২০১৩ সালের আগস্টে আমাদের অফিসে জয়েন করে মেয়েটি।
দেখতে অসম্ভব সুন্দর, যেমন গায়ের রং তেমন চেহারা, সব মিলিয়ে সে যে কোন পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম।
আমাদের অফিসের এ্যাকাউন্টস ম্যানেজারের দৃষ্টি বোধ হয় বেশি আকর্ষিত হলো, নানা বাহানায় সে মেয়েটির সঙ্গ পাবার চেষ্টা করতো।
ক্যান্টিনে খাওয়া শেষ হয়ে যাবার পরেও দৃষ্টিকটু ভাবে তারা বসে গল্প করে যেতে থাকতো, সময়ে অসময়ে চা খাবার নাম করে ক্যান্টিনে নেমে আসতো।
ব্যাপারটা নিয়ে সামলোচনার অন্ত ছিলোনা।
ফলাফল যা হবার তাই হলো মেয়েটির কাজের বিষয়ে অনাগ্রহ খুব দ্রুতই ম্যানেজমেন্টের কাছে প্রকাশ পেল এবং তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হল।
মূল বিষয়ে আসি।
এই মেয়ে একদিন আমার তার মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আমার মোবাইল থেকে একটা কল করেছিল। চাকরি থেকে চলে যাবার পরে আমি তাকে ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্ত গত কাল এক যুবকের ফোন কল সব কিছু বদলে দিলো, যা নিয়ে এই পোস্টের অবতারনা।
কথোপকথনের ছিলো এমন :
আমি : হ্যালো।
যুবক : হ্যালো ভাইয়া, আমাকে আপনি চিনবেন না, আপনি কি মৌসুমী (ছদ্মনাম) কে চিনেন ?
আমি : কোন মৌসুমি ?
যুবক : আপনার সাথে জব করে যে মৌসুমী!
আমি : ও আচ্ছা, কিন্ত সে তো চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।
যুবক : (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) চলে গেছে? কোথায় গেছে বলতে পারেন ?
আমি : তাতো জানি না। আপনি কে বলুন তো আর আমার কাছে মৌসুমী সম্পর্কে কেনই বা জানতে চাচ্ছেন?
যুবক : আসলে ভাইয়া, আমরা একজন আরেক জন কে ভালোবাসি, কিছুদিন হলো কোন ভাবেই ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা, আপনার এই নাম্বার থেকে একবার ফোন দিয়েছিলো তাই ভাবলাম আপনাকে ফোন দেই যদি কোন খোঁজ পাই।
আমি : যে ছেলেটা তাকে প্রতিদিন বাইকে করে অফিসে দিয়ে যেত আপনি কি সেই।
এবারে যুবকটা পুরাপুরি ভেঙ্গে পড়লো, তার সাথে আমার মূল অংশটা হলো:
ছেলেটা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থেকে পনের লাখ টাকার মত পুঁজি নিয়ে দেশে এসেছিল ব্যাবসা করবে বলে, দেশে আসার কিছু দিন পরেই মৌসুমীর সাথে তার দেখা অতঃপর সম্পর্ক এবং অতঃপর ডেটিং।
ডেটিং আবার নর্মাল ডেটিং না বেশিরভাগ সময় রেন্টে কারের ঝকঝকে গাড়িতে লংড্রাইভে যাওয়া, বিলাস বহুল চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ছাড়া মোটেও অন্য কোথাও খেতে বসতোনা মেয়েটি।
নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন উপহার উপহার সামগ্রী যার মধ্যে এইচ পি ল্যাপটপ, এক্সপেরিয়া মোবাইল, ডায়মন্ডের নেকলেস উল্ল্যেখ যোগ্য।
সব মিলিয়ে ছেলেটার টাকা প্রায় শেষ, যখন থেকে সে বুঝতে পেরেছে ছেলেটার টাকা ফুরিয়ে আসছে তখন থেকেই আস্তে আসতে সরে পড়তে আরম্ভ করেছে। এখন যোগাযোগ একেবারে বন্ধ।
বাইকে করে কেউ একজন তাকে অফিসে দিয়ে যেত শুনে যা বোঝার বুঝে গেছে সে।
কান্না জড়িত কন্ঠ বলা ছেলেটির শেষ কথাগুলো বড্ড কানে বাজছে " ভাইয়া আমার সব টাকা ওর পিছনে গেছে দুঃখ নাই কিন্ত ও আমার জীবনে ফিরে আসুক আমি আর কিছু চাই না। শত পরিশ্রম করে হলেও আমি ওর চাওয়া পূরণ করবো, শুধু ও যেন না হারায় আমার জীবন থেকে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি, এছাড়া আর কি বা করার আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৯