পড়া না পারায় ছাত্রের ওপর শিক্ষকের বর্বরতা। মাদরাসা লিল্লাহবোর্ডিঙের ছাত্রকে আমপাড়ার অপরাধে নির্যাতন, ছাত্র পেটানোর অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বিচারের কাঠগাড়ায়। তিনটি শিরোনামের পৃথক তিনটি প্রতিবেদন গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদগুলোকে গুরুত্বও কম দেয়া হয়নি। যে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে তারা শিশু। এক সময় মাস্টার মশাইদের মারধরের প্রচলন ছিলো। সে প্রচলন ক্ষতিকরই শুধু নয়, শিক্ষাগ্রহণসহ মেধাবিকাশে চরম অন্তরায়। নানাভাবেই পরীক্ষিত।
শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেধা তো রয়েছেই। দরকার তার বিকাশ। এ জন্য পরিবেশের বিকল্প নেই। শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ যদি ভীতিকর হয়, তাহলে বিদ্যালয় বিমুখই শুধু হয় না, ঝরেপড়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া পরিবেশ বিনোদনমূলকের বদলে ভীতিকর গুরুগম্ভীর তথা শ্বাসরুদ্ধকর হলে শিক্ষাদানের চেষ্টা পূর্ণতা পায় না। যাদের জন্য শিক্ষাদান তাদের মধ্যে আতঙ্ক থাকলে তাদের মেধার বিকাশ ঘটে না। নানাভাবেই এগুলো পরীক্ষিত। শিক্ষকের ভয়ঙ্করমূর্তি ক্ষতিকর। ফলে আগের সেই প্রচলন প্রত্যাখানের আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে তেমন ফল না মেলার কারণেই মূলত প্রঙ্গাপন জারি। নির্যাতক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধি বর্তমানে বিদ্যমান। এরপরও শিক্ষার্থী নির্যাতন, শ্রেণিকক্ষে বেত নিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি যে কেউ করছেন না তা নয়। বেত নিতে না পেরে অনেকে লেখার কালোদেয়াল মোছার তুলি তথা ডাস্টারটিকেও বেত হিসেবে ব্যবহার করেন। যা বর্তমান শিক্ষাদান ব্যবস্থায় গুরুতর অন্যায়, অপরাধ। তাই বলে শাসন করা যাবে না? অবশ্যই। তাই বলে পিটিয়ে! না, পিটিয়ে চোখ রাঙিয়ে শাসন নয়। এর অপর নাম নির্যাতন। সুপথে রাখতে হলে স্নেহের বাঁধনেই সুপথ দেখাতে হবে। বোঝাতে হবে। এর সুফলতা পেয়েই তো শিক্ষাদানের পুরোনো রেওয়াজ পাল্টানোর নিদের্শনা, প্রজ্ঞাপন, বিধি প্রণয়ন। শিক্ষাদান, গ্রহণ এবং পরীক্ষার উদ্দেশ্যগুলো অবশ্যই একজন শিক্ষকের অজানা নয়। একজন শিক্ষার্থী কতোটা জানে তা মাপার জন্য কিন্তু পরীক্ষা নয়, পরীক্ষার উদ্দেশ্যে হলো সে কতোটা শিখলো। তাই যদি হয় পরীক্ষার উদ্দেশ্য তাহলে শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশই তো শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার পরিবেশ শিক্ষাগ্রহণের মতো হতে হবে। মেধাবিকাশের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের বদলে স্নেহময়ী মুক্ত পরিবেশই কাম্য। শিক্ষাগ্রহণে আন্তরিক করতে হলে বিনোদনমূলক পরিবেশেরও গুরুত্ব অনেক। শিশুকালে কোনো কোনো শিশুর মধ্যে বাড়বাড়ন্ত, বাঁধনছুট মনোভাব যেমন থাকে তেমনই থাকে জানার আগ্রহ। সেই আগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর আমপাড়া? না বুঝে যদি পেড়েই ফেলে আর সে কারণে শিশু শিক্ষার্থীকে পেটাতে হবে? ভাবতেও কষ্ট হয়। এ ধরনের মানসিকতা বদলে সকলে সকল শিশুর জন্য দরদি হোক, হোক আন্তরিক।