এখন আমি অনেক বড়, হয়তো গাছের চুড়া ছোঁয়ার মতো নই কিন্তু গাছের চুড়াকে নিজের পায়ের কাছে নামানোর মতো। এতো বড় হওয়ার জন্য অনেক দীর্ঘ পথ আমাকে পাড়ি দিতে হয়েছে, অনেক ঘটনা, অনেক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছি- কোন ঘটনার অংশ হয়েছি আবার হাজারো ঘটনা নিজেই ঘটিয়েছি। আজ আমি আমার জীবনের এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ঘটনার থেকে বড় ঘটনা ঘটাবো। আজ আমি মুক্ত হবো, স্বাধীন হবো, একা হবো পুনরায় যুগলবন্দী হওয়ার জন্য। আজ আমি ভালোবাসা ছুড়ে ফেলে দেবো আমার প্রয়োজনে, ভালোবাসার প্রয়োজনে।
.....................আমার বউ, সেকেলে দেশীয় সংস্কৃতিমনা অসুন্দর একটা মেয়ে। ধমক দিলেও কাঁদে, খুশি হলেও কাঁদে! জানেনা, খুশি হলে অনেক বেশি হাসতে হয়, আনন্দদাতাকে ধন্যবাদ দিতে হয়- শুধু জল-মাখা চোখের পলকহীন দৃষ্টিতে কি ধন্যবাদ দেয়া হয়? হয় না, আমার অন্তত হয় না।
আমার বউয়ের গায়ের রঙ কালো! আমার বউ কালো কেন হবে? আমার বন্ধুদের সবার প্রেমিকারাই সুন্দরী, তাঁদের কারো কারো গায়ের রঙ কালো হলেও তাঁদের শরীর কত আকর্ষণীয়! আমার বউয়ের শরীর তেমন নয় কেন? লম্বা লম্বা চুল ধুয়ে কি আমি পানি খাবো?
আমার বউ আমাকে নাকি ভালোবাসে! গভীর রাতে আমি যখন আরও গভীর ঘুমে অচেতন, তখন সে আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে আমি নিজে দেখেছি! কেউ আমার মুখের উপরে উবু হয়ে তাকিয়ে থাকলে আমার ঘুম তো ভেঙে যাবেই, আর তখন অমন বিদঘুটে চেহারা দেখলে আমি ভয় পেলে কি সেটা আমার দোষ?
আমার বউ আমার মতো মেধাবী নয়, সে নিজের পড়া নিজে পারে না! আশ্চর্য হলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে নাকি নিজের পড়া নিজে করতে পারে না! আচ্ছা বুঝলাম পারে না, আর পারেই না যখন কারো কাছে ব্যক্তিগতভাবে পড়লেই হয়! তা না, তাকে পড়াতে হবে নাকি আমার! এতো সময় আমার কই? আবার আমি তার বিষয়ে পড়িনি আর পারিও না, তারপরও নিজের উপর জোর করে ভুলভাল দু’দিন পড়িয়েছিলাম আর তাতে নাকি তার উপকার হয়েছে!
সবসময় সে তার পরিবারের সবার সামনে আমাকে নিয়ে যাবে, আমার এতো সময় কোথায়? আমি কত ব্যস্ত থাকি! একবার তার এক বোনের বাসায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নাকি অনেকদিন আগেই কথা দিয়েছে, তাই আমাকে জোর করতে লাগলো যাওয়ার জন্য, কিন্তু এদিকে আমার প্রিয় বান্ধবী মিষ্টি চেহারার লক্ষ্মী মেয়ে তূর্ণার মন খারাপ! মেয়েটি আমাকে সকালে যেতে বলেছে, আমি আসবো কথা দিয়েছি। অথচ, বউ তখন বলছে বোনের বাসায় যাওয়ার জন্য। আরে বাবা, অমন একটা মেয়েকে আমি কথা দিয়েছি, সেই কথা ফেলি কীভাবে?
আমার বউ গোপনে সিগারেট খাচ্ছে, কী ভয়াবহ ব্যাপার! কাছে ঘেঁষলেই গন্ধ পাই, সবথেকে বড় কথা, আমি রাতে খাওয়ার জন্য এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে এলে সকালে দেখি প্যাকেট শেষ! অথচ আমি একদিন অ্যাশট্রেতে গুণে মাত্র সতেরোটা ফিল্টার পেয়েছি! একে তো আমার হিসেবের সিগারেট চুরি করছে, তার উপরে আবার মুখে সিগারেটের এমন বাজে দুর্গন্ধ নিয়ে পাশে শুয়ে থাকলে কতই না বিশ্রী লাগে! অন্তরঙ্গ মুহূর্তে তো আমার বমি চলে আসে!
