ট্রেনটা বেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশের ট্রেন এত দ্রুত চলে জানা ছিলোনা।
সৈয়দপুর থেকে পোড়াদহ যাচ্ছি, সাথে সদ্য বিবাহিত বন্ধু ও তার নববধু, বন্ধুটি নিলফামারীতে চাকরি করে, তার বিশেষ অনুরোধে ঢাকা থেকে সরাসরি কুষ্টিয়া না গিয়ে প্রথমে নিলফামারী এসে পরে ট্রেনে করে যাওয়া মূল উদ্দেশ্য রাতে ট্রেন ভ্রমনের নির্মল আনন্দ উপভোগ।
আট নয় ঘন্টার জার্নি, প্রথম ঘন্টা সবাই মিলে গল্প করে কাটালাম, সময় যত গড়াচ্ছিল ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা কমে আসছিল, কাছাকাছি গন্তব্যের যাত্রী যে পরিমানে নেমে যাচ্ছে তার থেকে উঠছিল অনেক কম।
একটানা বসে থাকা কষ্টকর তাছাড়া ট্রেনের আসন গুলো খুব একটা আরামদায়ক নয়, হাটাহাটি করার জন্য উঠলাম।
ট্রেনের মধ্যে সামান্য আলো টিম টিম করে জ্বলছে , পায়ে হাটার যায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে মালামালের বস্তা রাখা, দুরের যাত্রীরা বেশিরভাগই ঘুমিয়ে পড়েছে।
অর্ধেক আসন খালি পড়ে আছে, জানালার পাশে একটা খালি আসন খুজতে লাগলাম, বাস কিংবা ট্রেন জার্নিতে সবচেয়ে আকাংখিত বস্ত হল জানালার পাশের আসনটি। তিন জনের বসার একটি আসন পুরা খালি তবে তার সামনের আসনটিতে কেউ একজন ঘুমাচ্ছে।
ঘুমাচ্ছে ঘুমাক, আমি গিয়ে বসে পরলাম জানালার পাশে তবে তার আগে বন্ধুকে বলে এলাম কোথায় আছি।
পাশে নতুন বউ বলে সম্ভবত একবার বলাতেই রাজি হয়ে গেল, না হলে কোন ভাবেই রাজি করা যেত না। হায়রে দুনিয়া বউ পাশে থাকলে বন্ধুকে আর মনে থাকে না।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, ট্রেনের খটকট আওয়াজ মনে হচ্ছে একটা ছন্দ পেয়ে গেছে, মাঝে মাঝে লম্বা হুইসেল সেই ছন্দে ব্যঘাত ঘটাচ্ছে, দিগন্ত বিস্তির্ন মাঠ হালকা ধোয়াটে হয়ে আছে কেমন যেন একটা পরাবাস্তব পরিবেশ। ট্রেনের স্পিকারে সুরা আর রহমান তেলওয়াত হচ্ছে, সব মিলিয়ে চমৎকার লাগছিল।
কোন এক স্টেশনে ট্রেনটা থেমে আছে এ সময় আমার সামনে শুয়ে থাকা লোকটা ধড়মড় করে উঠে বসে বলতে লাগল "কোন স্টেশনে আসলো ট্রেন হ্যা" ? আশে পাশে কেউ নেই শুতরাং আমাকেই উত্তর দিতে হবে, স্পিকারে অবশ্য বলেছে কোথায় থামতে যাচ্ছে আমি খেয়াল করি নি।
ভদ্রলোক একগাল হেসে বলল "এই পথে প্রথম যাচ্ছেন মনে হচ্ছে"?
আমি মাথা ঝাকালাম।
"ট্রেন এখন বগুড়ার শান্তাহার স্টেেশনে"
আমি শুধু বললাম "ও"।
ভদ্রলোকের বোধ হয় কথা বেশি বলার সমস্যা আছে-বলেই চলেছেন-
বুঝলেন ভাই সাহেব হিলি ক্রস করার সময় অন্যরকম একটা অনুভুতি হয়, নো ম্যানস ল্যান্ড দিয়ে ট্রেন চলে, দিনের বেলা হলে যদি হত সিমানা পিলার আর বি এস এফের ওয়াচ টাওয়ার দেখতে পেতেন।
ঈশ্বরদী স্টেশনে ভাপ ওঠা গরম পাওরুটি পাওয়া যায় সাগর কলা দিয়ে খাবেন মনে হবে বেহেস্তের খানা একেবারে।
আমি শুধু হ্যা হু বলে সাড়া দিয়ে যাচ্ছি, ভদ্রলোক কেন এই গরমের দিনে কোট পরে আছেন সেটা ভাবছি।
কথা বলাতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছি না বুঝতে পেরে থামলেন।
জানালা দিয়ে বাইরে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার আমার দিকে ঘুরে ইতস্তত করতে লাগলেন।
বুঝলাম কথা না বলে থাকতে পারছেন না।
উৎসাহ দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম, "প্রশ্ন করলাম কিছু বলবেন"?
চরম উৎসাহ নিয়ে কথা বলতে আরম্ভ করলেন " বাইরের পরিবেশটা দেখছেন, উত্তরান্চল ছাড়া এত বড় ফাঁকা মাঠ বাংলাদেশর কোথাও নেই, কলা গাছ গুলো কেমন ভূতের মত লাগছে দ্যাখেন দ্যাখেন, পাতা গুলো এমন ভাবে নাড়াচ্ছে মনে হয় কাছে ডাকছে।"
"ভাইসাহেব গল্প শুনবেন একটা, ভূতের গল্প"?
এই নিশুতি রাতে ভূতের গল্প! খারাপ লাগবেন।
হ্যা না কিছু বলার আগেই দেখি ভদ্রলোক গল্প শুরু করে দিয়েছেন :
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