somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদা জিয়ার কাছে মেজর আখতারুজ্জামানের খোলা চিঠি

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বিরোধী দলের সরকার বিরোধী কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাকে ফলপ্রসু করতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান।
‘গভীর রাতের রাজনীতি দয়া করে বন্ধ করুন’ শিরোনামে লেখা ৫ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এ চিঠিতে সরকারকে কৌশলে প্রতিহত করার নানা দিক তুলে ধরেছেন তিনি। সেই সঙ্গে, দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তন, চাটুকা শ্রেণীর লোকদের ব্যাপারে সর্তক হওয়াসহ অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি বিষয়েও দিয়েছেন নিজের সুচিন্তিত মতামত।

শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঠানো মেজর আখতারের সেই চিঠির হুবহু একটি কপি আমার হাতে কাছে রয়েছে। পাঠকদের জন্য চিঠিটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।

ঈদের আগে বিরোধী দল বিএনপি তরফে সরকার বিরোধী কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে রোববার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভা ডেকেছেন বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া।
স্থায়ী কমিটির এ সভার বিষয়ে মেজর আখতারুজ্জামান তার চিঠিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উদ্দেশে লিখেছেন-‘‘ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগাম হুমকি দিয়ে ঈদের ৬ দিন পরে রবিবার গভীর রাতে স্থায়ী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী নিয়ে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দিকে সারা জাতি যেখানে উদগ্রীব হয়ে আছে সেখানে দলের সভা রাতের গভীরে ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে জনগণ তা জানবে প্রায় ৩০-৩২ ঘন্টা পরে মঙ্গলবার সকালে পত্র পত্রিকার মাধ্যমে। রাত ১২টার পরে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় প্রকাশিত পত্র পত্রিকাবাহী গাড়ী ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে শুরু করবে। শেষ প্রকাশনাতেও কিছুটা জায়গা থাকলেও চতুর্থ শিরোনাম দেওয়ার মত সুযোগও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’’
দলের অনেকে পত্র-পত্রিকায় বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষাণার খবর প্রকাশকে ‘প্রয়োজন নাই’ মনে করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি’র অনেক মহারথীরা বলবেন পত্র পত্রিকায় খবরের প্রয়োজন নাই। তাদের খবর প্রচারের জন্য ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া রাত ১২ টার পরেও বিএনপির খবর প্রচার করবে যদি বা তখন সেই খবর শোনার জন্য গুটিকয়েক রাত জাগা মানুষ ছাড়া সবাই গভীর ঘুমে চলে যাবে তাতে কি বা আসে যাবে। তাছাড়া নেত্রীর মত তাদের অনেকের ধারণা নেত্রীর চারপাশে ঘুর ঘুর করা রাত জাগা চাটুকারদের মত সংবাদ মাধ্যমের লোকেরাও “জি ম্যাডাম” বলে তার খবর বিশাল শিরোনাম দিয়ে ছেপে দিবে!’’

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সমালোচনায় তিনি বলেন, “বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির কতিপয় বহুরূপী নেতা, নেত্রীর উপদেষ্টা, সহ সভাপতি, সাবেক আমলা পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তা, গুরুত্বহীন সাবেক রাষ্ট্রদূত, ব্যক্তিগত স্টাফ, আত্মীয় ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের মার্কা মারা নেতারা তাদের কায়েমী স্বার্থ, হীনমন্যতা, দুর্নীতিপরায়ণ মনস্ক, অযোগ্যতা, অদক্ষতা, স্থুল ও চাটুকারীতার মন মানসিকতা সম্পূর্ণ ও সর্বোপরি দলে তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বেগম খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ঘিরে রেখে ক্রমান্বয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে অত্যন্ত সু-চতুরতার সঙ্গে সরকারের উদ্দেশ্য হাসিল করে যাচ্ছে।”