আমি নিজেও এখনো পড়াশুনা করি, প্রত্যেকদিন আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেই হয়, ক্লাস থাকলেও যাই, না থাকলেও যাই। আমার কত বন্ধু-বান্ধবী। তাঁদের সবাইকে একটু করে হলেও আমার সময় দিতে হয়। অথচ, হঠাৎ কোনদিন দেখা যাবে আমার বউ সেখানে হাজির! আরে, আমার বন্ধুদের সামনে তোমার কী? তোমাকে আমি আরও ঝামেলা মুক্ত রাখার জন্য মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করলাম, সেখানে তোমার কত বন্ধু আছে, তাঁদের সাথে আড্ডা দাও না! আমার ক্যাম্পাসে কী? আবার কখনো দেখা যায় সে তার কলেজের সময়ের ছেলে বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলছে! চরিত্রের কতটুকু অধঃপতন হলে এভাবে করতে পারে? আমি কি কখনো গোপনে কারো সাথে কথা বলেছি? আমি হয়তো মেয়েদের সাথে মিশি, কিন্তু তাঁদের সাথে তো আমি গোপনে কথা বলি না, বউকে জানিয়েই কথা বলি আর তারা তো আমার বন্ধু, অন্য কিছু ভাবার অবকাশ কোথায়?........................
এভাবেই আমার মনের চিন্তা-ভাবনাগুলো হয়তো একটু অন্য ভাষায় ডায়েরীর পাতায় লুকিয়ে ছিলো, আজ হঠাৎ সেগুলো দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো তাই দেখলাম। প্রায় তিন বছর আগের লেখা পৃষ্ঠাগুলো একটু মলিন হয়েছে তবে লেখাগুলো যেন আরও বেশি জীবন্ত আর তাজা হয়েছে। এখন লেখাগুলোকে দেখলে আর কালো অক্ষর মনে হয় না, মনে হয় কালো কোন অতল গর্ত; যার মাঝে আছে পরাক্রমশালী ঘূর্ণি, যাতে পাক খেয়েছি আমি ধ্বংসের পথে। আজ আমি একা, প্রায় সম্পূর্ণ একা। মনে আছে সেদিনের ঘটনা যেদিন ও চলে গিয়েছিলো। সামান্য কিছু কথাও হয়েছিলো সেদিন-
- আমি তাহলে কী করবো বলো?
- তোমার যা ভালো মনে হয় করো কিন্তু আমি সুখে থাকতে চাই, বিরক্তির মধ্যেও হয়তো বাঁচা যায় কিন্তু ভয়াবহ অতিষ্ঠ হয়ে বাঁচা যায় না।
- আমি কি তোমাকে শুধুই অতিষ্ঠ করি?
- অবশ্যই করো। আমার ব্যক্তিগত বলতে কিছুই আর নেই। তুমি আমাকে আমার মতো কিছুই করতে দাও না। সব কিছুতেই নিজেকে আমার সাথে জড়াতে চাও, আমি এতে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি।
- আচ্ছা, আমি যা করি দুনিয়ার অন্য মেয়েরা কি তা করে না?
- জানি না।
- তুমি আমাকে যেভাবে চাও সেভাবে না পেলে তুমি সহ্য করতে পারো না, কিন্তু আমিও তো একটা মানুষ, নাকি? আমারও তো চাওয়া আছে। আমার চাওয়াটা তো নিজের ইচ্ছেমত চলাটা না, তোমাকে নিজের মনের মতো করে পাওয়া। এটা কী আমার অন্যায়?
- আমি তোমার মনের মতো হতে পারবো না। এটা অসম্ভব। আমার ব্যক্তিত্বের জন্যও সেটা মানানসই না।
- তুমি যদি আমার জন্য তোমাকে পাল্টাতে না পারো, তাহলে আমার কাছে সেটা আশা করো কেন?
- আচ্ছা, আর করবো না, তুমি তোমার মতো থাকতে পারো।
- ঠিক আছে, আজ তো অনেক কথাই খোলাখুলি বললাম, কিন্তু তাতে কোন ফল হলো না- যদিও জানতাম হবে না, তাই আজ আমি চলে যেতে চাই। তোমার শেষবারের মতামত জানতে চাই।
- তোমার যা ইচ্ছা করো, আমি ভালো থাকতে চাই।
- আমাকে কিন্তু তুমি ভালোবেসেই......
