বে-চারা একজন শিক্ষক! তাও আবার প্রধান পদে! খামখেয়ালি আর কি! মন চাইল তো ইসলাম নিয়ে যাচ্ছে তা বলে ফেললেন!! এত চাপাতির কোপ, এত সহিংসতা দেখে ও উনি সাহস হারান নাই! প্রশংসা করতে হয় উনার সাহসের(!!!) আসলে এই দেশে মিডিয়ায় আসা আর হিরো হওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আজেবাজে কিছু বলা আর লেখা।
এসব মুত্রমনারাই পৃথিবীর শান্ত পরিবেশের জন্য প্রধান হুমকি। (মুত্রমনাদের কারসাজি নিয়ে অন্য একদিন কিছু লেখার খেয়াল আছে)।
আপনার ধর্ম আপনি মানেন, কেউ আপনাকে চুলকাবে না। অন্যের অনুভুতি নিয়ে মজাক করা কোন ধরনের সভ্যতা? এভাবে মুক্তমনার চর্চা হয় না। যা হয় সেটাকে কেবল মুত্রমানায় সংজ্ঞায়িত করা যায়।
এবার আসুন মূল সংবাদে, #শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর, ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জনগনের রোষানলের শিকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে জনসম্মুখে কান ধরে মুচলেকা দেওয়ার পর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চাকুরীচ্যূত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
শুক্রবার ১৩ মে বিকেল সাড়ে ৪টায় বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যানন্দি এলাকায় পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এ নির্দেশ দেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৮ মে সকালে স্কুলে আসার পর দশম শ্রেনীর তিনজন শিক্ষার্থী স্কুলের ভেতরে একত্রে দাড়িয়ে কথা বল ছিলেন। এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাদের মধ্য থেকে দশম শ্রেনীর বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাতকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে সহপাঠীদের সাথে দাড়িয়ে কথা বলার অভিযোগে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারতে থাকে এবং শিক্ষার্থী রিফাতকে ইবলিশ আখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করতে থাকে। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বেদম প্রহারের এক পর্যায় শিক্ষার্থী রিফাত জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে এলাকা বাসীর মাঝে গত ৪ দিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এ দিকে শুক্রবার সকাল ১১টায় এলাকা কয়েক হাজার ধর্মভীরু নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে স্কুলের ভেতরে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিতরা শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দিয়ে তার শরীরের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে।
খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয় বন্দর থানা পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বন্দর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কালাম স্কুলের ভেতরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেন। এরমধ্যে স্কুলে এসে উপস্থিত হয় জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত(ইউএনও) মৌসুমী হাবিব, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম নুরুল আমিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, সহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং থানা পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ফাঁসি দাবি ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বহিস্কার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীকে শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে দুপুর আড়াইটায় বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে অবগত করেন। তখন সেলিম ওসমান মোবাইল ফোনে এলাকাবাসীকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহবান জানিয়ে তাদেরকে শান্ত থাকতে বলেন এবং তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী শান্ত হয়ে স্কুলের ভেতরে অবস্থান করে থাকেন।
পরে বিকেল ৪টায় পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হোন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনা জানতে চান। এসময় স্থানীয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর করা সহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়টি তুলে ধরেন। সেই সাথে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগ সাজশে স্কুলের ভেতরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তি দাবি করেন।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্থানীয় প্রশাসন ও অভিযুক্তের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে কান ধরে মুচলেকা দেন। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে তাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসা প্রদান করে তাকে স্কুলের আয়-ব্যয়ের অনিয়মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।
সেই সাথে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্কুল থেকে চাকুরীচ্যূত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে কমিটি থেকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিবকে নির্দেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি স্কুলের চাকুরীচ্যূত ও বহিস্কৃতদের কাছ থেকে স্কুলের আয় ব্যয়ের হিসাব বুঝে নেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিনকে নির্দেশ প্রদান করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৩২