জোয়ার শেষে ভাটার টান শুরু হলো। তীর ছেড়ে পানি ক্রমশ দূরে সরে যেতে লাগলো। বালুর খাঁজে জমে থাকা জলের উপর সূর্যের আলো পড়ে চিক চিক করছে।
বেশ মনোরম দৃশ্য।
জুতা জোড়া হাতে নিয়ে জীবনে প্রথম বারের মতো নেমে পড়লাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। পায়ের গভীর ছাপ ফেলে ফেলে হাঁটতে লাগলাম। খানিক জোর দিয়ে যতটুকু সম্ভব নরম-শীতল বালির মাঝে ডুবিয়ে দিচিছলাম পায়ের পাতা।
"স্যার ঘোড়ায় উঠবেন?"
"ঘোড়া? ঘোড়া কই, এটা দেহি গাঁধা। দেখতে একটু বড় এই যা। ঘোড়া না বলে, বলো বড় গাাঁধায় উঠবেন?"
"জ্বি। আচ্ছা।"
"গুড।"
"স্যার বড় গাঁধায় উঠবেন?"
"নাহ বড় গাঁধার পেছনে পায়খানা লেগে আছে, কাপড়-চোপড় মাখায়া যাবার সম্ভাবনা আছে।"
"মিয়া আফনে একটা ফাজিল। ঘোড়ারে কন গাদা। আফনে গাদা। আফনার চইদ্দগুষ্ঠী গাদা।"
আমি হাসলাম। আসলে ঘোড়ার পিঠে চড়ার চেয়ে পায়ে হাঁটতেই বেশ লাগছিল।
সূর্যের আলো একটু একটু করে ম্লান হতে লাগলো। আমি হেঁটে চলছি আপন মনে।
"স্যার লাগবো?"
"কি?"
"বতল-টতল লাগবো?"
"কিসের বোতল?"
"মাল। একদম খাঁটি বার্মিজ মাল।"
"নাহ লাগবে না। তুমি বরং পারলে একটা খালি বোতল দাও।"
"খালি বতল?"
"হুম। আমার ছোট বাথরুম পেয়েছে। কিন্তু এত সুন্দর একটা জায়গায় কোথাও ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না।"
"খালি বতল নাই। তয় একটা বুদ্ধি দিবার পারি। একটা কচি ডাব কিনেন। ঢক ঢক কইরা আগে পানিডা খাইবেন- তারপর অর ভিতরে ছোড বাথরুম ছাইড়া দিবেন। ফাজিল জানি কোনহানকার......।"
হন হন করে বোতলঅলা চলে যেতেই বোরখা পড়া দুই মহিলা ভিক্ষুক সামনে এসে দাঁড়ালেন।
১ম জন: স্যার দশটা ট্যাহা দেন।
২য় জন: স্যার আমারেও দশটা ট্যাহা দেন।
"তোমাদের ডিমান্ড তো অনেক বেশি।"
"স্যার এইহানে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি।"
বুক পকেটে ভাংতি ছিল। দুজনার হাতে দুই টাকার দুইটা নোট দিয়ে আবার হাঁটতে লাগলাম।
কানে ভেসে আসলো-
১ম জন: কুঞ্জুস একটা কইত্তে আইছে।
২য় জন: আরে কুঞ্জুস না, কুঞ্জুস না। ফইন্নি, ফইন্নি....
সূর্যটা লাল রঙ ধারণ করেছে। আর কিছুক্ষণ পরই টুপ করে অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে।
আমি হাঁটছি।
"মামা ফুচকা খাইবেন?"
"নাহ।"
"ডাব খাইবেন?"
"নাহ।"
"বাদাম খাইবেন?"
"নাহ।"
"আচাড় খাইবেন?"
"নাহ।"
"কফি খাইবেন?"
"নাহ।"
"ঝাল লেবু দিয়া চানাচুর খাইবেন?"
"নাহ।"
"ডিম খাইবেন? সিদ্ধ ডিম? এক্কেবারে গরম।"
"নাহ। ঠান্ডা হইলে খাইতাম।"
"ফাইজলামি করেন?"
"কেন?"
"সবাই চায় গরম ডিম। আফনে চান ঠান্ডা?"
"যাও বিরক্ত কইরো না। এখন আমি সূর্য ডোবা দেখবো। আমাকে প্রাণভরে একটু দেখতে দাও..... তোমাদের পায়ে পড়ি, একটুি দেখতে দাও.....।"