প্রচারমাধ্যমের কোনো দায়িত্বহীন সংবাদই সৃষ্টি করতে পারে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। এতে করে সাধারণ পাঠক যেমন বিভ্রান্তির শিকার হন তেমনি অপূরণীয় ক্ষতি হয় রাষ্ট্র এবং সরকারের। এসব সংবাদ প্রচারের জন্য কোনো কোনো প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে একটি বিশেষ মহল। তারাই প্রচারমাধ্যমকে ব্যবহার করে। অনেক সময় সফল হয় আবার বিফলেও যায়। একটি গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। শয়তান একটি নগরী ধ্বংসের জন্য একটুকরো মিষ্টির কণা নগরীতে ফেলে রাখে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে আসতে থাকে পিঁপড়াসহ নানা কীটপতঙ্গ। এসব কীটপতঙ্গ ধরতে উড়ে আসে এলাকার নানা রকম পাখি। সে সঙ্গে আসে অন্য রাজ্যের একটি পাখিও। সেই পাখির সঙ্গে বিবাদ বাধে নগরীর একটি পাখির। এতে ওই রাজ্যের পাখিটির মৃত্যু হয়। এ সংবাদে রাজ্যের রাজা ক্ষুব্ধ হন এবং তখনই তিনি নগরীতে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে নগরীটি ধ্বংস হয়ে যায়।
কিছু সংবাদমাধ্যম কখনো কখনো এরকম শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে গণরোষ সৃষ্টির জন্য একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয় জাল পরিহিত বাসন্তী নামে একটি প্রতিবন্ধী মেয়ের ছবি। তখন এই সাজানো ছবিটি ব্যবহার করে দেশে সৃষ্টি করা হয় নাটকীয় পরিস্থিতির। ছবিটি কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে ওঠে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়। এরপরই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। ঘটনার নেপথ্যের নায়করা লাভবান হয় ঠিকই; কিন্তু লাভ হয়নি সেই বাসন্তীর। অথচ প্রাণ দিতে হল জাতির জনকের। পরবর্তী সময়ে বাসন্তীর ওই ছবি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভোটপ্রার্থী হয়েছে কোনো কোনো দল। দলের নেতারা মন্ত্রিত্বের শীর্ষ পর্যায়েও আসিন হয়েছেন। এভাবে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তনও ঘটেছে; কিন্তু সেই প্রতিবন্ধী মেয়েটির ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। রাজনৈতিক এই পট-পরিবর্তনের পর সামরিক শাসক ক্ষমতায় এসেই অবাধে দিয়ে দেয় সংবাদপত্রের ছাড়পত্র। তখন অনেক দুর্নীতিবাজ, অসৎ ব্যক্তি, কালোবাজারির হাতে চলে যায় সংবাদপত্রের মালিকানা। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন পেশাদার সাংবাদিকরা। প্রয়োজনে তারা এসব সাংবাদিককে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। এভাবেই গড়ে উঠতে থাকে মিডিয়া জগত সে কারণেই কিছু কিছু পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলকে সংবাদ পরিবেশনার স্বাধীনতার নামে প্রলাপ বকার স্বাধীনতা ভোগ করতে দেখা যায়। এরা যে যার মতো দায়িত্বহীন সংবাদ পরিবেশন করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র এবং যাকে নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চটকদার সংবাদ প্রচার করা হয় সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। অপসাংবাদিকতা দ্বারা কখনো কখনো সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টাও চালানো হয়। যারা এসব কাজ করান তারা সরকারের ভেতরে এবং বাইরে থাকেন। এই চক্রের বিরুদ্ধে কখনো কোনো সরকার ব্যবস্থা নিতে পারেনি বা ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগও নেয়নি। যদি তেমন কোনো উদ্যোগ থাকত তাহলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এ ধরনের অনেক উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে কিছু সংবাদমাধ্যম দায়ী। তারা এসব পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপকৌশল অবলম্বন করে। আর এদের নেপথ্যে থাকে কিছু কুচক্রী মহল। শুধু তাই নয়, এসব সংবাদমাধ্যম ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এরকম যথেষ্ট নজিরও রয়েছে।
প্রায় দুমাস আগে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি প্রচারমাধ্যম ডেসটিনির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। কথায় বলে_ কোনো দেশকে ধ্বংস করতে চাইলে তার সংস্কৃতি ধ্বংস করে দাও। তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার আর অর্থ বিলাও। শোনা যাচ্ছে, এ জন্য একটি প্রতিষ্ঠান বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। এই অর্থ অবশ্য জনস্বার্থে নয়, নিজেদের স্বার্থে ডেসটিনিকে ধ্বংস করার জন্যই এই ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে কাদের জন্য, কোথায় ব্যয় হবে তা পরিষ্কার হয়ে উঠতে শুরু করেছে। তারা ডেসটিনিকে যুবকের অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। যুবকের আমানতকারীরা আজো তাদের কোনো আমানত ফেরত পায়নি। পথে বসেছে অনেকেই। এখন যুবকের সেই অর্থ-সম্পদ লুটপাটের জন্য একটি মহল পাঁয়তারা করছে। ঠিক তেমনি ডেসটিনির অর্থ-সম্পদ লোপাট করার জন্যই এই চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যদি তাই না হবে, সরকারকে বিরাট অংকের রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানে যারা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন, তাদের মধ্যে যখন কোনো সংশয়, ভয়, উৎকণ্ঠা নেই তখন কেন তাদের এই গাত্রদাহ? কথায় বলে, মায়ের চেয়ে বেশি দরদিরা হয় ডাইনি।
যারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অপ্রচারে নেমেছেন তাঁদের কখনো নিজেদের একটু তলিয়ে দেখেছেন? তারা কোথা থেকে উঠে এসে, কিভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন? তাদের চরিত্র কতটুকু পবিত্র? রাষ্ট্রের খাসজমি দখল, রাজস্ব ফাঁকি, কর্মচারীদের ঠকানো, প্লট নিয়ে ক্রেতা বা জমির মালিকের সঙ্গে প্রতারণা করে এ পর্যন্ত কত সম্পদের মালিক হয়েছেন তা সবারই জানা। শুধু তাই নয়, 'হালাল' পণ্যের নামে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে সীমান্তের ওপারে পাঠানো হয়েছে কী পরিমাণ তা 'ওপেন সিক্রেট' হয়ে গেছে। মানুষ হত্যাসহ নানা অপকর্মের জন্য এসব ব্যক্তিকে কারাবরণও করতে হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, এ যেন ভূতের মুখে রামের নাম। তারা কী পারবে ডেসটিনিতে যারা কর্মরত আছেন তাদের শতকরা একভাগ মানুষের দায়িত্ব নিতে? অথচ যে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ৪৫ লাখ মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতার চেতনা সঞ্চার করছে তখনই এই কুচক্রী মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছে।
একটি গল্প মনে পড়ছে। হঠাৎ কিছু মানুষ 'চোর চোর' বলে একটি চোরকে ধাওয়া করে। আশপাশের মানুষ কিছু না বুঝেই ওই চোরের পেছনে ছুটতে থাকে চোর চোর বলে। চোর বেচারা কিছুদূর যাওয়ার পর নিরুপায় হয়ে নিজের খোলস পরিবর্তন করে ওই ব্যক্তিদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সেও চিৎকার করে ছুটতে থাকে 'চোর চোর।' বিষয়টি ওই চোরের মতোই। আকল মন্দরা ঠিকই বুঝতে পারছে যে এখন চোরেরাই ডেসটিনির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মাঠে নেমেছে।
সুত্র: দৈনিক ডেসটিনি