চিঠিতে তিনি আরো বলেন, ‘‘বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতা কর্মীদের থেকে সারাদিন বিচ্ছিন্ন থেকে রাতে অফিস খোলার পরেও ঐসকল কায়েমী স্বার্থবাদীদের নিয়ে কাগুজে কর্মসূচী প্রণয়নের ব্যস্ত হয়ে থাকেন তখন সেখানেও জনগণ প্রবেশ করার সুযোগ পায় না। ঐ সকল চাটুকার ও কতিপয় স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্তের পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ সরকার ৩২ ঘন্টারও বেশী সময় পায়।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে গুরুত্ব হারাবে আশঙ্কা করে মেজর আখতারুজ্জামান বলেন, “রবিবার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছার পূর্বেই সোমবার সকাল ১১টায় সরকারের কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মিডিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়বে। সোমবার দুপুর ১২টার পর থেকে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসাবে প্রচারিত হবে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তাছাড়া সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই শিরোনাম হওয়ার মত কিছু মুখরোচক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবে যাতে বিএনপির খবর গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। তার উপরে ঐদিন মতিয়া-সুরঞ্জিত-ওবায়দুল কাদের-কামরুল-নানক-হানিফদের বক্তৃতা বিবৃতি তো থাকবেই যা মিডিয়ার সিংহভাগ খবর ও গুরুত্ব দখল করে নেবে। মাঠে মারা যাবে বিএনপির সকল কর্মসূচী তথা আন্দোলনের খবর।”
যে আন্দোলন কর্মসূচি মিডিয়াতে শিরোনাম হিসাবে প্রচারিত বা প্রকাশিত হবে না তা জনগনের দৃষ্টি কাড়বে না উল্লেখ করে সাবেক এ সাংসদ বলেন, “আন্দোলন বা কর্মসূচী সফল করতে হলে অবশ্যই তা প্রথমে মিডিয়াতে খবরের শিরোনাম হতে হবে। তাহলেই জনগণ সেই আন্দোলন ও কর্মসূচীকে লুফে নিবে। জনগণের অবচেতন সমর্থন, সহানুভূতি ও আকর্ষণ স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ শিরোনামের দিকে অনেক বেশি আকর্ষিত থাকে। তাই বলা হয় আন্দোলনের জন্য লাশের প্রয়োজন। লাশ শিরোনাম হয়- শিরোনাম আন্দোলনের জন্ম দেয়। কিন্তু অত্যন্ত উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পিত লক্ষ্যে নেত্রীর চারপাশে ঘিরে থাকা চাটুকারেরা বিএনপির আন্দোলন ও কর্মসূচীকে শিরোনাম হতে দিবে না। তাদের ভবিষ্যত স্বার্থেই বিএনপিকে আন্দোলন আন্দোলন খেলাইয়া নির্বাচনের দোরগড়ায় নিয়ে গিয়ে নির্বাচন বয়কট অথবা নির্বাচনে চরম পরাজয়ের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে চূড়ান্তভাবে মাইনাস করবে। ইসলামিক চেতনায় উজ্জীবিত জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে ভারতপন্থি তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির স্থায়ী শিকড় গাড়া এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বেগম খালেদা জিয়ার চারপাশে ঘিরে থাকা চাটুকারেরা সেই যড়যন্ত্রকে বাস্তবায়িত করার হীন অপচেষ্টায় নিজের অজান্তে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সুদূর প্রসারী দৃষ্টির অভাবে লিপ্ত হয়েছে। আমার এই কথার প্রমাণ পেতে হলে অনেক দেরী হয়ে যাবে যার ফলে তখন আর কিছু করার থাকবে না। যেমন অতীতেও আপনার ছিল না।”

সুদীর্ঘ এই চিঠিতে দলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক কাঠামোকে সুদৃঢ় করতে ১১টি সুচিন্তিত মতামতও দিয়েছেন মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান। এর মধ্যে রয়েছে, রাতের দলের গুরুত্বপূর্ণ সভা করার অভ্যাস পরিবর্তন করা। সরকারকে কোনঠাসা করতে সময়োপযোগী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা। এ বছরের মধ্যেই জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে পুনঃগঠিত করা। এছাড়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে তৃণমূল থেকে মূল দলসহ সব অঙ্গ সংগঠনের সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা। বয়স্কদের বাদ দিয়ে ছাত্রদলের নেতৃত্বে তরুনদের নিয়ে আসা। দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনা। একই সঙ্গে, ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের পথ পরিহার করে সংসদে গিয়ে সুস্থ্য রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তরুণ সমাজকে উদ্ভত করার পরামর্শ দেন তিনি।
অন্যথায় ভবিষ্যতে সাবেক নেতার মত খালেদা জিয়াকেও বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে হয়তো বিদায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(প্রতিবেদনটি ঢাকা টাইমসটোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×