো কাটলো, কাস্টমার পাচ্ছিলো প্রচুর, বিকেলের দিকে শাহবাগ কেমন লোকারন্য হয় সবাই জানেন।
সমস্যা হলো তৃতীয় দিন থেকে, সকাল দশটার দিকে শফিকের সবগুলো নাম্বার বন্ধ পেলাম, অনেকবার চেষ্টা করে দোকানে গিয়ে দেখলাম সে নেই, পাশের দোকানিরা জানালো সে আসেই নি আজ।
বেশ কয়েক মাস কেটে গেলো আজও কোন খোঁজ পাই নি শফিকের, ধার করা টাকা পরিশোধের দিকে। তবে টাকাটা বড় কথা না যে বিশ্বাস সে নষ্ট করেছে সেটা মূল্য অনেক বেশি। সত্যিকার অর্থে শফিকের এই প্রতারনা আমাকে ভিষন পিড়িত করে।
এই পোষ্টের শিরোনাম এবং অর্ধেকটা আমি লিখেছিলাম যেদিন শফিক প্রথম দোকানে বসেছিলো, ভেবেছিলাম সবার কাছে দোয়া চাইবো যাতে করে ওর জীবনটা নতুন করে আরম্ভ হয়। কিভাবে সমস্ত কিছু বদলে গেল।
শিরোনাম বদলাতে মন চাচ্ছে না।
এর পরেও না হয় সবাই শফিকের জন্য দোয়া করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