- কী, প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম বলে এখন সেই দোহাই দিয়ে জিততে চাও? আমি ক্ষমা চাইলেও হবে না?
- তখন কি আমি ছিলাম না? তখন কি আমি অন্য কেউ ছিলাম?
- না, তুমি-ই ছিলা, তবে তুমি আবেগ দেখিয়ে আমাকে ফাঁদে ফেলেছ!
এসব আলোচনার পরে ও আমার সামনে আরও কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিলো, আমার মনে আছে শেষের দিকে ওর চোখ থেকে পানি ঝরছিলো, খুব বিশ্রী একটা দৃশ্য! কালো একটা মেয়ে, আমার মনকে গলানোর জন্য বিশ্রীভাবে কাঁদছে, এই দৃশ্যটাকে আমি সেদিন শুধু ঘৃণাই করেছিলাম। আর ওর প্রতি আমার মনে সেই ছিলো শেষবারের মতো ঘৃণার সৃষ্টি। ও চলে গিয়েছিলো নিজেকে নিয়ে সাথে আমার নিজের অনেক কিছু নিয়ে- যা আমি বুঝতেই পারিনি।
এরপর ও আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি, শুধু বিচ্ছেদের কাগজটা আমি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, যদিও সেটার ফিরতি কপি আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি কোনদিন। এরপরে মনে হচ্ছিলো আমি হাওয়ায় ভাসছি- কোন ঝামেলা নেই, বিরক্তি নেই। হয়তো অভ্যাসে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিলো, কিন্তু আমি ভালো ছিলাম, অনেক ভালো। নিজের বন্ধুদের সাথে সম্পর্কটা আবারও চাঙ্গা হলো, তূর্ণা আর আমি বন্ধু থেকে হয়ে গিয়েছিলাম সবথেকে কাছের বন্ধু।
যোগ্যতা ছিলো আমার তূর্ণাকে নিয়ে ঘর করার, সফল ছিলাম আমি তূর্ণার মনের কথাগুলো বুঝতে পারায়, শেষে একদিন ভালোবাসার কথা জানিয়ে ওকে বন্ধু থেকে বঁধু হওয়াতেও রাজী করিয়ে ফেলেছিলাম। এতো সুন্দর একটা মেয়েকে জীবনে পাবো বলে অতীতের অনেক কিছুই ভুলে গিয়ে সবকিছু শুরু করেছিলাম নিজের মতো। আসলে নিজের মতো নয়; তূর্ণার মতো।
একমাস পরে আমি আর তূর্ণা বিয়ে করবো, মনের সবগুলো স্তরেই আনন্দ খেলা করছে শুধু সেই আনন্দের মাঝে কোথায় যেন একটু খচখচানি রয়ে গেছে। এর-ই মাঝে আমাদের ক্যাম্পাস জীবন শেষ হয়ে গেছে, এখন তাই একা ঘরে শুধুই দিন গুনি তূর্ণাকে কাছে পাওয়ার। হঠাৎ একদিন নিজের কম্পিউটারে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে পুরাতন কিছু ছবি দেখে মনোযোগ দেই, গভীর রাত, ঘরে একা, সকালে কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই, তাই সময়টা তখন শুধুই আমার। পুরাতন ছবিগুলোর মাঝে বউটার চেহারা দেখতে পাই। কালো একটা মেয়ে, আমার পাশে দাঁড়ানো কিন্তু চোখগুলো অনেক উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত। কী মনে হওয়ায় তূর্ণার সাথে আমার যুগল ছবি দেখতে যাই, সেখানেও দুজন মানুষ, নারী মূর্তিটি হাস্যজ্জল তবে স্বাভাবিক আর পুরুষ মূর্তিটি কেমন নতজানু! দাঁড়ানো কিংবা তাকানোতে হয়তো তফাত নেই তবে কর্তৃত্ব নেই, অহংবোধ নেই, আছে অনেক বেশি নমনীয়তা।
সাথে সাথে বসলাম হিসেব মেলাতে আমার অতীত আর আমার বর্তমানের সাথে!
