..চিকেন রোস্ট মুখের সামনে ঝুলিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে হাত ফসকে স্মার্ট ফোনখানা টুপ করে গরুর মাংসের বাটিতে পড়ে গেল বর পক্ষের এক স্মার্ট বয়ের।
পাশে বসে থাকা গ্রাম থেকে আসা কণের বড় জ্যাঠার কাপড় ছিটকে আসা মাংসের ঝোলে মাখামাখি।
তিনি মৃদু স্বরে বললেন, "আহহা! বাবাজি আপনার এত সুন্দর মোবাইলটা মাংসের বাটিতে পইড়া গেল! অহন কী করবেন?"
স্মার্ট বয়ের হাসি মুখ মলিন হয়ে গেল। মাংসের বাটি হতে সাবধানে দুই আঙুলে তার যন্ত্রটি তুলে নিলো বেচারা।
সমস্ত শরীরে ঝোল লেপ্টে স্মার্ট ফোন একেবারে আনস্মার্ট হয়ে গেছে!
জ্যাঠা দু:খী গলায় বললেন, "যান, এইবার বেসিন থেইকা ধুইয়া আনেন গা। তার পর টিস্যু দিয়া ডলা দেন।"
.... খাবার শেষে গ্রাম থেকে আসা বড় জ্যাঠা কণেকে খুঁজতে লাগলেন। খুঁজতে খুঁজতে দেখেন কণে বাঁকা হয়ে এক পিলারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় আছে।
জ্যাঠা বিরবির করে বকতে লাগলেন, "আহা রে! কি নরম দিলের মাইয়া আমগো! বাপ-মা ছাইড়া যাওনের দু:খ সইতে না পাইরা মন-মরা হইয়া পিলারের লগে ঠেস দিয়া খাড়ায় আছে। আহ্ হা রে...কি মাইয়া আমগো..."
জ্যাঠা কাছে গিয়ে দরদমাখা কণ্ঠে বললেন, "মাগো ও মা, এমনে খাড়ায় থাইকো না, সব মাইয়া গো-ই একদিন স্বামীর ঘরে যাইতে হয়। চলো আর এমনে খাড়ায় থাইকো না মা...।"
জ্যাঠা কণের হাত ধরে টানতে যাবেন, এমন সময় ফটোগ্রাফার বলে উঠলেন, "উহ্ হচ্ছে না, আরেকটু ডানে..হুম আরেকটু...আহ্ হা বেশি হেলে পড়েছেন.., আরেকটু বামে...হুম এইবার কোমড়টা খানিক বাঁকা করুন তো দেখি..ডান হাতটা কোমড়ের উপর রাখুন... হ্যা এইবার থুতনিটা একটু উপরে তুলুন...আহ বেশি হয়ে গেল, আরেকটু নিচে...আহ নিচের ঠোঁটের লিপস্টিকটা হালকা হালকা লাগছে... ওকে নো প্রোবলেম এইভাবেই একটা তুলে দিচ্ছি... রেডি..."
জ্যাঠা দেখলেন, তিনি পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, অথচ মেয়ে দেখেও না দেখার ভান করে থাকলো। একবারও ফিরে তাকালো না তার দিকে...। ফ্যাল ফ্যাল করে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে পেছনের দিকে হাঁটতে লাগলেন বড় জ্যাঠা...।
আজকাল স্মার্ট ফোন, ফটো গ্রাফারদের রাজত্ব আর কণেদের ফটো শ্যুট দেখে বিয়ে বাড়িকে আর বিয়ে বাড়ি মনে হয় না সত্যি। মনে হয় যেন কোলাহলময় এক "শ্যুটিং স্পট..."
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪২