বাংলা নামের নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসরত বাঙালি নামের একটি মাঝারি (জনসংখ্যার হিসেবে) আকারের অবহেলিত জাতিকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে শক্তিশালী ভুমিকা রাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনলেই যেহেতু শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়।
যেহেতু আমেরিকা তথা দুনিয়া জুড়ে কালো চামড়ার মানুষদেরকে মানুষ হিসেবে বাঁচার এবং সমান অধিকার ভোগ করার স্বপ্ন দেখানো তথা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টায় আমরণ লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় মার্টিন লুথার কিংয়ের নাম স্মরণ হলেই আমার শরীর শিহরিত হয়।
যেহেতু আঙ্কেল হো, চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলা, লেনিন, মার্ক্স, কামাল পাশাসহ অন্যান্য যারা জাতির স্বাধীনতা অর্জনে, মানুষের অধিকার আদায়ে, সামাজিক বৈষম্যপূর্ণ সংস্কৃতি বদলে দিতে মেধা, শরীর ও জীবন ব্যয় করেছেন, কিংবা সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল, আর্কিমিডিস, পিথাগোরাস, কনফুসিয়াস, ওমর খৈয়াম, ইবন খালদুন, ইবন সিনা, টলস্টয়, ডারউইন, কোপার্নিকাস, গ্রাহামবেল, লুই পাস্তুর, ফ্লেমিং, এডিসন, নিউটন, আইনস্টাইন, রাইট ব্রাদারস, শেক্সপিয়ার, জেমস ওয়াট, কিটস, শেলি, রবীন্দ্রনাথ, কেপলার, মেরি কুরি, দ্য ভিঞ্চি, নাইটেঙ্গেলসহ আরও যারা মানুষকে নিজের মেধা দ্বারা শিক্ষার আলো দিয়ে, জীবন দর্শন বুঝতে শিখিয়ে বা প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শারীরিক পরিশ্রম থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে দিয়ে আবার কেউ কেউ রোগের থেকে মুক্তির উপায় চোখের সামনে নিয়ে এসে অথবা সেবার উদাহরণ সৃষ্টি করে গিয়ে মানুষকে মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে এক এক ধাপ করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন বলে তাঁদের অবদানের কথা ভাবনায় এলেই আমার অন্তর বিনম্র হয় শ্রদ্ধায়।
সেহেতু মুহাম্মদ নামের একজন মানুষ (যিনি প্রায় সকল ইতিহাসবিদদের দ্বারা স্বীকৃত শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক এবং শ্রেষ্ঠ মানুষ) তৎকালীন সামাজিক অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও মনুষ্যত্ববিহীন মানব সমাজকে একই সুতায় গাথার চেষ্টা করেছেন বলে, সমগ্র মানবজাতিকে মানবতার (তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতায় তাঁর পথ-ই কি সবচেয়ে মানবতাবাদী ছিলো না?) ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য সম্পূর্ণ জীবন ব্যয় করেছেন বলে তাঁর নাম শুনলেই, তাঁর সামাজিক অবদান স্মরণ হলেই আমি আপ্লূত হবো, আমি শ্রদ্ধাবনত হবো এটাই স্বাভাবিক। এটাকেই আমি মুক্ত মন মনে করি।
একই সাথে আবার এতো শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তির যে সকল নীতি বর্তমানের সাথে, বর্তমানের মানবতার ধারণার সাথে বেমানান সেগুলোরও ওই মানুষটির প্রতি উপযুক্ত সম্মান রেখে সমালোচনা করতে পারাটাও মুক্ত মনের পরিচয় দেয় বলেই বুঝি।
ওরে পাগলা, মুক্তমনা হওয়া এতো সহজ নারে, সহজ না। যদিও নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে তৈরি করতে পারলে, নিজ সময়ের দাবী অনুযায়ী যার যা অবদান সেটা অকপটে এবং বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে নিতে পারলে মুক্তমনা হতে কিছুই লাগে না।
ধর্মকে গালি দিয়ে ধার্মিকদের অন্তরে আঘাত দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করা হয়, মুক্তমনা হওয়া হয় না। পাগলা, সমালোচনা আর গালি দেয়া এক না। ধর্ম আর ধার্মিকও কিন্তু এক না। মুক্তমনা হতে চাইলে একটা কাজ সবার আগে করো- নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিরপেক্ষ ও মানসিকতাকে সহনশীল করো। কথা দিচ্ছি, তখন আর দুনিয়ার কাউকে মানুষের বদলে শয়তান মনে হবে না তোমার। অবশ্যই হবে না।