আমার টেবিলে এখন আর সিগারেটের অ্যাশট্রে থাকে না, কারণ তূর্ণা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। আমি তাই সিগারেট ছেড়েছি।
আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে এখন আর অচেনা মেয়েরা নেই, পরিচিত মেয়ে কিংবা বান্ধবীদের সাথেও লুকিয়ে করা চ্যাট হিস্ট্রি শুন্য। আমার পাসওয়ার্ড এখন প্রায়-ই পরিবর্তিত হয়- তবে আমার হাতে নয়; তূর্ণার হাতে।
এখন আর আমি ক্যাম্পাসে থাকাকালীন বউ সেখানে যায় না; বরং তূর্ণা ক্যাম্পাসে এসে আমাকে ফোন দেয়, ওর বন্ধুদের সাথে ও আড্ডা দেয় আর আমি হাসিমুখে পাশে বসে থাকি।
এখন আর আমি অহংবোধে বলবান না; বরঞ্চ দমিত হয়ে আছি কারো কর্তৃত্বের কাছে। আমি আর কিছু ঘটাই না, শুধুই দর্শক হিসেবে দেখি!
মধ্যরাতে এখন আর আমার মুখের দিকে কেউ তাকিয়ে থাকে না, কিংবা সামান্য কষ্টে এখন আর কেউ আমার সামনেই কাঁদে না কিংবা আমি মেয়ে বন্ধুদের সাথে মজা করার সময় শুধুই হাসিমুখে নির্মল আনন্দ উপভোগের জন্য এখন আর কেউ আমার চেয়ারের পিছনে দাড়িয়ে স্ক্রিনের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে থেকে আমার ধমক সহ্য করে না। তবে আমি এখন মধ্যরাতে মনের আবেগে কাউকে ফোন দেই আর সে বলে “কী অবস্থা? মেজাজ খারাপ না করলে কি তোমার চলে না?” সাথে সাথে ফোনটাও হয় বন্ধ। এখন আমার সারাদিন আড্ডা দেয়ার মানুষ নেই, কিন্তু তূর্ণার আছে, আর আমি ওর জীবনের শুধুই একটা অংশ।
এখন আর কোন কালো মেয়ের মনে চরম অবহেলার দুঃখ দেই বলে তার চোখের পানি নিজের পায়ের উপরে পড়ে না- যা দেখে আমি বিরক্ত হবো; এখন আলাদা কেউ পরীক্ষায় বিশে সাড়ে আঠারো পেয়ে লোক দেখানো মন খারাপ করলে আমি সোনাবাবু বলে আহ্লাদ করি- যার হলদে চামড়ার গালে সামান্য এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি দেখলেও আমি অস্থির হই তার কান্নার কারণ খোঁজার জন্য। ভাবি- হয়তো আমি নিজের অজান্তেই দুঃখ দিয়ে ফেলেছি।
নিজের আত্মিয়ের কাছে এখন আমাকে কেউ পরিচয় করিয়ে দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না, উল্টো আতঙ্কিত হয় আমার উপস্থিতিতে। আমার বাবা-মায়ের জীর্ণ পোশাকি ছবি দেখে কেউ এখন আর মমতা নিয়ে বলে না এই দিন আমি মুছে দেবো, বরং এখন আমি বাবা-মায়ের সেই ছবি প্রকাশ করি না লজ্জায়।
আরও অনেক কিছুই আমার চোখের সামনে ধরা দেয়, যাতে শুধু এটাই প্রমাণিত হয় যে, আমি আর আমি নেই, আমি এখন অন্য কারো চাহিদার প্রকাশ। অথচ একসময় আমি ছিলাম শুধুই আমার মতো। আমাকে কেউ খুব বেশি বদলে যেতে বলেনি, শুধু তাকে আমার পাশে হয়তো আমার মতো করেই রাখবো এটাই ছিল তার আকুতি! আজ আমি তার মনের মতো হয়েছি তবে তার জন্য নয়; এক সুন্দর রমনীর জন্য। যার কাছে আজ আমি জীবনের অংশ তবে জীবন নই। যার ইচ্ছা আমাতে প্রতিফলিত হয়, যার ছোঁয়ায় আমি বিচলিত হই হয়তো সেও হয় তবে আবেগ বিবর্জিত। আজ আমি-ই করি আদিখ্যেতা আর সে করে করনীয়- আমি যেখানে বিলীন হয়েই তৃপ্ত হয়েছি।
যখন বুঝলাম নিজেকে আমি হারিয়ে ফেলেছি, নিজের কাছেই তখন প্রশ্ন করি- তাহলে যে আমার মনের মতো হতে চেয়েছিলো, তার মাঝে কেন হারালাম না? সে তো আমার স্বকীয়তায় কোন ব্যাঘাত ঘটায়নি; বরং যেমন ছিলাম তার সাথেই মানিয়ে নিতে চেয়েছিলো! বাড়তি হিসেবে শুধু একটু বাড়তি ভালোবাসাই আমাকে দিতে চেয়েছিলো! হয়তো অতীতে আমি অনেকের মাঝে ডুবে ছিলাম বলে আবেগের ফোয়ারায় ভিন্ন রঙের সামান্য আবেগ ধুয়ে যেত প্রতিনিয়ত, অথচ আজ একলা কাটানো সময়ে সামান্য আবেগ আমার কাছে কত দামী, কত স্নিগ্ধ। অর্থাৎ, দিন শেষে সবাই একা আর আবেগ-ই হলো সেই একাকীত্বের রসদ! নিজের আবেগ এতোটা বুঝলাম কিন্তু তারটা কেন বুঝলাম না?
