নয় তলা বিল্ডিং।
নীচ তলা গোডাউন, ২য় তলায় একটা জাপানী প্যাকেজিং কোম্পানীর অফিস, ৪, ৫, ৬ তলা খালি, ৭, ৮, ৯ তলা মিলে একটা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, আমার কর্মস্থল।
তিনটা ফ্লোর খালি রাখার ব্যাপারে বিল্ডিং মালিকের যুক্তি হল তিনি কোন দেশি কোম্পানীকে ভাড়া দিবেন না, বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে ফ্লোরগুলো অব্যাবহৃত ভাবে পড়ে রয়েছে।
এত উচু বিল্ডিংয়ে লিফট নেই, টপ ফ্লোরে অফিস।
চরম কষ্টে সিড়ি বেয়ে দিন কাটছিল ।
আট টা - ছয়টা অফিস টাইম হলেও বেশিরভাগ সময়ই ছয়টা পার হয়ে নয়টা দশটা কিংবা রাত তিনটা চারটায় ঠেকত।
ঘটনার দিন।
চিটাগং পোর্টে মাল পাঠাতে হবে, ইনেস্পেকশন শেষ হতেই রাত দশটা বেজে গেল, তার মানে ট্রাকে মাল আপলোড করতে করতে রাত ৩/৪ টা বাজবে, প্যাকিং লিস্ট ইনভয়েস ড্রাইভারের হাতে দিয়ে আমার অফিস ছাড়তে হবে ট্রাক চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেবার পর।
রাত ১টা বেজে ১৭ মিনিট, হাতের কাজ প্রায় গুছিয়ে ফেলেছি, পিয়ন ছেলেটা চা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
পিপাসা লেগেছিল তাই পানি দিতে বললাম ১ গ্লাস।
গ্লাস টা ধোয়ার জন্য সে বাথরুমে ঢুকলো, বলা প্রয়জন এই অফিসের বাথরুম গুলো এখনকার ডেভেলপারদের বানানো ফ্লাটের বেডরুমের সমান বড়।
পিয়ন ছেলেটা বাথরুমে ঢোকার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো সাথে সাথে ভারি বস্ত পতন এবং গ্লাস ভাঙার শব্দ পেয়ে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বাথরুমে ধুকে দেখি সফিক (পিয়নের নাম) ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
পড়ার সময় গ্লাসটা ছেড়ে দেবার সময় পায়নি হাতে থাকা অবস্থায় সেটা মেঝেতে বাড়ি খেয়েছে, ফলাফল বিশ্রীভাবে হাতটা কেটে বাথরুমের ফ্লোরের হালকা পানির সাথে মিশে "ক্রিমসন" কালার ধারন করেছে।
ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে দ্রুত লোকজন ডেকে নিয়ে এলাম।
এত রাতে ডাক্তার পাওয়া যাবেনা তাই ফাস্টএইড দেয়া হলো, চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরার পরে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হলো।
এর পর দীর্ঘদিন শফিকের সাথে আমার দেখা হয়নি। শুনেছি এই ঘটনার পর বেশ কিছু দিন অসুস্থ ছিলো পরে চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।
সফিকের সাথে আমার দেখা হলো বসুন্ধরা সিটিতে, প্রয়জনীয় কিছু কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলাম হঠাৎ এক দোকানের মধ্যে থেকে কে যেন "স্যার" বলে ডাক দিলো, ফিরে তাকিয়ে দেখি সফিক।
জোর করে তাকে ধরে নিয়ে বসলাম একটা ফুড কোর্টে, অনেক কথার মাঝে অনুমিত ভাবেই উঠে এলো সে রাতের কথা, সফিক নিজে থেকে প্রসঙ্গটা তুলল।
তার বলা ঘটনাটা ছিলো এরকম:
সে রাতে আপনাকে পানি দেবার আগে গ্লাস টা পরিষ্কার করার জন্য বাথরুমে র দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে দেখলাম ।
কমোডের ভেতর থেকে অদ্ভুত একটা প্রাণী যেটার শরীরের অর্ধেকটা বাইরে বাকি অর্ধেক কমোডের ভেতরে।
আদতেই সেটাকে শরীর বলা যায় কিনা জানিনা, শুধু মেরুদন্ডের হাড়ের মত অংশ টুকু ছাড়া আর কিছু নেই, সাপের মত লাগছিলো কিছুটা।
তবে সবচেয়ে অদ্ভুত ছিলো প্রানীটার মাথা, মুখের চামড়া শুকিয়ে হাড়ের সাথে লেগে আছে, চোখ গুলো স্বাভাবিকের চাইতে খানিকটা বেশি বাইরে বের হয়ে আছে, মাথায় পাটের আশের মত ফিনফিনে চুল।
বাথরুমের ভেল্টিলেটরের পাশে একটা মাকড়সার বাসা ছিলো। সম্ভবত মাকড়সাটাকে ধরার চেস্টা করছিলো আমি ঠিক সে সময়ে ঢুকে পড়েছিলাম, পড়ে যাবার আগ মুহূর্তে দেখতে পেলাম প্রাণীটা দ্রুত কমোডের ভেতরে ঢুকে গেল।
এর পরের কিছু ঘটনা আপনি জানেন, এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে পরদিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দিন পনের বিছানায় পড়ে ছিলাম।
আমার অসুস্থতা বাড়তে থাকলে রুমমেটরা আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়।
অসুস্থ থাকা অবস্থায় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম পুরনো কর্মস্থলে কোন ভাবেই ফেরত যাবো না।
সু্স্থ হয়ে এক আত্বীয়ের সহযোগীতায় সেলসম্যানের চাকরি নিয়েছি এই মার্কেটে।
সে রাতের ঘটনা কাউকেই বলিনি, কেবল আপনাকেই বললাম স্যার।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:৩০