আছে, তার উত্তর ও আছে! জুড়ে দেয়া কিছু হাড়ের উপরে দ্রুত পচনশীল সামান্য মাংশের সমষ্টির আকৃতির আর সেই মাংশ ঢেকে রাখা সাধারণ চামড়ার রঙের পার্থক্য! মানুষ যার কারণে মানুষ হলো সেই অনুভূতি আর আবেগ সাথে মানবিকতা এখানে বর্জিত হয়েছে। চোখের আকর্ষণের কাছে সব পরাজিত হয়েছে। ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা মানুষ; ফুল নই। সৌন্দর্য দিয়ে ফুল নির্বাচিত হতে পারে, কিন্তু মানুষ যদি ফুলের মতো শুধুই দর্শনীয় হতো, তাহলে আজও মানুষ জঙ্গলে গরুর সাথে ঘাস খেতো। জীবন আজ এতদূর আসতো না।
তূর্ণা, ক্ষমা করে দিয়ো! এক মাস পরে বিয়েটা আমি আর করছি না। যেখানে আমি থাকবো না, সেখানে আমি থাকতে চাই না। বউয়ের কাছেই যাবো যদিও জানি না ক্ষমা পাবো কিনা। তবুও যাবো, নিজের স্বত্বাকে বিলীন করে দেবো ওর কাছে, যদিও জানি তাতে আমি বিলীন হবো না; বরং রক্ষা পাবো। বিয়ে যাকে করেছিলাম শুধুই নিজের অহমিকার তৃপ্তির জন্য, ত্যাগ করেছিলাম যাকে নিজের পৈশাচিক মনোভাবের কারণে, তার কাছে আমি আজ যাবো ভালোবাসা পুনরায় পাওয়ার আশায়। যদি তাকে ফেরত পাই, সেটা হবে আমার সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া আর যদি না পাই তবে কৃতকর্মের সামান্য শাস্তি। তবুও আমি যাবো। হয়তো আমাকে এবার ভিখারী হতে হবে উপহার পেয়ে খুইয়ে ফেলা নিজের সম্পদের সামান্য অংশ ফেরত পাওয়ার জন্য, তবুও আমি আজ ভিখারী হতে চাই। ভালোবাসায় ভিখারী হওয়ায় সুখ আছে, বৃত্তিতে যার পাওয়ার আশা আর প্রাপ্তিতে যার পূর্ণতা।
আমি আসছি বউ, তোমার কালো রঙের শরীরে লুকানো চোখ ধাঁধানো সোনালী রঙের ভালোবাসার তৈরি মনের ঘরে আবার প্রবেশের অনুমতি পেতে। এবার তুমি সেই ঘরে আমায় বন্দী করে রেখো জনমের তরে, বিলুপ্ত করে দিয়ো আমায় তোমাতে তবু একটিবার ক্ষমা করে ডাকো পাশে, কথা দিচ্ছি, তোমার চোখের আর একফোঁটা পানি আমি মাটিতে ঝরতে দেবো না। তবে তোমাকে আমি কাঁদাবো, হাজারবার কাঁদাবো শুধুই সুখের কান্না হবে সেগুলি। অনুগ্রহ করো আর শুধু একটিবার জলভরা চোখে জিজ্ঞেস করো- আমি কি সত্যি-ই তোমার যোগ্য? আমি তোমাকে তখন জানাতে চাই- আমি তোমার যোগ্য নই, তবুও নিজের মতো করে কোনভাবে চালিয়ে নাও না! তোমার-ই তো অংশ আমি, ফেলে দিলে যাবো কই?